সংক্ষিপ্ত

তালিবানদের হাতে প্রাণহানির আশঙ্কা করচেন প্রায় ২৫০ মহিলা আফগান বিচারক। কী অবস্থায় আছেন তারা? 
 

আমেরিকা-সহ বিদেশি শক্তিগুলি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। আর সেই সাহসে ভর করেই একের পর এক তালিবান জঙ্গিদের জেলে পুরেছিলেন তারা।  আফগানিস্তানের প্রায় জনা আড়াইশো মহিলা বিচারক। বর্তমানে তাদের আর কোনও মূল্য নেই। জেল পাঠানো সেই দুষ্কৃতীরাই আজ বিজয়ী পক্ষে, শাসক। তালিবানরা ক্ষমতায় ফিরে সব কারাগারে থাকা বন্দিদের মুক্ত করেছে। আর তারা এখন নেকড়ের মতো খুঁজে বেরাচ্ছে তাদের জেল খাটানো সেই মহিলা বিচারকদের। প্রাণ হাতে করে লুকিয়ে আছেন মাত্র কয়েকদিন আগেও, সম্মানীয় বিচারপতির পদে থাকা এই আফগান মহিলারা। 

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন জাজেস (আইএডব্লিউজে)-এর  ছোট ছোট গোষ্ঠী করে কিছু আফগান মহিলা বিচারক দেশ থেকে পালাতে পেরেছেন। তবে, অধিকাংশই মহিলা বিচারকই রয়ে গিয়েছেন আফগানিস্তানে। তারা এখনও তালিবানদের দখল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। তালিবানদের বন্দিমুক্তি সারা দেশে আফগান মহিলা বিচারকদের জীবনকে বিপদে ফেলেছে। প্রত্যেক বিচারকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালাচ্ছে এই মুক্তি প্রাপ্ত জঙ্গিরা। 

"

সম্প্রতি, আরও ৪-৫জন মহিলা বিচারকের সঙ্গেই ইউরোপের কোনও এক অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে এসেছেন, আফগানিস্তানের পদচ্যূত সরকারের এক উচ্চপদস্থ মহিলা বিচারক। পালিয়ে এসেও নিজের নাম ও আশ্রয়স্থলের নাম বলতে সাহস করেননি তিনি। তবে জানিয়েছেন, নিরাপদ জায়গায় আসার পর দেশে ফোন করে তিনি জানতে পেরেছেন তার খোঁজে এসেছিল তালিবান বন্দিরা। তিনি জানিয়েছেন, কাবুলে, তার বাড়িতে হানা দিয়েছিল চার-পাঁচজন তালিবান সদস্য, যাদের একসময় তিনি কারাগারে বন্দি করেছিলেন। তারা এসে ওই মহিলা বিচারকের সন্ধান করেছিল। 

তার সহকর্মীরাও তাকে যেসব খবরাখবর দিয়েছেন, তা শুধুই ভয়ের এবং সন্ত্রাসের। আফগানিস্মতান থেকে অন্যান্য  মহিলা বিচারকরা সাফ জানিয়েছেন, তাদের কেউ উদ্ধার না করলে প্রাণ রক্ষাই তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ মুক্তিপ্রাপ্ত তালিবান বন্দীরা মহিলা বিচারক, মহিলা সরকারি আইনজীবী এবং মহিলা পুলিশ কর্মকর্তাদের খোলাখুলি হত্যার হুমকি দিয়েছে।এর আগে বারবারই আইন বিভাগে কর্মরত হাই প্রোফাইল আফগান মহিলারা তালিবানদের নিশানা হয়েছেন। জানুয়ারিতে, সুপ্রিম কোর্টের দুই মহিলা বিচারপতি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখনও, তালিবানদের কাছে কাবুল ছিল অনেক দূরে। আর েখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর, তাদের আর রোখে কে? 

আরও পড়ুন - সারাদিন পর্নোগ্রাফি দেখছে তালিবান, তৈরি হচ্ছে 'তালিকা' - কী চলছে কট্টরপন্থীদের মাথায়, দেখুন

আরও পড়ুন - তালিবানের হাত থেকে বাঁচতে - কাবুল বিমানবন্দরে এই কাজ করতে বাধ্য হলেন শত শত মহিলা, দেখুন

আরও পড়ুন - মহিলা হয়ে তালিবানের সাক্ষাতকার, গড়েছিলেন নজির - সেই সাংবাদিকেও কী অবস্থা হল, দেখুন

আফগান মানবাধিকার কর্মী হরিয়া মোসাদ্দিক বলেছেন, মহিলা বিচারকরা ছাড়াও, আফগানিস্তানে আরও হাজার হাজার মহিলা মানবাধিকার রক্ষাকর্মীও রয়েছেন, যাদেরও ছাড়বে না তালিবান বাহিনী। কাবুলের পতনের পর যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময় পশ্চিমী দেশগুলি মহিলা বিচারক ও মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসাকে অগ্রাধিকার দেয়নি, এমনটাই অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার কর্মীরা। নিজেদের নাগরিক বাদে আর কাউকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি।

YouTube video player