সংক্ষিপ্ত
ব্যাস্টিল ডে কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, ফ্রান্স বিশ্বমঞ্চে ভারতের গুরুত্ব তুলে ধরেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। গত ৩০ বছরে ফ্রান্স ইউরোপে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
১৪ জুলাই থেকে দু'দিনের ফ্রান্স সফরে প্যারিস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফ্রান্সের বাস্তিল ডে প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পরে, মোদী হলেন দ্বিতীয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। ভারত-ফরাসি সম্পর্কের ওপর এই সফরের প্রভাব কী পড়বে। এই ধরনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে জেনে রাখা ভালো যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফরটি উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এই সফরের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ফ্রান্স সফরের গুরুত্ব
ব্যাস্টিল ডে কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, ফ্রান্স বিশ্বমঞ্চে ভারতের গুরুত্ব তুলে ধরেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ৩০ বছরে ফ্রান্স ইউরোপে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে রাশিয়ার পর ফ্রান্সও ভারতের সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
উভয় দেশই প্রতিরক্ষা চুক্তি বাড়াতে পারে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক হতে চলেছে। ইতিমধ্যে উভয় দেশ প্রতিরক্ষা খাতেও এ ধরনের চুক্তি ঘোষণা করতে পারে, যার মধ্যে ফ্রান্স থেকে প্রযুক্তি হস্তান্তর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এই সফরে নৌবাহিনীর প্রয়োজনে ফ্রান্স থেকে তৈরি ২৬টি রাফালে বিমান কেনার কথা ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে রাফালে-এম বিমান কেনার পাশাপাশি নৌবাহিনীর জন্য ৩টি স্কোর্পিন সাবমেরিন। এই সময়ে, ফ্রান্স ভারতকে আরও কিছু অস্ত্র সরবরাহের জন্য একটি বড় ঘোষণা করতে পারে।
প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সহ দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে। কারণ উভয় দেশই আন্তর্জাতিক সমুদ্র এলাকায় চিনের কৌশল ও অভিপ্রায় সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। একইসঙ্গে এমনও সম্ভাবনা রয়েছে যে আলোচনায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ভারতকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমী দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানাতে পারেন।
গত ২৫ বছরে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত শক্তিশালী হয়েছে। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৯৮ সালে, তৎকালীন ফরাসি রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক ভারত সফরে এসেছিলেন। সে সময় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ফরাসি জনগণ দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি মুগ্ধ। ফ্রান্স কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকার মতো অবস্থান নেয়নি। পোখরান পারমাণবিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব যখন ভারতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল তখন ফ্রান্স নিরপেক্ষ ছিল। হয়তো এ কারণেই দুই দেশের সম্পর্ক অনেক বছর ধরেই অনুকূলে ছিল। যেহেতু অনেক ভারতীয় স্কুলে ফরাসি ভাষা শেখানো হয়, ফরাসি কলেজগুলিতে প্রায়ই যোগ, আয়ুর্বেদ এবং দর্শন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও এখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে, ফ্রান্স এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলার ছিল, যা ২০২১ সালে ১৩ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে। এখন এই ব্যবসার পরিসংখ্যানকে আরও এগিয়ে নেওয়ার দিকে ফোকাস করা যেতে পারে।