সংক্ষিপ্ত

অপরাধীদের মানসিকতা যেন বোঝা বড় দায়। 

এরপর আবার রেললাইনের ধারে যেখানে তরুণীকে খুন করে ফেলে রেখেছিলেন, সেখানে এসেই মৃতদেহকে ধর্ষণ। গুজরাতের বুকে এক কলেজপড়ুয়ার খুন এবং ধর্ষণ কাণ্ডে উঠে এল এইরকমই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর এই খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই যুবক আরও একাধিক খুনে জড়িত বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

একা মহিলা বা তরুণীদের খুঁজে খুঁজে তাদের খুন করতেন বলে অভিযোগ সামনে আসছে। সেই সিরিয়াল কিলারকেই সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে গুজরাত পুলিশ। জানা যাচ্ছে, সেই ধৃতের নাম ভোলু কর্মবীর জাট। তাঁর শেষ শিকার ছিলেন গুজরাতের উদওয়াড়ার কলেজপড়ুয়া এক তরুণী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উদওয়াড়া স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ওই তরুণীর বাড়ি। প্রতিদিনই কলেজে যাওয়ার জন্য ওই স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতেন তিনি। আবার ট্রেনেই ফিরে আসতেন। স্টেশনে থেকে নেমে রেললাইনের ধার দিয়ে সহজ পথে হেঁটে বাড়ি পৌঁছতেন। কিন্তু গত ১৪ নভেম্বর, সেই তরুণী আর বাড়ি ফেরেননি। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তরুণী যখন বাড়িতে ফিরছিলেন না, তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে গোটা পরিবার।

রোজ যে রাস্তা ধরে যাতায়াত করতেন, সেই রাস্তাতেই খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। তখনই রেললাইনের ধারে একটি ঝোপে তরুণীর অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যেরা । পুলিশের কথায়, তরুণীকে খুনের পর মৃতদেহের পাশে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েও ছিলেন সেই অভিযুক্ত। তরুণীর পরিবারকে দেখেই ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে রেললাইনের ধারে ব্যাগপত্র ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

এরপরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রথমেই রেললাইনের ধার থেকে ওই ব্যাগটি উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। আর সেই ব্যাগের সূত্র ধরেই সিরিয়াল কিলারের হদিশ মেলে। সেইসঙ্গে, কাছাকাছি রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখে পুলিশ। তখনই দেখা যায় যে, ওয়াপি রেল স্টেশনে পুরো এক ধরনের একটি ব্যাগ নিয়ে একজন ব্যক্তিকে প্ল্যাটফর্মে হাঁটতে দেখা যায়।

এরপরে সেই সিসিটিভি ফুটেজটি সংগ্রহ করে পুলিশ। তারপর লাজপুর সেন্ট্রাল জেলের এক কর্মীর সহযোগিতায় এই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, সেই অভিযুক্ত আদতে একজন সিরিয়াল কিলার। মোট ৫০০০টি সিসিটিভি ফুটেজ এবং ১০টি বিশেষ দল গঠন করে অভিযুক্তের খোঁজ শুরু হয়। শুধু তাই নয়, আরও চার রাজ্যের পুলিশের সাহায্য নেয় গুজরাত পুলিশ।

তদন্তে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য। প্রধানত চলন্ত ট্রেনে একা মহিলাদেরই শিকার বানাতেন ভোলু। পায়ে কোনও ত্রুটি না থাকলেও, ইচ্ছে করেই সুযোগ নেওয়ার জন্য খুঁড়িয়ে চলতেন। ফলে, ট্রেনের প্রতিবন্ধী কামরায় উঠতে তাঁর কোনও অসুবিধাই হত না। আর সেখানে কোনও মহিলাকে একা পেলেই ধর্ষণ করে খুন করতেন বলে অভিযোগ। এমনকি, ট্রেনের মধ্যেই চারজনকে খুনের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানতে পেরেছে, ম্যাঙ্গালুরু, হাওড়া, সেকেন্দরাবাদ এবং পুণে থেকে কন্যাকুমারী যাওয়ার পথে চলন্ত ট্রেনেই ঐ চারজনকে খুন করেন তিনি। ভোলুর শেষ শিকার ছিলেন গুজরাতের ওয়লসাড়ের এই কলেজপড়ুয়া তরুণী। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তিনি পর পর পাঁচটি খুন করেছেন। যার মধ্যে চারজনই তরুণী।

গত ২০ অক্টোবর, মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে পুনে-কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে যৌন নির্যাতনের পর খুন করা হয় এক মহিলাকে। তার কয়েকদিন পরেই তিনি কর্নাটকের বেঙ্গালুরু-মুরুদেশ্বরগামী ট্রেনে খুন করেন আরও একজনকে। সেখানেই শেষ নয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর গুজরাতের উদওয়াড়াতে খুন এবং যৌন নির্যাতন করেন এক তরুণীকে।

তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যান। এরপর ১৯ নভেম্বর তিনি ওই তবলাবাদককে খুন করেন। ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের প্রতিবন্ধী কামরায় বালির বাসিন্দা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ মেলে। সেই দেহে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।