সংক্ষিপ্ত
- নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির পদত্যাগের দাবি
- ওলির পদত্যাগ চাইছে শাসকদলের নেতারাই
- ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের জন্য ওলিকে দোষারোপ
- পরিস্থিতি সামলাতে ময়দানে নেমেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত হো ইয়ানকি
নেপালে প্রচণ্ড বিপারে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তুঙ্গে রয়েছে সেখানে ক্ষমতার লড়াই। সম্প্রতি ভারতের ভূখণ্ড দেশের ম্যাপে স্থান দিয়ে নতুন মানচিত্র সংসদে পাস করিয়ে নিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি। নেপালি প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে মনে করা হচ্ছিল বিরোধীরা চাপে পড়ে যাবে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। বরং শাসক দলের অন্দরেই প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
ওলি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চিনের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। দূরত্ব বারিয়েছেন এককালের বন্ধু ভারতের সঙ্গে। আর পুরনো প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করার জন্য শাসকদলের নেতারা এখন দোষারোপ করছেন ওলিকে। তাঁদের বক্তব্য, চিনের প্ররোচনায় পড়ে ভারতের বিরুদ্ধে যেসব মন্তব্য ওলি করেছেন তা রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও ভুল।
জানা যাচ্ছে, এককালের বন্ধু থেকে বর্তমানের বিক্ষুব্ধ শিবিরের প্রধান সেনাপতি পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডের সঙ্গে কিছুতেই বনিবনা হচ্ছে না ওলির। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে ইস্তফা দিতে হলে শাসক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিকে দু’টুকরো করে ফেলার হুঁশিয়ারিও দিয়ে ফেলেছেন ওলি। ওই অবস্থায় রবিবার ওলির সঙ্গে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সহ সভাপতি পুষ্প কমল দাহালের রবিবার একটি বৈঠকও হয়। তবে তাতে মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। সোমবার ফের পরবর্তী বৈঠকে বসার কথা থাকলেও শেষ মুহুর্তে তা পিছিয়ে যায়। আর এই ফাঁকেই নেপালে ওলির কাঠপুতুল সরকারকে বাঁচাতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেজিং প্রশাসন। সূত্রের খবর নেপালের টালনমাটাল অবস্থায় নিয়ে সোমবার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বৈঠকও করেন সেদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত।
নেপালের রাজনীতিতে এহেন টালমাটাল অবস্থায় দলের ভাঙন বাঁচিয়ে ওলিকে পদত্যাগে রাজি করানোই তাঁর লক্ষ্য বলে আগেই জানিয়েছিলেন প্রাক্তন মাওবাদী নেতা পুষ্ককমল দাহাল বা প্রচণ্ড। তবে কিছুতেই গদি ছাড়তে রাজি নন ওলি। এদিকে স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই ওলির ইস্তফার দাবিতে অনড়। কিন্তু বৈঠকে কোনও রফাসূত্র না মেলায় ৮ জুলাই পর্যন্ত সেই বৈঠক মুলতবি রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা ঠুকেছে শেষ পেরেক, সংকুচিত হবে দেশের অর্থনীতি, এবার মেনে নিল মোদী সরকার
এর আগে ৩০ জুন স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন বেশিরভাগ সদস্য। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর সরকারের 'ব্যর্থতা' এবং বিশেষত ভারত সরকার 'তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে' এমন প্রকাশ্য বিবৃতির পর, দলের অভ্যন্তরে ও বাইরে তীব্র সমালোচিত হন প্রধানমন্ত্রী ওলি।
তবে এই আবহে 'বন্ধু' ওলির গদি বাঁচাতে উঠে পড়ে লেগেছে বেজিং। নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এবিষয়ে গোপন বৈঠক করে সমস্যা মিটিয়ে নিতে চাইছে চিন। শোনা যাচ্ছে সেই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ওলির সাংবাদিক উপদেষ্টা সূর্য থাপা জানান, এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বোঝার জন্য আরও সময় চেয়েছে শাসকদল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব। নেপালের প্রেসিডেন্ট বৈদ্য দেবী ভান্ডারির সঙ্গে দেখা করেছেন নেপাল চিনের রাষ্ট্রদূত। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, নেপালের রাজনৈতিক সমস্যায় মাথা গলানোর চেষ্টা করছেন চিনা রাষ্ট্রদূত হো ইয়ানকি। মনে করা হচ্ছে ভারতের ভূখণ্ড দেশের ম্যাপে স্থান দেওয়ার পেছনেও রয়েছেন এই ইয়ানকি।
এদিকে শুধু বেজিং নয়, কেপি ওলির সময়কালে নেপাল পাকিস্তানেরও ঘনিষ্ট হয়েছে। এদিকে কালাপানি সহ একাধিক ইস্যুতে বন্ধু ভারতের অনেকটাই দূরত্ব বাড়িয়েছে বর্তমান সরকার।