সংক্ষিপ্ত
মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান চালাচ্ছে নাসার রোভার
একই সময়ে মঙ্গলে বাসস্থান গড়ার দিকে আরও অগ্রগতি
সম্ভাব্য সমাধান মিলল অক্সিজেনের অভাবের সমস্যার
খোঁজ মিলল এক অক্সিজেন প্রস্তুতকারী ব্যাকটেরিয়ার
সদ্যই মঙ্গল গ্রহে সফলভাবে অবতরণ করেছে নাসা (NASA)র 'মার্স ২০২০ পার্সিভেরেন্স' (Mars 2020 Perseverance) রোভার'টি। মঙ্গলের মাটিতে 'জাজেরো ক্রেটার' (Jezero Crater)-এ তারা প্রাণের সন্ধান করছে। এই অঞ্চলটি একসময়ে একটি প্রাচীন নদী ব-দ্বীপ ছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই ,সেখানেই চলছে জীবাশ্মের অনুসন্ধান। তবে, ঠিক একই সময়ে পৃথিবীতে বসেই মঙ্গলে বাসস্থান গড়ার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন একদল বিজ্ঞানী। মঙ্গলের পরিবেশে প্রাণের জন্য অত্যাবশকীয় অক্সিজেন নেই। সেই অক্সিজেনের স্থিতিশীল উৎসের সন্ধান এবার পাওয়া গেল, এমনটাই দাবি করছেন, ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী।
বর্তমানে বেশ কয়েকটি দেশ এবং কর্পোরেট সংস্থা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা লাল গ্রহে বাসস্থান তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে এই গ্রহের পরিবেশ প্রাণধারণের পক্ষে অনুকূল নয়। তবে ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যাল (University of Bremen)-এর গবেষকরা সম্প্রতি ইবেইন ম্যাগাজিন ডট কমে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন, তাঁরা এমন এক পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা মঙ্গলে মঙ্গলে প্রাণ ধারণের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে এবং একটি নির্দিষ্ট ধরণের ব্যাকটেরিয়া বিকশিত হতে সহায়তা করবে। বস্তুত গবেষণাগারে মঙ্গল গ্রহের মতো পরিবেশ তৈরি করে তাঁরা একপ্রকার সায়ানোব্যাকটিরিয়া (Cyanobacteria) প্রস্তুত করেছেন, যা মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠকে বাসযোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ডাক্তার সাইপ্রিয়ান ভার্সু (Dr Cyprian Versu)। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গল গ্রহে বায়ুর চাপ কম। বাতাসে অক্সিজেন নেই। কিন্তু, এই সায়ানোব্যাকটেরিয়া মঙ্গলের পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন নিয়ে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে নিজেদের পুষ্টি তৈরি করতে পারে। আর এই সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য হিসাবে অক্সিজেন তৈরি হয়। অর্থাৎ সোজা কথায়, সায়ানোব্যাকটিরিয়া কার্বন এবং নাইট্রোজেন শোষণ করে অক্সিজেন তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া সাধনের জন্য এই বিজ্ঞানীরা বায়োরিয়েক্টর নামে একটি পরমাণু তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, আজ থেকে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন বছর (২৪০ কোটি বছর) আগে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের চিহ্ন হিসাবে এই সায়ানোব্যাকটিরিয়ার প্রজাতিগুলিরই আবির্ভাব ঘটেছিল বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই সময় হঠাৎ করেই পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে সায়ানোব্যাকটিরিয়া প্রজাতির উত্থান ঘটেছিল। এর ফলে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হয়েছিল, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিষাক্ত গ্যাসগুলির জায়গা নিয়েছিল। আর তার ফলেই পৃথিবীতে অন্যান্য জটিল গঠনের প্রাণীর উদ্ভব ঘটেছিল। গবেষকদের আশা, সেই একই ব্যাকটিরিয়া প্রজাতিকে, মঙ্গল গ্রহের মতো অক্সিজেনহীন গ্রহের পরিবেশেও অক্সিজেন তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।