সংক্ষিপ্ত

ভারত মহাসাগরে চিনা সাবমেরিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ভারত সাবমেরিন হান্টার P-8I বিমান মোতায়েন করেছে। এই বিমানগুলি অ্যান্টি-সাবমেরিন এবং অ্যান্টি-সারফেস যুদ্ধ চালাতে সক্ষম। দীর্ঘ দূরত্বের সামুদ্রিক টহলের কারণে এটি সমগ্র ভারত মহাসাগরের উপর কড়া নজর রাখতে পারে।

এবার ভারত মহাসাগরে চিনকে টেক্কা ভারতের। ভারতীয় নৌবাহিনীর টহলদারি বিমান P8I পৌঁছে গিয়েছে সেশেলসে। এই বিমানটি সেশেলস সরকারের অনুরোধে তাদের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে টহল দেবে। ভারত ও সেশেলসের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অনেকটাই মজবুত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা সেজন্যই সেশেলস বিনা দ্বিধায় চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতের সাহায্য নিয়েছে। চিন ভারত মহাসাগরের দেশগুলোকে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে চলেছে। সেই পরিস্থিতিতে ভারত সময়ে সময়ে সেশেলসকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্যও দিয়েছে।

করোনার সময় ভারত মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপ দেশটিকে কোভিড ভ্যাকসিনের একটি বড় চালান উপহার দিয়েছে নয়াদিল্লি। এছাড়াও, ভারত সেশেলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের একটি নতুন ভবন, সেশেলস কোস্টগার্ডের জন্য একটি দ্রুত টহল নৌকা, এক মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র  উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করেছে।

স্ট্র্যাটেজিগত অবস্থানের জন্য সেশেলস গুরুত্বপূর্ণ

সেশেলস কৌশলগতভাবে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এই অঞ্চল দিয়ে যায়। আফ্রিকার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে, পশ্চিমে সেশেলস থেকে জলদস্যুদের একটি বড় হুমকিও রয়েছে। এমতাবস্থায় সেশেলসকে প্রধান ঘাঁটি বানিয়ে এখান থেকে সামরিক অভিযানও চালানো যেতে পারে। এছাড়া চিনের জিবুতি সামরিক ঘাঁটির পথেও সেশেলস অবস্থিত। এমতাবস্থায় জিবুতি দিয়ে যাওয়া চিনা যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনকেও এখান থেকে নজরদারি করা যাবে।

আরও পড়ুন - আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ১৭০০ কোটির চুক্তিতে ব্রহ্মস পাচ্ছে নৌবাহিনী

এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন কি?
ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (UNCLOS) অনুসারে, একটি এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা ইকোনমিক এক্সক্লুসিভ জোন হল স্থল সীমানা থেকে আলাদা একটি সামুদ্রিক অঞ্চল। এ ক্ষেত্রে বিশেষ আইন প্রযোজ্য হবে। এতে উপকূলীয় দেশ আইন প্রয়োগের অধিকার পাবে। এই পরিসীমা সাধারণত ৩-১২ নটিক্যাল মাইল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত প্রসারিত হয়। একটি নটিক্যাল মাইলে ১.৮৫২ কিলোমিটার আছে। এই ক্ষেত্রে, ২০০ নটিক্যাল মাইল মানে ৩৭০.৪ কিমি দূরত্ব। এই এলাকায় মাছ ধরা, তেল-গ্যাস উত্তোলন বা অন্যান্য উপায়ে অর্থনৈতিক শোষণ করার অধিকার সংশ্লিষ্ট দেশ পেয়েছে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর P8I কতটা বিপজ্জনক?

ভারত মহাসাগরে চিনা সাবমেরিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ভারত সাবমেরিন হান্টার P-8I বিমান মোতায়েন করেছে। এই বিমানগুলি অ্যান্টি-সাবমেরিন এবং অ্যান্টি-সারফেস যুদ্ধ চালাতে সক্ষম। দীর্ঘ দূরত্বের সামুদ্রিক টহলের কারণে এটি সমগ্র ভারত মহাসাগরের উপর কড়া নজর রাখতে পারে। P8i এর অপারেটিং পরিসীমা ১২০০ নটিক্যাল মাইল। এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৯০৭ কিলোমিটার। রাডারে সজ্জিত এই বিমানটি গোয়েন্দা তথ্য এবং যেকোনো ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সক্ষম। এতে রয়েছে বিপজ্জনক হারপুন ব্লক-২ মিসাইল, এমকে-৫৪ কম ওজনের ডেস্ট্রয়ার।

আরও পড়ুন - দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা চূড়ান্ত, শত্রুর নিকেশে আরও এক ধাপ এগিয়ে ভারত

P8i বিমানও আক্রমণ করতে পারে
P8i বিমানগুলিও রকেট এবং গানপাউডার দিয়ে সজ্জিত। যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতি বুঝে তারা শত্রুর সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ আক্রমণ করতে পারে। এই বিমানগুলি আমেরিকান কোম্পানি বোয়িং দ্বারা তৈরি। তাদের প্রথম চুক্তিটি ২০০৯ সালে আমেরিকান কোম্পানি বোয়িং এর সাথে ২.১ বিলিয়ন ডলারে করা হয়েছিল, যাতে আটটি বিমান কেনা হয়েছিল। সম্প্রতি নৌ বহরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের তামিলনাড়ুর আরাককোনামের আইএনএস রাজালি নেভাল এয়ার স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন - ঔপনিবেশিকতার চিহ্ন থেকে মুক্তি, মোদীর হাত ধরে ভারতীয় নৌবাহিনী পেল নতুন পতাকা

মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য নির্মিত
এই বিমানটি প্রথম পরিকল্পনা করেছিল আমেরিকান নৌবাহিনী। পরবর্তী প্রজন্মের সামুদ্রিক নজরদারি বিমান তৈরির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জুন ২০০৪ সালে এটি বোয়িং-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রথম Poseidon-8A বিমানটি মার্চ ২০০৫ সালে ডিজাইন করা হয়েছিল। এর পরে, আমেরিকান নৌবাহিনী তার বহরে প্রায় ১১৭টি পসাইডন-8A বিমান অন্তর্ভুক্ত করে। পসেইডন-8এ অস্ট্রেলিয়ান সরকার ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে কিনেছিল। এই চুক্তিতে আরও ৪টি বিমান ৪ বিলিয়ন ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।