সংক্ষিপ্ত

যুগ যুগ ধরে মানুষ অমরত্ব খুঁজেছে।

এবার সেই সন্ধান দিচ্ছে এক রুশ সংস্থা।

খরচ পড়বে ২৫ লক্ষের মতো।

তবে সামান্য অপেক্ষা করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য।

 

অমরত্ব। এ এমন একটা জিনিস, যা যুগে যুগে মানুষ খুঁজে এসেছে। রূপকথার কাহিনী থেকে কল্পবিজ্ঞান নির্ভর সিনেমা - মানুষের কল্পনায় বারবার সুড়সুড়ি দিয়েছে এই বিষয়। প্রাচীন সাধু-সন্ন্য়াসী থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞানী, অনেকেই খুঁজে চলেছেন কীভাবে অমর হওয়া যায়। তবে এবার অমরত্বের সন্ধান দিচ্ছে এক রুশ সংস্থা। খরচও বিশেষ পড়বে না, মাত্র ২৫ লক্ষ টাকা (চিকিৎসার যা খরচ বেড়েছে, তাতে অমর হতে এ আর এমন কী)।

তবে এখন এখনই অমর হওয়ার সাধ মিটবে না। বস্তুত কোনওদদিনই মিটবে কিনা সন্দেহ। তবে বিজ্ঞানের উন্নতি যেভাবে ঘটছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে মানুষ এই বিষয়ে সাফল্য পাবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ যাঁদের মৃত্যু ঘটছে, তাঁরা ভবিষ্যতে কীভাবে অমর হবেন? সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছে রুশ সংস্থা 'ক্রায়োরুশ'। মানব-মস্তিষ্ক থেকে মানবদেহ, তারা ক্রায়োজেনিক সিলিন্ডারে সংরক্ষণ করছে, যাতে সেগুলিতে পচন না ধরে।

আলেক্সেই ভোরোনেকোভ-এর সঙ্গে তাঁর মায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সম্প্রতি ৭০ বছর বয়সে তাঁর মা প্রয়াত হন। তিনি মায়ের মস্তিষ্ক ক্রায়োরুশ সংস্থার জিম্মায় রেখে দিয়েছেন। শুধু ভোরোনেকোভ-এর মায়ের মস্তিষ্কই নয়, ক্রায়োরুশ-এর ওই কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের ৭১ জনের মস্তিষ্ক হিমাঙ্কের ১৯৬ ডিগ্রি নিচের তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দিন দিন এই সংখ্যাটা বাড়ছে।

ভোরোনেকোভ ক্রায়োরুশ-এর সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মস্তিষ্ক সংরক্ষণের জন্যও চুক্তি করেছেন। তাঁর আশা ভবিষ্যতে এমন একদিন আসবে যেদিন মৃত মস্তিষ্ককে জীবিত করতে পারবে মানুষ। কৃত্রিম দেহ বানিয়ে সেকানে সেই মস্তিষ্ক স্থাপনও করা যাবে। সেইদিন আবার তিনি মায়ের সঙ্গে মিলিত হবেন বলে আশা করেন। ভোরোনেকোভ-এর মতো ২০টি দেশের বেশ কিছু নাগরিক এইভাবে চুক্তি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

তবে শুধু মস্তিষ্কই নয়, পুরো দেহও সংরক্ষণের সুবিধা আছে ক্রায়োরুশ-এ। পুরো দেহের ক্ষেত্রে খরচ পরে ভারতীয় মুদ্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মতো। আর, শুধু মস্তিষ্ক রাখতে গেলে খরচ পড়বে ১০ লক্ষ টাকা। তবে এই হিসেবটা রুশদের জন্য। বিদেশীদের সামান্য বেশি খসাতে হবে।

স্বাভাবিকভাবেই, এই সংস্তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মহল থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। রুশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স-এর সিউডোসায়েন্স কমিশনের প্রধান এভগেনেই আলেক্সান্দ্রোভ বলেছেন ক্রায়োরুশ সংস্থার কাজের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মানুষের পুনর্জীবনের আশা-কে সুড়সুড়ি দিয়ে, অমরত্বের ইচ্ছাকে উসকে দিয়ে অর্থ কামানোর সংস্থা বলা হচ্ছে ক্রায়োরুশ-কে।

২০০৫ সালে এই সংস্থার যাত্রা শুরু করেছিল। সংস্থার প্রধান ভ্যালেরিয়া উদালোভা নিজেও ২০০৮ সালে তাঁর কুকুরের মৃত্যুর পর তার দেহ সংরক্ষণ করেছেন। তাঁর দাবি, এখানে য়াঁরা প্রিয়জনদের দেহ বা মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করছেন, তাঁরা আসলে প্রিয়জনদের কতটা ভালোবাসেন তারই পরিচয় দিচ্ছেন। আত্মীয়ের মৃত্যু হলে কেউ তার স্মরণে খুব ভালো সমাধিস্তম্ভ বানায়, কেউ ছবি দিয়ে অ্যালবাম তৈরি করে রাখে, সেইরকমই এঁরা দেহ বা মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে রাখেছেন। একদিন আবার তাঁরা বেঁচে উঠবেন এই আশাটুকু নিয়ে।