সংক্ষিপ্ত

  • ভারতে নোট বাতিল করার পর তিন বছর পার হল
  • ভারতের বাজারে নিষিদ্ধ ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট আর দেখাই যায় না
  • প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কিন্তু এখনও কোটি কোটি নিষিদ্ধ নোট উড়ছে
  • মোদী সরকার প্রথমে ফিরিয়ে নেবে বলেও পরে পিছিয়ে এসেছে

ভারতের নোট বাতিল, তার জেরে ভারত-নেপাল সম্পর্কই খারাপ হতে বসেছে। নেপাল সরকারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নেপালের ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের কাছে ৭০০ কোটি টাকার ভারতীয় বাতিল নোট রয়েছে। সরকারিভাবে নেপালে ভারতীয় মুদ্রা চলে না। কিন্তু, নেপাল ও ভারতের সীমানা উন্মুক্ত থাকা, এবং ভারতের সঙ্গেই নেপালের বেশিরভাগ বাণিজ্য থাকায় সেই দেশে ভারতীয় মুদ্রার দারুণভাবে গ্রহণযোগ্য। ভারতের ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট-এও নেপালিদের বৈধভাবে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রা রাখার অনুমতি দেয়।

জানা গিয়েছে ভারতে নোটবাতিল হওয়ার পরই উচ্চ মূল্যের ভারতীয় নোটের বিনিময় বন্ধ করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল নেপাল সরকার। ভারত যদি নিষিদ্ধ নোট ফেরত নিতে চায়, নেপাল সরকার একটি সফ্টওয়্যার তৈরি করে তাদের নাগরিকদের মুদ্রা বিনিময় ট্র্যাক করবে, যাতে ভারতীয়দের পক্ষে নেপালের মাধ্যমে নিষিদ্ধ মুদ্রা বিনিময় করা অসম্ভব হবে এমনও জানিয়েছিল নেপাল সরকার।

কিন্তু, নেপাল সরকারের দাবি নিষিদ্ধ নোট ফিরিয়ে নিতে কোনও উদ্য়োগই দেখায়নি ভারত সরকার। এর পিছনে ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির জড়িত বলেই দাবি নেপালের। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কাঠমাণ্ডু গিয়ে নেপালের সঙ্গে নিষিদ্ধ নোট কীভাবে বিনিময় করা হবে তা আলোচনা করেছিলেন। পরের বছর মার্চেও তত্কালীন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নেপালকে শীঘ্রই নিষিদ্ধ ভারতীয় নোট বিনিময়ের সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।

কিন্তু, আচমকাই আরবিআই তার ২০১৭-২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে নেপাল থেকে নিষিদ্ধ ভারতীয় নোট বিনিময়ের অংশটি বাদ দিয়ে দেয়। ২০১৬-২০১৭ সালের বার্ষিক রিপোর্টে কিন্তু এই বিষয়টি রেখেছিল আরবিআই। কিন্তু গত বছরের বার্ষিক রিপোর্টে আরবিআই বলে নেপাল নিষিদ্ধ ভারতীয় নোটগুলি ফেরত দেয়নি। তাই বিনিময়ের প্রশ্ন নেই।  

সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্য মনে করছে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত বদলের কারণটাও ২০১৭-১৮-র আরবিআই-এর রিপোর্টেই রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাতিল নোটের ৯৯.৩ শতাংশ ফের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। অর্থাৎ, কালো টাকার কারবারিদের ধাক্কা দেওয়ার যে লক্ষ্য নিয়ে নোট বাতিল করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় ভারত যদি নেপাল থেকে আরও নিষিদ্ধ নোট গ্রহণ করত তবে মোট ফেরত আসা বাতিল নোটের পরিমাণ আরও বাড়ত। সেই সময় সামনে ছিল ভারতের লোকসভা নির্বাচন। কাজেই মোদী সরকারের অস্বস্তি আরো বাড়ত। তাই আচমকাই মত বদলায় ভারত।

আর তাতেই এখনও ভারতের নিষিদ্ধ নোটের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে নেপাল। অনেক নেপালিরই বক্তব্য নেহাত দুর্বল প্রতিবেশি, তাই সহজেই নেপালের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ভারত।