সংক্ষিপ্ত

  • শ্রীলঙ্কায় জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রকাশ
  • বিরাট ব্যবধানে জয় রাজাপক্ষে ভাইয়েদের
  • করোনা মহামারীর মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কায়
  • বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে অভিনন্দন জানালেন মোদী

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসই সত্যি হলো। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। দেশের রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে ইতিমধ্যে নিজের ভাই মাহিন্দাকে জয়ী বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাঁর দল পডুজানা পেরামুনাকে (এসএলপিপি) সরকার গঠনের জন্য আহ্বানও জানানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন মাহিন্দা। এর ফলে শ্রীলঙ্কার শাসন ক্ষমতা একটি পরিবারের হাতেই থেকে গেল।

গত বছর  নভেম্বর মাসে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন মাহিন্দা। যদিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁর ছিল না। দেশের প্রেসিডেন্ট তথা মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া সংবিধান মুলতুবি করে মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানান। ফলে দেশে এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পরে সেই সাংবিধানিক সংকট কাটল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার  দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন জিতে সাংবিধানিক নিয়মে সরকার গঠন করতে চলেছেন মাহিন্দা।

পার্লামেন্টের ২২৫টি আসনের মধ্যে  মাহিন্দার দল একাই ১৪৫টি আসনে জয়ী হয়েছে। আরও পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছে এসএলপিপি-র জোট সঙ্গীরা। ফলে ১৫০টি আসন নিয়ে পার্লামেন্টে ঢুকবেন মহিন্দা।

গত বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে দেশের বিরোধীরা পেয়েছে ৫৪টি আসন। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমসিঙ্ঘে। গত নির্বাচনে বিক্রমসিঙ্ঘের দলের আসন ছিলো ১০৬। যা এবার নেমে এসেছে ১টিতে। একইভাবে গত নির্বাচনে ১৬ আসন পাওয়া তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স এবারের নির্বাচনে পেয়েছে ১০টি  আসন। অন্যদিকে নিহত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রণসিঙ্ঘে প্রেমদাসার ছেলে সাজিথের রাজনৈতিক দল পেয়েছে ৫৪টি আসন। সম্প্রতি রণিল বিক্রমসিঙ্ঘের দল ছেড়ে বেরিয়ে এসে সাজিথ এই দল গঠন করে।

করোনার কারণে দুইবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কার নির্বাচন। এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম। সেই সুযোগেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে শ্রীলঙ্কায়  হঠাৎ করে সিংহলী জাতীয়তাবাদ বেড়ে ওঠায় দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠী আপাতত কিছুটা শঙ্কায় রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করায় এবার হয়তো সংবিধান পরিবর্তনের দিকে হাঁটবেন রাজাপক্ষে গোষ্ঠী। যা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।

দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপক্ষে পরিবার। এর আগে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা। রাজাপক্ষে ভাইয়াদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হল ২০০৯ সালে দেশে থেকে  তামিল টাইগারদের ঘাঁটি ধ্বংস করা।

এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা মূলত নির্ভরশীল ট্যুরিজম ব্যবসার ওপর। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ট্যুরিজম ব্যবসায় বড় ধাক্কার কারণে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত।  

শ্রীলঙ্কার জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ পেতেই বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রনেতা হিসেবে মাহিন্দা রাজাপক্ষে-কে ফোন করে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদী। দু’দেশ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। তার উত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ট্যুইট করেন, ফোন করে অভিনন্দন জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। শ্রীলঙ্কার মানুষদের প্রবল সমর্থনের উপর ভর করে ভারতের সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলব। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্যে যে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক রয়েছে তা আরও দৃঢ় হবে। শ্রীলঙ্কার ভোটের দিকে নজর ছিল ভারতেরও। কারণ ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশীর মত শ্রীলঙ্কার উপরও প্রভাব বিস্তার করতে চাইঠে চিন। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় নানা ওষুধপত্র দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করেছে বেজিং। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বন্ধুত্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে ৪০ কোটি ডলার আর্তিক সাহায্য দিয়েছে দিল্লি।