ভারতে হোয়াটসঅ্যাপে সাইবার প্রতারণা এতটাই বেড়েছে যে প্রতি মাসে প্রায় এক কোটি অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হচ্ছে। তবে, সরকার উদ্বিগ্ন কারণ হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ নম্বরগুলির বিবরণ শেয়ার করে না, যার ফলে স্ক্যামারদের ধরা এবং জালিয়াতি বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্যাম এবং সাইবার প্রতারণা দ্রুত বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন যে প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হচ্ছে, তবুও অনলাইন জালিয়াতি থামার নাম নিচ্ছে না। এই কারণে এখন ভারত সরকার হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে। প্রশ্ন হলো, যখন এত বড় আকারে অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হচ্ছে, তখন স্ক্যাম কেন থামছে না?
প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট ব্যান, তবুও প্রতারণা কেন?
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, হোয়াটসঅ্যাপ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৯.৮ মিলিয়ন ভারতীয় অ্যাকাউন্ট তাদের নীতি লঙ্ঘনের জন্য ব্যান করেছে। এই অ্যাকাউন্টগুলি মূলত স্প্যাম, স্ক্যাম এবং সাইবার প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ প্রতি মাসে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রকাশ করলেও, ব্যান করা মোবাইল নম্বরগুলির বিবরণ শেয়ার করে না। এটাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে প্রতি মাসে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যান (২০২৫):
জানুয়ারি: ৯.৯ মিলিয়ন
ফেব্রুয়ারি: ৯.৭ মিলিয়ন
মার্চ: ১১.১ মিলিয়ন
এপ্রিল: ৯.৭ মিলিয়ন
মে: ১১.২ মিলিয়ন
জুন: ৯.৮ মিলিয়ন
জুলাই: ৮.৯ মিলিয়ন
আগস্ট: ৮.২ মিলিয়ন
সেপ্টেম্বর: ১০.০ মিলিয়ন
অক্টোবর: ৯.১ মিলিয়ন
সূত্র: হোয়াটসঅ্যাপ মাসিক কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট, ET দ্বারা উদ্ধৃত
+91 মোবাইল নম্বর কি স্ক্যামারদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে?
ভারত হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার। কর্মকর্তারা মনে করেন যে ভারতীয় মোবাইল নম্বর (+91) ব্যাপকভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক নম্বর জালিয়াতি করে নেওয়া হয় বা একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, তারা আচরণগত ইঙ্গিতের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট ব্যান করে, কিন্তু সরকারের যুক্তি হলো, নম্বরের পরিচয় ছাড়া এটা নির্ধারণ করা কঠিন যে নম্বরটি আসল না কি নকল।
ব্যান হওয়ার পরেও টেলিগ্রামে কীভাবে স্ক্যাম অ্যাকাউন্ট ফিরে আসে?
আরেকটি আশ্চর্যজনক বিষয় সামনে এসেছে যে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্যান হওয়া অনেক নম্বর টেলিগ্রামের মতো অন্যান্য OTT প্ল্যাটফর্মে আবার সক্রিয় হয়ে যায়। একবার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে, এই অ্যাপগুলি সক্রিয় সিম কার্ড ছাড়াই কাজ করে, যার ফলে সাইবার অপরাধীদের ধরা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
৯৫% ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম হোয়াটসঅ্যাপেই কেন হয়?
কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতে হওয়া প্রায় ৯৫% ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম এবং পরিচয় চুরির ঘটনা হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যুক্ত। এই কারণেই সরকার এখন KYC, সিম ট্রেসিং এবং নম্বর ভেরিফিকেশন নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে।
সরকার হোয়াটসঅ্যাপের কাছে কী চায়?
সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তাদের ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন নেই, বরং শুধুমাত্র ব্যান করা মোবাইল নম্বরগুলির তালিকা প্রয়োজন যাতে যাচাই করা যায় যে সেই নম্বরগুলি আসল ছিল না কি নকল। MeitY-এর প্রাক্তন কর্মকর্তা রাকেশ মাহেশ্বরীর মতে, যদি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট থেকে গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি সামনে আসে, তবে সরকারের অতিরিক্ত তথ্য চাওয়ার অধিকার আছে।
এনক্রিপশন বনাম সুরক্ষা: এটাই কি সবচেয়ে বড় সংঘাত?
হোয়াটসঅ্যাপের বক্তব্য, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের কারণে তারা অ্যাকাউন্ট-স্তরের বিবরণ শেয়ার করতে প্রযুক্তিগত এবং আইনি সমস্যা অনুভব করে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তা, সীমিত ডেটা শেয়ারিংও যদি না করা হয়, তাহলে সাইবার প্রতারণা আরও বাড়তে পারে।


