সংক্ষিপ্ত

স্বামী-স্ত্রীর দুজনেই দৃষ্টিশক্তিহীন

ধুপকাঠি ও কর্পুর বিক্রি করে সংসার চলে

১০ বছর ধরে জমিয়েছিলেন ২৪,০০০ টাকা

ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়ে দেখেন তার মূল্য এখন ০

 

স্বামী-স্ত্রীর কেউই দেখতে পান না, দৃষ্টিশক্তি নেই তাঁদের। ধুপকাঠি তৈরি করে বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় বিক্রি করে যা টাকা হয় সেই টাকায় তাঁরা সংসার চালান। প্রতি মাসে অল্পকিছুই সঞ্চয় হয়। এই করে করে গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁরা প্রায় ২৪,০০০ টাকা জমিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই জমানো টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে গিয়েই জোর ধাক্কা খেতে হয়েছে তাঁদের। ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা যে নগদ টাকা জমা দিচ্ছেন, তা মোদী সরকার বাতিল করে দিয়েছে প্রায় চার বছর হতে চলল।  

ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ু-র এরোড় জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পঠিয়া মুপানুরে। ৫৮ বছরের সোমু এবং তার স্ত্রী পলনীম্মাল বছরের পর বছর ধরে অ্যান্থিয়ুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ধূপকাঠি ও কর্পূর বিক্রি করেন। ধূপকাঠি কেউ ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে কেনে না, বিক্রি করে নগদেই অর্থ মেলে। এতদিন তাঁদের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ছিল না। সঞ্চয় করার মতো অর্থই যে হাতে থাকত না বিশেষ। তাও যেটুকু বাঁচত, প্রতি সপ্তাহে, সোমু তা তাঁর মায়ের কাছে দিতেন। মা তাঁদের সঙ্গেই থাকেন। তিনি ওই খুচরো টাকা পরে ৫০০ বা ১০০০ টাকায় নগদে পালটে নিতেন।

এভাবেই দশ বছরের কিছু বেসি সময়ে জমা হয়েছিল ২৪০০০ টাকা। সেই টাকায় হাত দিতেন না সোমু ও  পলনীম্মাল। কিন্তু অবস্থা পাল্টে যায় গত চার মাসে। করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউন জারির ফলে একটুও আয় হয়নি তাঁদের। ফলে মায়ের কাছে রাখা ওই সঞ্চিত অর্থে হাত দিতে হয়েছিল। গত শুক্রবার সোমু ওই উচ্চমূল্যের মুদ্রানোটগুলি স্থানীয় এক ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেখানে জানতে পারেন, তিল তিল করে জমানো সেই ২৪০০০ টাকার এখন আর কোনও মূল্যই নেই।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদী পুরোনো ৫০০ টাকার নোট এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছিল। তার বদলে পরবর্তীকালে নতুন ৫০০ টাকা ও ২০০০ টাকার নোট চালু করা হয়। সোমুর দাবি তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ এই নোট  বাতিল সম্পর্কে এতদিন কিছুই জানতেন না। এই অবস্থায় জীবনের সব সঞ্চয় মূল্যহীন হয়ে পড়ায়, সপরিবারে অথই জলে পড়েছেন তিনি।

এই অবস্থায় এই বিষয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী কে পলানিস্বামী-র সাহায্য চেয়ে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন সোমু। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে এই বিষয়টি তঁরা তদন্ত করে দেখবে। সত্যিই ওই নগদ অর্থ সোমু ও তাঁর স্ত্রীর জমানো অর্থ না কোনও বেআইনি পথে তাঁরা তা পেয়েছেন - সবটাই খতিয়ে দেখা হবে। গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দেওয়া নোটবন্দির মতো ঘটনা এতদিনেও তাঁরা কীভাবে জানতে পারেননি, সেই বিষয়টিও দেখা হবে।  

তবে তামিলনাড়ু-তে এইরকম ঘটনা নতুন নয়। ২০১৯ সালেও একই রকমভাবে রাজ্যের তিরপুর জেলা সদরের দুই বৃদ্ধা মহিলা-ও নোট বাতিলের ঘটনা একেবারেই জানতেন না বলে জানা গিয়েছিল। তাঁদের কাছে বাতিল ১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোট মিলিয়ে ৪৬,০০০ টাকা ছিল। ওই টাকা ফেরত না পেলেও তবে, জেলাশাসক ওই দুই বোনের জন্য বৃদ্ধা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।