সংক্ষিপ্ত
সঙ্গম করলেই সেরে যাবে রোগ। একের পর এক মহিলাকে ধর্ষণের পর ধরা পড়লেন ইতালির (Italy) প্রৌঢ় ডাক্তার।
রোগীর যে রোগই হোক না কেন, তাঁর একটাই চিকিৎসা ছিল, ডাক্তারের সঙ্গে সেক্স করা। এভাবেই দিব্যি চালাচ্ছিলেন ৬০ বছরের প্রৌঢ় গাইনোকোলজিস্ট। কিন্তু, এবার একেবারে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলেন এক টেলিভিশন চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে। হোটেলের ঘরে রোগী-বেশী অভিনেত্রীর সঙ্গে অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাঁর সেই ছবি লাইভ টেলিভিশনে সম্প্রচারের পর অবশ্য তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই ঘটনার বিষয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে, আরও বড় সমস্যায় পড়তে পারেন তিনি। তবে তার আগেই এই ডাক্তারের দুষ্কর্মের কাহিনী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ইতালীর বারি নামের ছোট্ট শহরের ঘটনা।
৩৩ বছর বয়সী আনা মারিয়া বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও গর্ভবতী হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপরই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জিওভানি মিনিলো ওরফে 'ডাক্তার ম্যাজিক ফ্লুট'-এর পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ডাক্তার মিনিলো তাঁকে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস বা এইচপিভি (HPV) টেস্ট করতে দেন। টেস্টের রিপোর্ট নেতিবাচক আসার পরও, ডাক্তার তাঁকে বলেন, তাঁর দেবে ওই যৌন সংসর্গে সংক্রমিত ডিএনএ ভাইরাসের উপস্থিতির ইঙ্গিত রয়েছে। এর থেকে পরবর্তীকালে ক্যান্সারও হতে পারে। কীভাবে এর নিরাময় হবে? আনা মারিয়াকে চমকে দিয়ে ডাক্তার জানান, তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করলেই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। সঙ্গমের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্টও দিতে চান 'ডাক্তার ম্যাজিক ফ্লুট'।
এতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন আনা মারিয়া। তিনি, ওই ডাক্তারের বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেন। তবে, ডাক্তার মিনিলোর বিষয়ে তাঁর আগেই সন্দেহ হয়েছিল। কারণ, শুরু থেকেই তাঁর আচরণে পেশাদারিত্বের অভাব ছিল। তিনি অকারণে আনার স্তন স্পর্শ করেছিলেন এবং তাঁকে বলেছিলেন, তিনি ছোট স্তনের মহিলা শরীর পছন্দ করেন। তাই, ডাক্তারের সঙ্গে সেদিনকার পুরো কথোপকথনই তিনি মোবাইলে রেকর্ড করেছিলেন। আইনি পরামর্শ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তধর্মী সংবাদমাধ্যম 'লে ইয়েন'-এর সাংবাদিকদের হাতে সেই অডিও ক্লিপ তুলে দিয়েছিলেন। প্রোগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন।
'লে ইয়েন' ডাক্তার জিওভানি মিনিলোকে ফাঁদে ফেলার জন্য, একজন অভিনেত্রীকে নিয়োগ করেছিল। তিনি রোগীর বেশে ওই ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করেন। ডাক্তার মিনিলো ঠিক আগের কৌশলই প্রয়োগ করেন। তাঁকে জানান, তিনি একটি জটিল যৌন সংসর্গ জনিত ভাইরাস ঘটিত রোগে ভুগছেন এবং নিরাময়ের জন্য তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তাঁর মতো একজন টিকা নেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তিনিও অনাক্রম্যতা লাভ করবেন।
এরপরই ওই রোগী বেশী অভিনেত্রীকে তিনি এক হোটেলের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে ডাক্তার তাঁকে পোশাক খুলতে বলে, নিজেও বিবস্ত্র হতে শুরু করেন। আন্ডারকভার অভিনেত্রীটি তাঁকে কন্ডোম ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন, কন্ডোম থাকলে অ্যান্টিবডির সুবিধা পাওয়া যাবে না। এরপর ঘটনা আর এগোতে না দিয়ে ওই ঘরে ঢুকে পড়েন 'লে ইয়েন'এর এক সাংবাদিক। সেই সময় অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিলেন ডাক্তার মিনিলো। হতচকিত হয়ে গেলেও সে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে দাবি করেন, যা করতে যাচ্ছিলেন, পুরোটাই গবেষণার জন্য এই গবেষণা বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা করবে। তবে তাঁর এই কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর, অন্তত ১৫ জন মহিলা গোপনে তাঁর বিরুদ্ধে একইরকম অভিযোগ করেছেন।
আইনজীবীর মাধ্যমে, মিনিলো অবশ্য বলেছেন, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাফল্যের সঙ্গে তিনি শত শত নারীর চিকিৎসা করেছেন। তিনি একটি বিকল্প চিকিৎসার প্রস্তাব দিয়েছেন মাত্র, যা কাঙ্খিত ফল দিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেছেন, তিনি কোনও মহিলাকেই তাঁর সঙ্গে সঙ্গম করতে বাধ্য করেননি। তাঁদের সবসময় তিনি সঙ্গম করবেন কি করবেন না তা বেছে নেওয়ার 'সম্পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছেন। তবে, মহিলাদের ভাইরাসের ভয় দেখিয়ে, ক্যানসারের ভয় দেখিয়ে, সঙ্গমকেই একমাত্র চিকিৎসার পথ বলা - কতটা স্বাধীনতা দেওয়া, সেই প্রশ্ন উঠছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে।