সংক্ষিপ্ত
সাধারণত বিমানের টিকিট কাটা হয় অনলাইনে। কিন্তু, এই বিমান অনলাইনে খুঁজেও পাওয়া সম্ভব হয় না। ওয়েবসাইট না থাকায় কায়রো থেকে তেল আবিব যাওয়ার সরাসরি এই বিমান খুঁজে পেতেন না অনেকেই।
রীতিমতো টিকিট কেটে বিমানে চড়ছেন যাত্রীরা। এমনকী, বিমানে চেপে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়িও দিচ্ছেন। কিন্তু, কেউ টেরই পাচ্ছেন না। মিশরের কায়রো থেকে ইজরায়েলের তেল আবিবের মধ্যে এভাবেই গোপনে ৩৯ বছর ধরে যোগাযোগ রেখে চলেছে একটি বিমান।
আমেরিকার হস্তক্ষেপে ১৯৭৯ সালে ইজরায়েল এবং মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির একটি শর্ত ছিল, দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করতে হবে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ১৯৮২ সালে এয়ার সিনাই তৈরি করে মিশর। এর মাধ্যমে মিশরের কায়রো এবং ইজরায়েলের তেল আবিবের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং পরবর্তী কালে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলে রাজনৈতিক চাপ পড়তে শুরু করে মিশরের উপর। আর সেই চুক্তির পরই একজোট হয় বাকি সব আরব দেশগুলি। বয়কট করা হয় মিশরকে। তবে শুধু দেশের বাইরেই নয়। দেশের ভিতরেও এনিয়ে অনেকের মনেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। এই টানাপোড়েনের মাঝে অবশেষে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই বিমান পরিষেবা। তবে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়াতেও তৈরি হয়েছিল সমস্যা। কারণ শান্তি চুক্তির কথা মাথায় রাখতে হয়েছিল মিশরকে। আর সেই চুক্তির শর্ত যাতে না ভাঙে, তার জন্য কার্যত লুকিয়ে এই রুটে বিমান চালাতে শুরু করে মিশর।
তারপরই এয়ার সিনাই সংস্থা তৈরি করে মিশর। আগে এই রুটে ইজিপ্টএয়ার নামে বিমান চলাচল করত। নাম পরিবর্তন হলেও ইজিপ্টএয়ারে পাইলট, বিমান ও বিমানসেবিকাদের নিয়েই উড়ান শুরু করে সিনাই। কাউকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি। আর এই গোপনীয়তা যাতে অটুট থাকে তার জন্য বিমানের গায়ে লোগোও তুলে দেওয়া হয়। সংস্থার কোনও ওয়েবসাইটও ছিল না। ফলে বিমানের টিকিট কাটার সময় সমস্যায় পড়তেন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন- জুম কলে ব্যস্ত মা, পিছন থেকে সটানে গুলি চালিয়ে দিল ছোট্ট শিশু, আমেরিকার ঘটনা শিউড়ে দেবে
সাধারণত বিমানের টিকিট কাটা হয় অনলাইনে। কিন্তু, এই বিমান অনলাইনে খুঁজেও পাওয়া সম্ভব হয় না। ওয়েবসাইট না থাকায় কায়রো থেকে তেল আবিব যাওয়ার সরাসরি এই বিমান খুঁজে পেতেন না অনেকেই। তবে ঘুরপথে তেল আবিব যাওয়ার একাধিক বিমানের খোঁজ পাওয়া যেত। এরপর এয়ার সিনাইয়ের টিকিট বুক করতে আগ্রহীদের জন্য কিছু বার্তা ভেসে উঠত ইন্টারনেটে। তাতে ক্লিক করলেই পাওয়া যেত ট্রাভেল এজেন্সির ইমেল ও যোগাযোগ নম্বর। ওই নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাত্রীদের নিজের যাবতীয় তথ্য মেল মারফত পাঠাতে হত। সেই তথ্যগুলি যাচাই করার পরই ইমেলে উড়ানের সময়, তারিখ এবং বিমান ভাড়া জানিয়ে দিত ওই সংস্থা।
আরও পড়ুন- গর্বের স্বাধীনতা, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আইকনিক টাইমস স্কোয়ারেরও উড়বে জাতীয় পাতাকা
তবে এ তো গেল টিকিট কাটার বিষয়। টিকিট কাটার পর সংস্থাকে টাকা দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়তেন যাত্রীরা। সেখানেও গোপনীয়তা বজায় রাখা হত। টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যেত না। শুধুমাত্র নগদেই দিতে হত টাকা। এদিকে টাকা দেওয়ার পরও বিমানের টিকিট নিয়ে নিশ্চিত হতে পারতেন না যাত্রীরা। কারণ কার হাতে টাকা দিয়েছেন সেই ব্যক্তি সঠিক স্থানে টাকা পৌঁছে দেবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় থাকতেন তাঁরা। বিমানে ওটার পর নিশ্চিত হতে পারতেন।
আরও পড়ুন- ইতালির বিজ্ঞানীর প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন, এবার সেই আশ্চর্য সোনার গ্রহাণুতে যাচ্ছে NASA
যাত্রীদের এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে ২০২০ সালে প্রথম এই উড়ানের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়। নাম রাখা হয় ফ্লাইএয়ারসিনাই ডট কম। এই ওয়েবসাইটের মধ্যে কায়রো থেকে তেল আবিব বিমান পরিষেবার যাবতীয় তথ্য দেওয়া রয়েছে। এখান থেকেই টিকিট বুক করতে পারেন যাত্রীরা। ফলে তাঁদের আর ইন্টারনেটে হাঁতড়ে বেড়াতে হয় না। এমনকী, টিকিট বুক করার পর ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকাও দিতে পারেন তাঁরা। তবে এই নয়া ওয়েবসাইট ওই বিমান সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট নয়। একটি থার্ডপার্টি ট্র্যাভেল এজেন্সি যাত্রীদের জন্য এই ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। আর তার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে যাত্রীদের নিয়ে কায়রো থেকে তেল আবিব পর্যন্ত বিমান পরিষেবা দিয়ে চলেছে এই বিমান।