সংক্ষিপ্ত

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মতই পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। এই মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিশানা করল জঙ্গিরা। আহত দুই শ্রমিক হাসপাতালে।

শনিবার আবারও সন্ত্রাসবাদী হামলা জম্মু ও কাশ্মীরে। অনন্তনাগের সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে আহত দুই পরিযায়ী শ্রমিক। গত ১০ দিনের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অভিবাসী শ্রমিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাল জঙ্গিরা। এই ঘটনায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মত এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যেও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, জঙ্গিরা অনন্তনগের রাখা-মোমিন এলাকায় দুই শ্রমিককে গুলি করে জঙ্গিরা। দুজনেই আহত হয়েছে। আহত দুই জন চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। দুজনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক।

পুলিশ জানিয়েছে হামলাকারীদের খুঁজতে শুরু হয়েছে তল্লাশি। চলছে চিরুনি তল্লাশি। এই মাসের শুরুতেই অনন্তনাগ জেলাতেই দুই পরিযায়ী শ্রমিককে লক্ষ্য করে হামলা করেছিল জঙ্গিরা। তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা বান্ডিয়ালগাম এলাকার একটি বেসরকারি স্কুলে কাজ করত। একজন বিহারের বাসিন্দা। অন্যজনের বাড়ি নেপালে।

গতমাসে উত্তর প্রদেশের দুই শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর কাশ্মীরে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। যার কারণে সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। আগে শফিয়ান জেলাতেও রাতর সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছিল কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। জঙ্গিদের দাবি কাশ্মীরে শুধুমাত্রা কাশ্মীরা থাকবে। বাইরের কাউকেই থাকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু এই অন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করেই রুজির টানে অনেকেই কাশ্মীরে যাচ্ছে। যেখানে খেটে রোজগারও করছে।

পরিযায়ী শ্রমিকদের মত জঙ্গিদের অপর টার্গেট কাশ্মীরের মূল অধিবাসী কাশ্মীরি পণ্ডিত। কিন্তু ক্রমাগত জঙ্গি হানায় বর্তমানে একের পর এক কাশ্মীরি পণ্ডিত ভূসর্গ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ডলি কুমারী,শোপিয়ান জেলার চৌধুরীগুন্ড গ্রামের শেষ কাশ্মীরি পণ্ডিত। তিনিও এবার সন্ত্রাসকবলিত গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন জম্মুতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি গ্রাম ছাড়েন। আপাতত তাঁর ঠিকানা জম্মু। বর্তমানে উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বেছে বেছে টার্গেট করছে সন্ত্রাসবাদীরা। কিন্তু সেইসব উপেক্ষা করেই এতদিন এই গ্রামে সাতটি কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবার বাস করতে। তবে আর নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতে নারাজ তারা। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের সাতটি পরিবার আগেই জম্মুতে চলে গিয়েছে। এবার শেষ কাশ্মীরি পণ্ডিত হিসেবে গ্রাম ছাড়লেন ডলি।

 

ডলি জানিয়েছেন , 'এখনও এখানে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। আমি আর কী করতে পারি?' কাশ্মীরি পণ্ডিতরা যখন দলে দলে গ্রাম ছাড়ছেন তখনও নিজের ভিটেমাটি, পৈত্রিক সম্পত্তি আঁকড়ে দিন কাটাচ্ছিলেন ডলি। কিন্তু আর তিনিও সন্ত্রাসের গ্রামে থাকতে পারলেন না। ডলি জানিয়েছেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমি আবারও গ্রামে ফিরে আসব। এটা আবার বাড়ি। কে আর তার বাড়ি ছেড়ে যেতে চায়। সকলেই নিজের বাড়ি ভালবাসে। আমি দুঃখের সঙ্গেই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছি।'

গত ১৫ অক্টোবর কাশ্মীরি পণ্ডিত পুরাণ কৃষাণ বাটকে চৌধুরীগুন্ড গ্রামে তার বাড়ির বাইরে হত্যা করা হয়। তার দুই মাস আগে শোপিয়ানের চোটিগাম গ্রামের একটি আপেল বাগানে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে এক কাশ্মীরি পণ্ডত নিহত হন। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই ডলি বলেন, 'আমাকে বলুন যে আপনার পাশে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে আপনি কী করতেন? ভয়কে সঙ্গে করেই এতদিন গ্রামে থেকে গিয়েছিলাম। কিন্তু আর এখানে থাকা সম্ভব নয়। '