সংক্ষিপ্ত

সন্ন্যাসিনী অভিযোগ করেছিলেন, বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কাল ২ বছরে ১৩ বার ধর্ষণ করেছেন তাঁকে। যে সন্ন্যাসিনী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি একটি কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়র।

কেরালায় সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের (Kerala Nun Rape Case) ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কাল (Franco Mulakkal) চল্লিশোর্ধ্ব ওই সন্ন্যাসিনীকে (Nun) মোট ১৩ বার ধর্ষণ (Rape) করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। কেরালার সিরীয়-মালাবার চার্চের বিশপ ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে কেরালা পুলিশ (Kerala Police)। আর অভিযোগ সামনে আসার পরই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অনেকেই।  

সন্ন্যাসিনী অভিযোগ করেছিলেন, বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কাল ২ বছরে ১৩ বার ধর্ষণ করেছেন তাঁকে। যে সন্ন্যাসিনী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি একটি কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়র। যদিও সেই সময় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন বিশপ। তাঁর দাবি ছিল, অভিযোগকারিণী তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন। আগও বহু মানুষকে তিনি ধর্ষণকাণ্ডে ফাঁসিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর পাল্টা সন্ন্যাসিনীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিশপ।  

কী অভিযোগ ছিল সন্ন্যাসিনীর? 
নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনী জানিয়েছিলেন ২০১৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ওই বিশপ। তারপর তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। ২ বছরে ১৩ বার এভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁকে। ২০১৭ সালেই এই বিষয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু, কোনও পদক্ষেপ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। সন্ন্যাসিনী বলেছিলেন, "চার্চ কর্তৃপক্ষ বিচার না করলে আমি পোপের দ্বারস্থ হব।" 

এরপর অভিযোগকারিণী সন্ন্যাসিনীর ভাই ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই অভিযোগ করেছিলেন, অভিযুক্ত বিশপ নিজের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ওই সন্ন্যাসিনীকে পাঁচ কোটি টাকার ঘুষও দিতে চেয়েছিলেন। এদিকে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরেই গ্রেফতার করা হচ্ছিল না বিশপকে। তারপর বিশপকে গ্রেফতারের দাবিতে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন সন্ন্যাসিনীরা। টানা ১৪ দিন ধরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। 

আরও পড়ুন- '‌যীশুকে ধন্যবাদ', ধর্ষণ মামলায় বেকসুর খালাসের পর চোখে জল নিয়ে বললেন বিশপ

বিশপের গ্রেফতার
চাপে পড়ে সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলায় পঞ্জাবের জলন্ধরের রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিসের বিশপ ফ্র্যাঙ্কো মুলাক্কালকে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে কোচির অপরাধ দমন শাখা জেরা করছিল। প্রতিদিন সাত ঘণ্টা করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১টার সময় জেরা করার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৮-র ২৪ সেপ্টেম্বর জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন বিশপ। কিন্তু, তাঁর সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। 

এরপর ১৫ অক্টোবর কেরালা হাইকোর্ট ফ্র্যাঙ্কের জামিন মঞ্জুর করে। তবে শর্তসাপেক্ষে দু'সপ্তাহে একবার তদন্তকারী অফিসারের কাছে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এমনকী, দেশ না ছাড়ার কথাও বলা হয়েছিল।

এই মামলার প্রধান সাক্ষীর মৃত্যু
২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর কেরালার সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলায় অন্যতম প্রধান সাক্ষী ফাদার কুরিয়াকোজ কাত্তুতহারার মৃতদেহ পাওয়া যায় জলন্ধরের দাসুয়ার সেন্ট মেরি চার্চ থেকে। তাঁর পরিবার জানিয়েছিল এই মৃত্যু কখনও স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। 

আরও পড়ুন- কেরালায় সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ মামলায় বেকসুর খালাস বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কাল

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ২০০০ পাতার চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী অফিসার। 

একাধিকবার জামিন খারিজ 

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কোনও বিচার ছাড়াও মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য আবেদন করেন ফ্রাঙ্কো। ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ১৬ মার্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক। এরপর নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কেরালা হাইকোর্টে যান ফ্রাঙ্কো। যদিও ৭ জুলাই সেই আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। 

এদিকে কোনওভাবেই জামিন পাচ্ছিলেন না বিশপ। শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ২৫ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। কিন্তু, সেখানেও তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এরপর কোট্টায়ামের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে ৭ অগাস্ট। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় শুনানি। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি শেষ হয় শুনানি। আর দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর অবশেষে আজ রায় ঘোষণা করে আদালত। তারপরই বেকসুর খালাস করা হয় বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলাক্কালকে।