সংক্ষিপ্ত

নারকীয় ঘটনার সাক্ষী ছবি-কবিতার শহর প্যারিস

প্রকাশ্য রাস্তায় মাথা কেটে নেওয়া হল এক শিক্ষকের

ক্লাসে হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ

পুলিশের গুলিতে খতম সন্দেহভাজন হত্য়াকারী

 

ফের শার্লে হেদবো, ফের ইসলামি নবী হজরত মহম্মদের কার্টুন নিয়ে বিতর্ক। আর তার জেরে ফের এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সাক্ষী থাকল ফরাসী রাজধানী প্যারিস। জানা গিয়েছে ক্লাসরুমে বাক স্বাধীনতার বিষয়ে পড়ানোর সময়ে শার্লে হেদবো পত্রিকায় প্রকাশিত হজরত মহম্মদের কিছু ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন ওই ভুগোল-ইতিহাসের শিক্ষক। আর তার জেরেই শুক্রবার প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁর মাথা কেটে নেয় এক সন্ত্রাসবাদী। পররে অবশ্য সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে ফরাসী পুলিশ।

জানা গিয়েছে এই বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে প্যারিসের উপকন্ঠে কনফ্ল্যাশনস-স্যান্তে-অনারিন শহরে। সেখানকার এক মিডল স্কুলে প্রায় দিন দশেক আগে কলাসরুমনে সার্লে হেদবো পত্রিকায় প্রকাশিত হজরত মহম্মদের কয়েকটি ব্যঙ্গচিত্র দেখিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। উদ্দেশ্য ছিল ওই ব্যঙ্গচিত্রগুলি নিয়ে বাক স্বাধীনতার বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটি বিতর্কমূলক আলোচনা শুরু করা। এমনকী যাতে কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত না লাগে, তার জন্য মুসলিম শিক্ষার্থীদের ওই ক্লাস না করার অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল।

তারপরেও শিক্ষকের ওই পদক্ষেপ নিয়ে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এক শিক্ষার্থীর বাবা-মা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও-ও তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায়. প্রকাশ করেছিলেন। সেই ভিডিও-র নিয়ে অবশ্য বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের মুক্ত মনের প্রশংসাও করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও ওই ইতিহাসের শিক্ষককে মূল্য চোকাতে হল জীববন দিয়ে।

তবে, হত্যাকারীর কোনও সন্তান ওই স্কুলে পড়ে এমনটা নয়। তার সম্পূর্ণ পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ না করা হলেও, ফরাসি গণমাধ্যমের দাবি সে এক ১৮ বছর বয়সী চেচেন জঙ্গি। মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেছিল। একটি বড় মাপের ছুরি ও একটি এয়ারগান নিয়ে সে ওই নৃশংস হামলা চালায়। হত্য়ার পরই পুলিশ তাকে তাজড়া করেছিল। অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পনের জন্য বলেছিল। কিন্তু, সে ধরা না দিয়ে পালাতে যায়। সেই সময়ই তাকে পিছন থেকে গুলি করে খতম করে ফরাসী পুলিশ। শিক্ষক হত্যার স্থল থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই লুটিয়ে পড়ে সে। তার সঙ্গে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সরাসরি যোগ ছিল কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে।  

বস্তুত ১৯৯০ ও ২০০০ এর দশকের শুরুতে চেচনিয়ার ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল রুশ সেনাবাহিনী। তারপর অনেক চেচেন জঙ্গির জন্যই দেশের দরজা খুলে দিয়েছিল ফ্রান্স। এখন ফ্রান্সের চারদিকে সংখ্য চেচেন সম্প্রদায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ফ্রান্সের মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ, যা পশ্চিম ইউরোপের সদেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। ইসলাম সেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মও বটে।

মজার বিষয় হল ফ্রান্সে এটি বলা যেতে পারে ইসলামি চরমপন্থীদের দ্বিতীয় সন্ত্রাসবাদী হামলা। প্রথমটি ঘটেছিল ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে, শার্লে হেদবো পত্রিকার সদর দপ্তরে। নিউজরুমে ঢুকে নিপর্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেইবার ক্ষোভের উৎপত্তি ঘটেছিল এই ফরাসী ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকায় মহম্মদের ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ থেকেই। সেই ছবিগুলিই ফের এই নিরপরাধ দক্ষ শিক্ষকের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠল।