সংক্ষিপ্ত


করোনাভাইরাসের পর থেকে জাগছে চিনা অর্থনীতি
স্বাভাবিকের পথে গোটা দেশ
সমস্যা রয়েছে রফতানি নিয়ে 
কাজ হারিয়েছেন প্রচুর মানুষ
 

গত ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিলেন চিনের উহানে। তারপর থেকে এই ভাইরাস চিন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে গোটা বিশ্বই লকডাইনের পথে হেঁটেছে। স্তব্ধ হয়ে গেছে অর্থনীতির চাকাও। সেই অবস্থায় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ড্রাগন দেশের অর্থনীতি। একটি সমীক্ষা বলছে করোনাভাইরাসের শুরুর প্রথম দিক থেকেই চিন  প্রথম বিহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর কারখানাগুলি চালু হয়েছে। কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে দোকানপাটের অবস্থা। আর তাতেই দেখা গেছে গত তিন মাসে এই দেশটিতে বিকাশ হয়েছে ৩.২ শতাংশ। 

জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী আগের তুলনায় ৬.৮  শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।   জেপি মরগান অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের মার্সেল চাউ  সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলেছেন তাঁরা প্রান্তিক অঞ্চলে  ধারাবাহিক উন্নতি দেখার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। 

ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়েছিল। দেশের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টি রোগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মার্চ মাস থেকেই আর্থিক লকডাউনের ওপর জোর দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে ২০২০ সালে প্রথমার্ধে দেশের অর্থনীতি ধীরগতিতে ওপরে উঠছিল। 


অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কথায় সংক্রমণ রুখতে চিন একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিউনিস্ট পার্টিরএই কার্যকরী সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে চাঙ্গা করতে সক্ষম করেছে। বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ অর্থনীতির তুলনায় চিনের অর্থনীতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে। লকডাউনের সময় চিন শহরের ৬০ মিলিয়ন মানুষকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সবরকম ব্যবসা বাণিজ্য ও যাতায়াত। যা পরবর্তীকালে এশিয়া ও ইউরোপের অনেক দেশই এই নীতি গ্রহণ করেছিল। 


তবে এই মুহূর্তে উৎপাদন ও অন্যান্য শিল্প প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এসেছে। তবে কাজের জায়গা এখনও আগের মত স্বাভাবিক হয়নি। তাই পাশাপাশি সিনেমা ও অন্যান্য ব্যবসা এখনও বন্ধ রয়েছে চিনে। পিএনসি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস গ্রুপের বিল অ্যাডামস বলেছেন মহামারী জয়ী ও পারাজিত তৈরি করেছে। উৎপাদন আগের মত অবস্থায় আনতে চিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। 

এক অর্থনৈতিক বিশ্লেষকের কাছে বেসরকারি কাজের জায়গায় প্রভাব বেশি পড়েছে। সব মিলিয়ে ১৩০ মিনিয়ন মানুষ সাময়িকভাবে কাজ হারিয়েছেন। যারমধ্যে শহরের ৩০ শতাংশ মানুষ রয়েছে। তবে ২৫ মিলিয়ন মানুষ আর কোনও দিন কাজ ফিরে পাবে না বলেই মনে করেছে সমমীক্ষকরা।  তবে পরিস্থিতি স্বাবাবিক করতে ৯ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দিয়ে ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে জিংপিং প্রশাসন। 

গত মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৯ দিন চিনে নতুনভাবে করোনা সংক্রমণ ছড়ায়নি। আর সেই কথা মাথায় রেখেই দেশীয় পর্যটনের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। পর্যটন স্থানগুলিতে ৩০ -৫০ শতাংশ পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে। 

জুন মাসের শেষে কারখানার আউটপুট ৪.৪ শতাংশ বেড়েছে। স্মার্টফোন, জুতো খেলনা ও অন্যান্য পণ্যগুলির চাহিদাও বাড়ছে। খুচরো বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে ৩.৯ শতাংশ। তবে অনলাইনে খুচরো বিক্রয় আগের তুলনায় ১৪.৪ শতাংশ বেড়েছে। 


একটি হিসেব বলছে আমদানি ও রফতানি উভয়ই বেড়েছে চিনে। শুল্ক যুদ্ধের পর আমেরিকার পণ্য বিক্রিয় বড়লেও এবার আবার তা কিছুটা কমে গেছে। রফতানি নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কার কালো মেঘ দেখা দিয়েছে চিনে। কারণ আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ চিনা পণ্য বিক্রয়ের ওপর বিধিনিষেধ চাপাতে চলেছে। যা কর্মসংস্থানের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্য, প্রযুক্তির প্রাশাপাশি হংকং-এর বিরোধ নিয়েও কিছুটা সমস্যায় রয়েছে চিন। যার প্রভাব ড্রাগন দেশের অর্থনীতিতে পড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।