V.S Achuthanandan: একজন পুলিশ বন্দুকের সঙ্গে বেয়নেট তাঁর উরুতে ঠেকাল এবং চলতে থাকল জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর। পায়ের পাতা ফুটো করে সেই বেয়নেট আরও যেন ভেতরে ঢুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত এবং যন্ত্রণা। জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি।

V.S Achuthanandan: কেরালা তথা গোটা দেশের বাম আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম একটি নাম ভি এস অচ্যুতানন্দন। তিনি নিজের রাজ্যে ‘বিপ্লবের সূর্য’ নামে পরিচিত ছিলেন। গত ১৯২৩ সালে, আলেপ্পির পুন্নপ্র নামক ছোট্ট একটি গ্রামে তাঁর জন্ম। কার্যত, কেরালার রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ঠিক যে সময়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তখন যেন সে এক উত্তাল রাজনৈতিক সংগ্রামের মুহূর্ত। 

সেই ১৯২৩ সালের ২০ অক্টোবর, কেরালার আলেপ্পি জেলায় ভি এস অচ্যুতানন্দন জন্মগ্রহণ করেন। এমনকি, ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে পুন্নাপ্রা ভয়েলার ধর্মঘট এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ। এরপর ধীরে ধীরে কেরালার রাজনীতিতে ‘ভিএস’ একজন অন্যতম পরিচিত নাম হয়ে উঠতে শুরু করেন।

দক্ষিণ কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টির উত্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। জমিদার এবং মালিকদের শোষণে জর্জরিত শ্রমিকদের লাল পতাকার নীচে এনে একত্রিত করে ভি এস অচ্যুতানন্দন রীতিমতো বিরাট বার্তা দিতে পেরেছিলেন। ধানক্ষেত এবং রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বেই শ্রমিকরা বাঁশের বর্শা নিয়ে প্রতিরোধ তৈরি করেছিল। দলের নির্দেশে সেই সময়, ভি এস আত্মগোপন করেছিলেন একটি গোপন ডেরায়। 

পালা থানার অভিজ্ঞতা লিখেছিলেন আত্মজীবনীতে

আত্মজীবনীতে ভি এস সেই সময়, লকআপে তাঁর উপর চালানো নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছিলেন। তিনি লেখেন, “তাঁর দুটি পা লকআপের জানালা দিয়ে বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর লকআপের জানালার লোহার সঙ্গে আমার সেই দুটো পা লাঠি দিয়ে বাঁধা হয় এবং তারপর লকআপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন পুলিশ লকআপের ভিতরে ছিল এবং কয়েকজন বাইরে। আসলে ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ এবং কে পি পেত্রোস কোথায় লুকিয়ে আছে, তা জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা চলছিল। একজন পুলিশ বন্দুকের সঙ্গে বেয়নেট তাঁর উরুতে ঠেকাল এবং চলতে থাকল জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর। পায়ের পাতা ফুটো করে সেই বেয়নেট আরও যেন ভেতরে ঢুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে রক্ত এবং যন্ত্রণা।" 

জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি।পরে চোখ খুলে দেখলেন, তখন তিনি হাসপাতালে। জ্ঞান হারালেও পুলিশ যে উত্তরটা চেয়েছিল, তা ভি এস দেননি। মানে ই এম এস-এর নাম তিনি বলেননি। সেই মনোবল নিয়েই ভি এস কেরালার জনগণের কাছে কার্যত জননেতা হয়ে ওঠেন।

বিধায়ক হিসাবে তিনি কেরালা বিধানসভায় মোট ৩৪ বছর, ৭ মাস ২১ দিন ছিলেন

এটি একটি সর্বকালীন রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, ১৯৬৪ সালে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের উপর ভিত্তি করে কমিউনিস্ট পার্টি যখন বিভাজিত হয়, সেই সময় অচ্যুতানন্দন যোগ দেন সিপিআই(এম)-এ। আরও ভালো করে বলতে গেলে, পার্টি প্রতিষ্ঠার পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

সিপিআই(এম)-এর প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হয়েছিলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। একদিকে যেমন ছিল তাঁর পার্টির প্রতি আনুগত্য, ঠিক তেমনই বাস্তবকে গুরুত্ব দিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থাও সামলেছেন দারুণভাবে। সেই ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, অচ্যুতানন্দন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু তাই নয়, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।