সংক্ষিপ্ত
২১ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে হত্তয়া চারটি বিমান দ্বারা একের পর এক হানা হয়েছিল আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা। আল কায়দার নেতা এর পেছনে থাকলেও মাস্টারমাইন্ড ছিল অন্য কেউ, তিনি হলেন খালিদ শেখ মোহাম্মদ। আল-কায়দার নেতা লাদেন সহ তার উত্তরসূরীকে হত্যা করা হলেও খালিদের শাস্তি নিয়ে জল্পনা রয়েই গেছে।
আজ থেকে ঠিক ২১ বছর আগে, গাঁয়ে কাঁটা দেওয়া সেই ঘটনা, সালটা তখন ২০০১, ১১ই সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। সন্ত্রাসবাদ ইতিহাসে এমন ভয়াবহ কাহিনি প্রথম। একের পর এক আল কায়দার আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা। নিউওয়ার্কে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষের খন্ড খন্ড দেহ, রক্তে ভেজা রাস্তাঘাট, আগুন ও কালো ধোঁয়ার মধ্যেই পড়েছিল বিমানের ধ্বংসস্তূপ গুলি। আমেরিকায় চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশস্পর্শী ভবনে, যে ঘটনায় নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্ব চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়।
দুটি বিমান বিধ্বস্ত করা হয় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে।প্রথম বিমানটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলে। সময় ছিল সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় সকাল ৯টা ৩ মিনিটে।দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায় এবং ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে যায়। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার ঝড় তুলে মাটিতে ভেঙে গুঁড়িয়ে পড়ে।
তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে, স্থানীয় সময় তখন সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে।এরপর, সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভেনিয়ার এক মাঠে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।
এসব হামলায় সব মিলিয়ে মারা গিয়েছিল ২,৯৭৭ জন। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের লোক।হতাহতের মধ্যে ৭৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষ ছিলেন।নিউইয়র্ক শহরে যারা প্রথম ঘটনাস্থলে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় দৌড়ে যান, তাদের মধ্যে মারা যান ৪৪১ জন।
তবে এই মর্মান্তিক ঘটনার পেছনে যারা ছিল, তারা কারা? তাদের কি আটক করা গিয়েছিল? কি পরিণতি হয়েছিল তাঁদের?
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এই আত্মঘাতী হামলার সাথে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি জড়িত ছিল তার নাম ওসামা বিন লাদেন। লাদেনের এই নাম কারোরই অজানা নয়। সেসময় তিনি ছিলেন আল কায়দার নেতা। কিন্তু এই হামলার ব্যাপারে তদন্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিশন সেই '৯/১১ কমিশনের' মতে এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ অন্যকারোর।।সেই ব্যক্তি যিনি বিমান দিয়ে এভাবে হামলার ধারণা দিয়েছিলেন এবং সেটা আল-কায়দার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি হলেন খালিদ শেখ মোহাম্মদ, যিনি সংক্ষেপে কেএসএম নামে পরিচিত, তিনি ছিলেন হামলার মূল পরিকল্পনাকারী।যিনি বিনা বিচারে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন, যখন ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন এবং এই বছরের শুরুতেই তার উত্তরসূরি আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়। মার্কিন মাটিতে চারটি সমন্বিত আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার ২১ বছর পর যা প্রায় ৩০০০ লোককে হত্যা করেছিল, হামলার প্রধান স্থপতি বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে৷ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদণ্ড পাবেন।"আমি ৯/১১ অপারেশনের জন্য দায়ী ছিলাম, A থেকে Z পর্যন্ত,” তিনি স্বীকার করলেও দেওয়া হয়নি এখনও শাস্তি। ২০০১সালের সেপ্টেম্বরে হামলার পর থেকে মাত্র ১৮ মাসে খালিদ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে ধরা পড়লেও, 2 দশকেরও বেশি সময় ধরে তার বিচার হয়নি। তিনি এবং তার সহ-ষড়যন্ত্রকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো একটি বন্দী কেন্দ্রে বন্দী রয়েছেন। সামরিক ট্রাইব্যুনাল তাদের বিচার করবে কিন্তু শুনানি সীমাহীন বিলম্বিত হয়।গুয়ান্তানামো বে'র বন্দীশিবিরে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে আটক করে তাকে রাখা হলেও এখনও তিনি বিচারের অপেক্ষায় আছেন।