হোলি যেন প্রকাশ্যে মহিলাদের হেনস্থা করার লাইসেন্সহোলি ২০২০-র পর ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া ভরেছে অশ্লীল ভিডিওয়রং খেলার ক্ষেত্রে নেওয়া হল না মহিলাদের সম্মতিএর পিছনে বলিউড সিনেমাকে দায়ী করছেন অনেকে 

বছর খানেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতের বিরুদ্ধে এক মার্কিন মহিলাকে প্রকাশ্যে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, বলিউড সিনেমায় বিভিন্ন দৃশ্যে নায়িকাদের হেনস্থা করে থাকেন নায়ক। কাজেই ভারতীয় সমাজে এই ধধরণের ঘটনা স্বাভাবিক। ২০২০ সালের হোলি উৎসবের পর টিকটকে যে ধরণের ভিডিও-র ভিড় দেখা যাচ্ছে, তাতে ওই আইনজীবীর যুক্তিই ঠিক ছিল বলে মনে হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যপী চলছে #মিটু আন্দোলন। মহিলারা এগিয়ে এসে বলছেন 'না মানে না'। অনেক ভারতীয় পুরুষও তা মানেন। কিন্তু হোলি-তে যেন আইন-কানুন ভদ্রতা-সভ্যতা মানার কোনও দায় নেই। কোনও ধর্ষণের ঘটনার পর যে ভারতীয়দের লাফিয়ে উঠতে দেখা যায় ধর্ষকদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে, তাদের এনকাউন্টার-এর দাবি তোলে যারা, সেই ভারতীয়দেরই হোলির দিন দেখা গেল সম্মতির বালাই না রেখে মহিলাদের চরম হেনস্থা করতে। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও যেমন ওই মহিলার সম্মতি না নিয়ে তাঁকে চরম অসহায় অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়, হোলির রঙ মাখানোর ক্ষেত্রেও সেরকমই অসহায়তার ছবিই দেখা গেল। সেই সঙ্গে পেশি শক্তিতে বলিয়ান পুরুষের গর্ব।

আর এই রকম হেনস্থার বহু ভিডিওই দোল বা হোলির আনন্দের ভিডিও হিসাবে ছড়িয়ে পড়েছে টিকটক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। কোনও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দু'জন ছেলের এক মহিলার ঘোমটা সরিয়ে জোর করে তার গায়ে কাদা ঢেলে দিচ্ছে। কোনও ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে এক মহিলা দুই পায়ের ফাঁকে মাথা গুঁজে বসে আছে। আর তাকে ঘিরে বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে। তারা ওই মহিলার মাথায় রং-বেলুন ছুড়ে মারছে। একাধিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে একজন পুরুষ পিছন থেকে কোনও মহিলার হাত ধরে রেখেছেন আর আরেকজন ওই অসহায় অবস্থায় মহিলাকে রং মাখাচ্ছে। কোনও কোনও ভিডিওতে আবার দেখা যাচ্ছে মহিলাকে মাটিতে ফেলে তার গায়ের উপর চড়ে বসে রঙ লাগাতে। কোনও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে জোর করে চ্যাংদোলা করে তুলে রঙের পাত্রে ফেলে দেওয়া হচ্ছে কোনও মহিলাকে। এইরকম ভিডিও একটি দুটি নয়, অসংখ্য।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

কোনও ক্ষেত্রেও রং মাখার জন্য ওই মহিলারা সম্মতি জানিয়েছেন বলে অন্তত তাদের অভিব্যক্তিতে মনে হচ্ছে না। একটু হোলি বা রঙের উৎসবের বিষয়টা সরিয়ে রেখে এই ভিডিওগুলির কথা কল্পনা করলেই বোঝা যাবে কতটা অশ্লীল এই ভিডিওগুলি। হোলি ছাড়া অন্যান্য দিন এই একই কাজ করলে এই পুরুষদের প্রত্যেকের শ্লীলতাহানির দায়ে শাস্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু, 'বুরা না মানো হোলি হ্যায়' যেন মহিলাদের হেনস্থা করার লাইসেন্স, দিয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ হতেই ভিডিওগুলির অনেকগুলি টিকটক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

হোলি-র অছিলায় মহিলাদের খুল্লামখুল্লা হেনস্থা করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার প্রবণতাটা নতুন। কিন্তু, হোলির দিন এই ধরনের হেনস্থার ঘটনা ভারতে একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলিউড চলচ্চিত্রের কাহিনি, গানের দৃশ্যায়ন, গানের কথা এবং অন্যন্য পপ কালচারে হোলির দিন মহিলাদের হেনস্থা করাটা স্বাভাবিক ঘটনা করে তুলেছে। বিষয়টিকে রোম্যান্টিক মাত্রা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাস্তব হল, ভারতে এখনও বহু মহিলাই রং খেলার ইচ্ছে থাকলেও এই হেনস্থা হওয়ার ভয়েই হোলির দিন নিজেদের ঘরে বন্ধ করে রাখেন। আর কবে ভারতীয় পুরুষরা বুঝবেন না মানে না? ভাববার সময় এসেছে।