গত বছর এই দিনেই সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে সরকরি নথি প্রকাশ করা হয়েছিল
তারপরও তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়নি
এই বিষয়ে সম্প্রতি রাজেশ তালওয়ার একটি নতুন বই প্রকাশ করেছেন
তাঁর দাবি জওহরলাল নেহেরু এবং গান্ধী পরিবার অনেক কিছুই জানে
২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে সরকরি নথি জনসমক্ষে আনা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান তো হয়ইনি, বরং আরও বেড়েছে। এই বিষয়ে আইনজীবী তথা লেখক রাজেশ তলোয়ার তাঁর নতুন বই 'ভ্যানিশিং অব সুভাষ বোস'-এ এই বিষয়ে তিনটি তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তাঁর নিখোঁজ অথবা মৃত্যুরহস্যের আলোকপাত করার চেষ্টা করেছেন। নেহেরুর চরিত্র ও আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
তাঁর বইয়ের একাদশতম অধ্যায়ের শিরোনাম 'নেহেরু কী জানতেন'। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সুভাষ বসু সংক্রান্ত সোভিয়েত রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া বেশ কিছু চিঠিপত্র অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেগুলিতে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে জওহরলাল নেহরু-কে বলা হয়েছে, ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছিল সুভাষচন্দ্র বসুর। রাজেশ তলোয়ার দাবি করেছেন, নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী দুজনেই বুঝেছিলেন পরবর্তীকালে এই বিষয়ে তাঁদের দিকে আঙুল উঠতে পারে। সেই সময়ে এই নথিগুলিই নেহরুকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে। তাই এগুলিকে যন্ত সহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
জওহরলাল নেহরুর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ ছিল? প্রথম অভিযোগ, তিনি সোভিয়েতদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন যে সুভাষ বসু বেঁচে আছেন এবং ভাল আছেন। সোভিয়েত পক্ষ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, সুভাষচন্দ্র বসুকে কী করা হবে? নেহেরু বলেছিলেন নেতাজি-কে কারাবন্দী করে রাখতে। নেহেরুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল আরও গুরুতর। বিজেপি সাংসদ সুব্রমণিয়ন স্বামী যেমন বলেছিলেন, সোভিয়েতদের জওয়হরলাল নেহরু মুক্তি দেওয়া বা হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ার বদলে নেতাজিকে একেবারে নির্মূল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
দুটি অভিযোগের যে কোনওটিই, ইতিহাসে জওয়হরলাল নেহেরুকে এক নিন্দিত নায়ক বানিয়ে দিতে পারত। আর সেই কারণেই এই নথিগুলি যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন রাজেশ তলোয়ার। তবে নেহেরুর সঙ্গে নেতাজির মতপার্থক্য থাকলেও, পুরোনো কমরেড-কে জেলবন্দি রাখা বা হত্যার নির্দেশ দেওয়ার মতো মানসিকতা জওহরলাল নেহরুর ছিল না বলে জানিয়েছেন লেখক। তাঁর মতে, জওহরলাল নেহেরুর কাজকর্মের ক্ষেত্রে ত্রুটি ছিল। নেতাজির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত রেষারেষিও ছিল। কিন্তু, এমন খলনায়ক তিনি ছিলেন না। তবে জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধী দুজনেই নেতাজির অন্তর্ধান সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতেন বলেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজেশ তলোয়ার। কেন?
রাজেশ এই প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন প্রথন অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই-এর কথা। তিনি জানিয়েছেন এইসব টপ সিক্রেট কাগজপত্র দেখার ছাড়পত্র একমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রীরই থাকে। তাই ক্ষমতায় আসার পর সম্ভবত মোরারজি দেশাই-ও নেতাজি সংক্রান্ত ওইসব গোপন নথি হাতে পেয়েছিলেন। আর সেই আচমকা আবিষ্কারের ধাক্কাতেই সংসদে জানিয়েছিলেন, তাইপেই-এ বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বের সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো নতুন নথি তাঁর হাতে এসেছে। কিন্তু, পরে সেইসব নথির কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন তিনি। কেন?
রাজেশ তলোয়ারের দাবি, সংসদে ক্ষণিকের উত্তেজনায় ওই বিবৃতি দেওয়ার পরই সত্য প্রকাশের বিষয়টি তিনি পুনর্বিবেচনা করেছিলেন। এতে হয়তো জওহরলাল নেহেরুর সুনামের ক্ষতি হতে পারত, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ক্ষতি হতে পারত, কিন্তু, ভারতকে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হত। সোভিয়েত রাশিয়া এবং ব্রিটেন-এর সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়ত। আর তাছাড়া বর্তমানে প্রকাশিত নথি, যেগুলি নেহেরুর নির্দোষের প্রমাণ, সেগুলির সাহায্যে নেহেরুও ধাক্কা সামলে নিতে পারতেন। কাজেই, লাভের লাভ কিছুই হত না।
তাহলে সেই নথিপত্র কোথায় গেল? সবই কী নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে? রাজেশ তলোয়ার বলেছেন, কখনই না। তবে সেগুলি সরকারি সংরক্ষণাগারে আছে, না সনিয়া গান্ধীর বাড়িতে কোনও নিরাপদে স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সেটাই বিরাট প্রশ্ন। রাজেশ-এর বিশ্বাস গান্ধী পরিবারের কাছে মূল নথিগুলি যদি নাও বা থাকে, অন্তত সেইসব গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্রের কপি নিশ্চয়ই আছে।
Read Exclusive COVID-19 Coronavirus News updates, from West Bengal, India and World at Asianet News Bangla.
খেলুন দ্য ভার্চুয়াল বোট রোসিং গেম এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজেকে। கிளிக் செய்து விளையாடுங்கள்
Last Updated Dec 5, 2020, 12:21 PM IST