সংক্ষিপ্ত
- পঙ্গপালের হানায় প্রাণ ওষ্ঠাগত মধ্যপ্রদেশের
- গত ২৭ বছরের মধ্যে এবারের আক্রমণই সবচেয়ে ভয়াবহ
- শস্যখেকো পঙ্গপালের হানার সম্মুখীন উত্তরপ্রদেশও
- চলতি মাসের শুরুতেই পাকিস্তান থেকে এসেছে এই পঙ্গপাল বাহিনী
একদিকে আমফানের তাণ্ডবে জনজীবন বিপর্যস্ত পূর্ব ভারতে অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে দেশের নানা প্রান্তে। পরিস্থিতি নিয়ে তটস্থ প্রশাসন এরমধ্যেই নতুন বিপদ হিসাবে হাজির হল পঙ্গপালের দল। ইতিমধ্যে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে ধেয়ে এসেছে এই পঙ্গপালের দল। পঙ্গপাল বাহিনীর তান্ডবে ইতিমধ্যেই মধ্যেপ্রদেশে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। আপাতত এই বাহিনীর গন্তব্য উত্তরপ্রদেশ।
পঙ্গপাল নিয়ে আগেই ভারতকে সতর্ক করে দিয়েছিল রাষ্ট্রসংঘ। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কেও ছিল ভারতের কৃষিমন্ত্রক। এখন সেই আতঙ্ককে সত্যিতে পরিণত করে উত্তরভারতে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পঙ্গপালের ঝাঁক ঢুকে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই মধ্যপ্রদেশের একাধিক জেলাতে তান্ডব চালিয়েছে পঙ্গপাল বাহিনী। ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষেতের ফসল সাফ করে দিয়েছে পঙ্গপাল। সূত্রের খবর, রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ হয়ে এই পঙ্গপাল বাহিনী আপাতত উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে হানা দিয়েছে।
প্রায় প্রতি বছরই পঙ্গপালের আক্রমণ হয়ে থাকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মত উত্তরভারতের রাজ্যগুলিতে। এইবছর ৯টি পঙ্গপাল বাহিনী রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশের বুধনি এবং সেহর জেলায় আসে। সেখান থেকে পৌঁছায় মালওয়া নির্মারে। ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের প্রায় ১৫টি জেলায় ফসল তছনছ করে দিয়েছে এই পঙ্গপাল বাহিনী। মধ্যপ্রদেশ রাজ্য কৃষি দফতরের হিসেব অনুসারে গত ২৭ বছরের মধ্যে এবারের আক্রমণই সবচেয়ে ভয়াবহ।
জানা গিয়েছে, উজ্জয়ন জেলার পানবিহারের কাছে রানা হেডা গ্রামে প্রথমে সাড়ে বারো বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই বাহিনী তান্ডব চালায়। এরপর গুর্জর খেদি, খোর, নয়াগাঁও, কানাকা, সাগ্রানা, কেশরপুরা প্রভৃতি এলাকার ফসল নষ্ট করে দেয়। সোনি, খোখ্রা, নিনোরা, ছান্ডাসা, মুলতানপুরা অঞ্চলের ফসলের ওপরও হানা দেয়। রবিবার এই পঙ্গপালের দল মধ্যপ্রদেশ থেকে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে ঢুকেছে। ইতিমধ্যেই পঙ্গপাল বাহিনী আগ্রা, আলিগড়, মথুরা, হাথরস, এটা, ফিরোজাবাদ, মৈনপুরি, ফারুখাবাদ, আউরিয়া, কানপুর, জাশি, মাহোবা, হামিরপুর, ললিতপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পঙ্গপাল তাড়ানোর জন্য কেমিক্যাল স্প্রে করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। ঝাঁসি জেলা প্রশাসন পঙ্গপাল ধ্বংসে দমকল বাহিনীকে রাসায়নিক নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ট্র্যাক্টর ও দমকলের গাড়ির সাহায্যে কেমিক্যাল স্প্রে করে পঙ্গপালদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালাচ্ছে কেন্দ্রের দুই বাহিনী ও উত্তরপ্রদেশের কৃষি দফতরের বিহানী। এই পঙ্গপালের দল ৮ হাজার কোটি টাকার শস্য নষ্ট করে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও ফল ও সবজির নার্সারি ধ্বংস করে দিতে পারে।এবারের পঙ্গপালগুলি আকারে ছোট বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর কমল কাটিয়া।
এর আগেও পঙ্গপালের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পঞ্জাবের কৃষকরাও। বহু ফসল তাদের নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া পাকিস্তানেও পঙ্গপালের উপদ্রবের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে রাজস্থানের ১২ জেলায় পঙ্গপাল হানা দিলে ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।
চলতি মাসের শুরুতেই পাকিস্তান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের রাজস্থানে ঢুকেছিল পঙ্গপাল। অর্ধেক ফসল নষ্ট করে তারা এখন মধ্যপ্রদেস, উত্তরপ্রদেশ হয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে দিল্লির দিকে। যোধপুরভিত্তিক পঙ্গপাল সতর্ককারী সংস্থার (এলডব্লিউও) উপ-পরিচালক কেএল গুরজার বলেন, ‘২০১৯ সালে পরিপক্ক হলুদ রংয়ের পঙ্গপাল পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রজনন করেছিল। তাদেরই বংশ থেকে এসেছে গোলাপি রঙের একদল পঙ্গপাল। এরা আগেরগুলোর চেয়ে আরও বেশি ফসল নষ্ট করে।'