সংক্ষিপ্ত
'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময় ' কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর কবিতার লাইনের মতই রিপোর্ট পেশ করল ইউনাইটেড নেশন। রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্ট বলছে দিনের হিসেবে না খাওয়া মানুষের সংখ্যা গত এক বছরে সর্বচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে।
'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময় ' কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর কবিতার লাইনের মতই রিপোর্ট পেশ করল ইউনাইটেড নেশন। রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্ট বলছে দিনের হিসেবে না খাওয়া মানুষের সংখ্যা গত এক বছরে সর্বচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে। তারফলে নতুন করে আরও বড় সমস্যার সামনে পড়তে চলেছে বিশ্বাবসী। রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে ৫৩টি দেশের প্রায় ১৯৩ মিলিয়ন মানুষ ২০২১ সালে আধপেটে খেয়ে দিনগুজরান করেছে অর্থাৎ কোটি কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছিল। রিপোর্টে এরজন্য দায়ি করা হয়েছে, সংঘর্ষ, আবহাওয়ার চমর অবস্থা, করোনাভাইরাসের মহামারি। তিনটি একত্রে বিষাক্ত ট্রিপল সমন্বয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাষ্ট্রসংঘ।
রাষ্ট্র সংঘ বলেছেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাদ্যহীন মানুষের মোট সংখ্যা গত বছর ৪ কোটি বেড়েছে। যা কয়েক বছর ধরে বার্ষিক বৃদ্ধির একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা নিশ্চিত করে। রাষ্ট্র সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে তৈরি খাদ্য সংকটের বিশ্বব্যাপী এই প্রতিবেদনে এই চরম আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আফগানিস্তান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া , দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। এই দেশগুলিতেই সবথেকে বেশি মানুষ আধপেটে খেয়ে রয়েছে। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী খরা, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ও ক্রমাগত হিংসার কারণে ২০২২ সালে সোমালিয়ার পরিস্থিতি ছিল বিশ্বের সবথেকে খারাপ। এই দেশে অধিকাংশ মানুষই তাঁর চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার পায়নি। তবে আগামী দিনও খুব একটা মসৃণ নয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে একাধিক কারণে এই দেশের ৬০ লক্ষ মানুষকে তীব্র খাদ্য সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, 'আজ যদি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য আর কোনও কাজ না করা হয় তাহলে ক্ষুধা ও হারানো জীবিকার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ধ্বংসের মুখোমুখী দাঁড়াতে। তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।' এই পরিস্থিতির মুখোমুখি যাতে দাঁড়াতে না হয় তারজন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ইউক্রেন যুদ্ধ সোমালিয়সহ বেশ কয়েকটি দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সমস্ত দেশগুলি গম, সার ও অন্যান্য খাদ্যের সরবরাহের জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ডাব্লিউঅফপি-র প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, রাষ্ট্র সংঘের খাজ্য সংস্থার খতিয়ে দেখেছে। তাতে স্পষ্ট যে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখনও পর্যন্ত খাদ্য ও জ্বালানির দাম ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের সামনে সংকট তৈরি করেছে বা খারাপ পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ৪৭ মিলিয়ন মানুষের সামনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধের আগে গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছিল। সেই সময় মানুষের আয় হ্রাস পেয়েছে , আর অন্যদিকে খাবারের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন এই সংকট একটি আগুন। যা আগামী দিনে আরও অনেক কিছুই গ্রাস করে নেবে। যুদ্ধের কারণ ফসলের দাম যেমন বাড়বে তেমনই পাল্লা দিয়ে বাড়বে তেলের দাম। রিপোর্টে বলা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল আর যাইহোকনা কেন, একাধিক দেশে খাদ্য সংকট আরও বাড়বে। যুদ্ধের পরিণতি কখনই ভালো হবে না বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ।