সংক্ষিপ্ত
সম্প্রতি কর্ণাটকের বেশ কিছু জায়গায় মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে হিন্দু অনুষ্ঠানের সময় মন্দিরের বাইরে যে মেলা হবে সেখানে দোকান দিতে বা ব্যবসা করতে পারবেন না মুসলিমরা। আর এই নিষেধাজ্ঞা সমর্থন জানিয়েছে কর্ণাটক সরকারও।
কয়েক মাস ধরেই হিজাব নিয়ে কর্ণাটকে বিতর্ক চলছেই। আর এবার তার মধ্যেই নতুন করে শুরু হল বিতর্ক। মন্দির মেলাকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কর্ণাটকের উপকূল অঞ্চলের উৎসব মেলায় স্থানীয় মুসলিম ব্যবসায়ী যাঁরা বছরের পর বছর সেখানে স্টল দিতেন এবার সেই মেলায় তাঁদের স্টল দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতি কর্ণাটকের বেশ কিছু জায়গায় মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে হিন্দু অনুষ্ঠানের সময় মন্দিরের বাইরে যে মেলা হবে সেখানে দোকান দিতে বা ব্যবসা করতে পারবেন না মুসলিমরা। আর এই নিষেধাজ্ঞা সমর্থন জানিয়েছে কর্ণাটক সরকারও।
এদিকে এই ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে নিজের সরকারের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা তথা কর্ণাটক বিধান পরিষদের মনোনীত সদস্য এএইচ বিশ্বনাথ। জনতা দল (সেকুলার) থেকে বিজেপিতে আসা এই নেতার বক্তব্য, ‘রাজ্য ইস্যুটির বিরুদ্ধে কথা না বলে শুধুমাত্র ধর্মীয় রাজনীতিতে জড়াচ্ছে নিজেকে।’
আরও পড়ুন- রণবীর সিংয়ের সঙ্গে নয়া অবতারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, দেখে অবাক সবাই
রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলের মন্দিরগুলির বার্ষিক উৎসবগুলি, সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে যে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে প্রতিবছর সেখান থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ আদায় হয় মন্দির কমিটির। এর আগে প্রতিবছর এই মেলা উপলক্ষ্যে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান দিতেন। কিন্তু, হিজাব নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রেক্ষিপ্তে বনধ ডাকার পর থেকেই এই অঞ্চলের অনেক মন্দির মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশের উপর জারী করা নিষেধাজ্ঞা।
আরও পড়ুন- বাংলার বিধানসভায় বিধায়কদের হাতাহাতি, বুধবার সকালে বিস্তারিত জানবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মহালিঙ্গেশ্বর মন্দিরের বার্ষিক উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষে আমন্ত্রণ পত্রে আয়োজকরা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন যে শুধুমাত্র হিন্দুরাই এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত মেলা উপলক্ষে যে নিলামের আয়োজনে করা হয়েছে তাতেও অংশ নিতে পারবেন কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরাই। একইভাবে, উদুপি জেলার কাউপের হোসা মারিগুড়ি মন্দিরে চলতি সপ্তাহে আয়োজিত বার্ষিক মেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্টল বরাদ্দের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি উদুপি, দক্ষিণ কন্নড় এবং শিবমোগার বেশ কিছু মন্দিরের বাইরে পোস্টার পড়েছে যেখানে লেখা হিন্দু উৎসবের সময় মন্দিরের বাইরের মেলায় দোকান লাগাতে পারবেন না মুসলিমরা। এরপরই এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। তবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলে দেন যে যদি এই ‘নিষেধাজ্ঞা’ বৈধ হয়, তাহলে এই ক্ষেত্রে সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের বেঙ্গালুরু শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কুক্কেহাল্লি এপ্রসঙ্গে বলেছেন, "হিজাব নিয়ে আদালতের নির্দেশের পরে যেভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন দোকান পাট বন্ধ করে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন তাতে ধর্মীয় বিভাজনের স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, আর তারই প্রেক্ষিতে আমাদের এই সিদ্ধান্ত।"
এ প্রসঙ্গে উদুপি জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ আরিফ বলেন, "এমন পরিস্থিতি আগে কখনও ছিল না। এখানে প্রায় ৭০০ সদস্য রয়েছে যার মধ্যে ৪৫০ জন মুসলিম। কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুই বছর আমাদের ব্যবসা মার খেয়েছে। এখন আমরা যখন আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে ঠিক তখনই মন্দির কমিটিগুলি আমাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে।"