সংক্ষিপ্ত

পুরুষদের বের হওয়ার দিন আছে

মহিলাদের বের হওয়ার দিন আছে

কিন্তু মনিকারা বের হবেন কোনদিন

যেদিনই বের হচ্ছেন, হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে

 

রান্না করতে ভালোবাসেন মনিকা। তাই লকডাউনের সময়টায় বাড়িতে থেকে বিভিন্ন পদ রান্না করে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তার জন্যই পাড়ার দোকান থেকে মুরগির মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। সেদিন শুধু মহিলাদেরই বাড়ি থেকে বেরুনোর দিন। কিন্তু, দীর্ঘদিনের চেনা দোকানদার তাকে জানিয়ে দেয় ওই দিন তাঁকে কিছু বিক্রি করা যাবে না। সরকারি নির্দেশে ওই দিন শুধুই মহিলারা জিনিস কিনতে পারবেন।

আসলে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই লকডাউন জারি করা হলেও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ পানামা-তে লকডাউনের নিয়মকানুন বেশ খানিকটা আলাদা। সেই দেশে লকডাউন হচ্ছে লিঙ্গের ভিত্তিতে। সপ্তাহের সোম, বুধ শুক্র - এই তিনদিন শুধু মহিলারা ঘর থেকে বের হতে পারবেন, বাকি দিনগুলিতে বের হবেন শুধু পুরুষরা। তবে রবিবার সবাইকেই বাড়িতে থাকতে হবে। সেইসঙ্গে কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষ দিনে মাত্র দু'ঘন্টার জন্য বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পাবেন।

পরে ওই দোকানদার নিজেই মনিকার বাড়িতে মুরগির মাংস পৌঁছে দিলেও, আত্মনির্ভর মনিকা কারোর অনুগ্রহ প্রার্থী হতে চান না। তাই এরপর তিনি পুরুষদের জন্য নির্ধারিত দিন বৃহস্পতিবারে বাজার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আরোই খারাপ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে তাঁকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সুপারমার্কেটের সামনে লম্বা লাইন পড়েছিল। মনিকা জানিয়েছেন, ওই এলাকার নির্ধারিত দুই ঘন্টা সময় যখন প্রায় শেষ, সেই সময় সেখানে এসেছিল ছয়জন পুলিশকর্মী।

বেছে বেছে মনিকাকেই তারা লাইন থেকে বের করে আনে 'দুই ঘন্টা'র নিয়ম ভাঙার জন্য। তারপরই দেহতল্লাশি নামে এক পুলিশ কর্মী তার বুকে চাপ দেন বলে অভিযোগ। তারপর হাসতে হাসতে বলেছিল 'তুমি তো মেয়ে নও'। সেই সঙ্গে বাছাই করা কিছু অশ্লীল শব্দ। লাইনে দাঁড়ানো অন্যান্যরা তা শুনেও না শোনার ভান করেছিলেন।

আসলে মনিকা একজন ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর তিনি পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন যৌনকর্মীর জীবন। কারণ পানামায় রূপান্তরকামী যৌনকর্মীদের দারুণ চাহিদা। সেইসঙ্গে, সেই দেশে এই পেশা আইনসিদ্ধও। গত ২৪ বছর ধরে তিনিই সংসার টানছেন। পানামা সিটির বিমানবন্দরের কাছেই মা, দুই বোন ও  তাদের চার ছেলেমেয়ের বিরাট পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তিনিই একমাত্র রোজগেরে। মনিকা জানিয়েছেন, এই পেশা তাঁর পছন্দের নাহলেও এতে নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা আছে।

কিন্তু লকডাউনের সময়ে দারুণ সমস্যায় পড়েছেন তিনি। শুধু তিনি একা নন, তাঁর মতো সেই দেশের অনেক অনেক রূপান্তরকামী। পুরুষদের বের হওয়ার দিন আছে, মহিলাদেরও আছে, কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা কোনদিন বের হবেন, তা কোথাও বলা হয়নি। এমনিতেই পুলিশরা তাদের নিয়মিত হেনস্থা করে। তারমধ্যে এই নিয়মের ফাঁক থাকায় তাদের পোয়াবারো বলে অভিযোগ করেছেন মনিকার মতো রূপান্তরকামীরা। এই অবস্থায় লিঙ্গের ভিত্তিতে লকডাউন তুলে দেওয়ার আবেদন করছেন তাঁরা।