- Home
- World News
- United States
- মহাভারত পাঠ করেছেন এমন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে জানেন? রইল বিখ্যাত মার্কিনিদের নামও
মহাভারত পাঠ করেছেন এমন আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে জানেন? রইল বিখ্যাত মার্কিনিদের নামও
- FB
- TW
- Linkdin
যা নেই মহাভারতে তা নেই ভারতে
মহাভারত কেবল ভারতের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত একটি ভারতীয় মহাকাব্য। হিন্দু ধর্ম মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবতের মতো গ্রন্থগুলিতে বর্ণিত নীতিমালা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে। মোদী, যোগী, পবন কল্যাণের মতো রাজনীতিবিদরাও বহু অনুষ্ঠানে মহাভারতের কথা উল্লেখ করেছেন। আপনি কি মনে করেন শুধুমাত্র ভারতীয়রাই মহাভারতকে অনুসরণ করেন?
বিদেশে মহাভারত
বিদেশেও আমাদের মহাভারত খুবই বিখ্যাত। অনেক বিখ্যাত বিদেশী লেখক, পরিচালক তাদের সিনেমায় মহাভারতের বিষয়বস্তু ব্যবহার করেছেন। চরিত্র তৈরি করে সুপারহিট সিনেমাও তৈরি করেছেন। শুধুমাত্র চলচ্চিত্র জগতের মানুষই নয়, বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সহ আরও অনেকেই মহাভারতের ভাল দিকগুলোকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সেই ব্যক্তিরা কারা? কোন প্রসঙ্গে মহাভারত সম্পর্কে বলেছেন? আরও অনেক কিছু জানতে পড়ুন।
রবার্ট জে. ওপেনহাইমার
পরমাণু বোমার জনক হিসেবে খ্যাত রবার্ট জে. ওপেনহাইমার ছিলেন একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী। ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর আলমোগোর্ডোর কাছে প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার পর তিনি বক্তব্য রাখেন। সেই প্রসঙ্গে হাইমার মহাভারতের ভগবদ্গীতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পংক্তি স্মরণ করেন। তা হলো ‘কালোস্মি লোকক্ষয়কৃৎ’ অর্থাৎ ‘এখন আমি পৃথিবী ধ্বংসকারী মৃত্যুতে পরিণত হয়েছি।’ ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই কথা বলেছিলেন।
ওপেনহাইমার ভারতীয় দর্শন, বিশেষ করে ভগবদ্গীতা সম্পর্কে খুবই উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। তিনি ইংরেজিতে ভগবদ্গীতা পড়েছিলেন এবং জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছিলেন। বলা হয়, পারমাণবিক বোমা তৈরির সময় তিনি ভগবদ্গীতার কর্ম তত্ত্ব, ধর্ম, কর্তব্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বেশি ভাবতেন।
জর্জ হ্যারিসন
জর্জ হ্যারিসন ছিলেন একজন ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী। তিনি ছিলেন ‘দ্য বিটলস’ ব্যান্ডের সদস্য। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্মগ্রন্থের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল। মহাভারত এবং ভগবদ্গীতা হ্যারিসনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
বিখ্যাত আধ্যাত্মিক গুরু রবিশঙ্করের সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে ১৯৬০ সালে হ্যারিসন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ পড়া শুরু করেন।
এক সাক্ষাৎকারে হ্যারিসন ভগবদ্গীতা সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকেরই ভগবদ্গীতা পড়া উচিত, এটি একটি পথপ্রদর্শক। এটি এই বিশ্বে আমাদের ভূমিকা কী তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। তিনি আরও বলেন, জীবনের নানা প্রতিকূলতা, প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে ভগবদ্গীতা তাকে সাহায্য করেছে।
তিনি মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র এবং ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বেশ কিছু গানও লিখেছেন। ‘লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ অ্যালবামে তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তু নিয়ে গান লিখেছেন।
জর্জ লুকাস
স্টার ওয়ার্সের স্রষ্টা জর্জ লুকাস মহাভারত, রামায়ণের মতো মহাকাব্যের চরিত্রগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তাঁর স্টার ওয়ার্স সিরিজের চরিত্র তৈরি করেছিলেন। তিনি তাঁর সিনেমায় আধ্যাত্মিকতা, কর্ম তত্ত্ব, ধর্মযুদ্ধের মতো বিষয় তুলে ধরেছেন।
লুকাস বহুবার বলেছেন যে, ভারতীয় এবং গ্রীক মহাকাব্য তাঁকে অনেক প্রভাবিত করেছে।
সুনীতা উইলিয়ামস
মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস ২০০৭ সালে একবার মহাভারত এবং ভগবদ্গীতা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) থাকাকালীন সুনীতা উইলিয়ামস তাঁর সাথে ভগবদ্গীতা এবং একটি গণেশ মূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ভগবদ্গীতা তাঁকে শান্তি এবং শক্তি যোগায়। এই বইয়ের ধর্মীয় বাণী তাঁকে আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। মহাকাশে থাকাকালীন পৃথিবীকে একটি অণু পরমাণুর চেয়েও ছোট দেখে তিনি তাঁর কর্তব্য এবং লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেন, আর এ ব্যাপারে ভাবতে তাঁকে সাহায্য করে ভগবদ্গীতা। সুনীতা উল্লেখ করেছেন যে, ভগবদ্গীতার কর্ম তত্ত্ব এবং ধর্ম সম্পর্কিত শিক্ষা তাঁকে শক্তি যোগায়।
গণেশ মূর্তি সাথে নিয়ে মহাকাশে যাওয়ার মাধ্যমে সুনীতা তাঁর ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন। গণেশ সাফল্যের প্রতীক। তিনি বাধা দূরকারী বলে বিশ্বাস করা হয়। সুনীতা বহুবার বলেছেন যে, মহাকাশে থাকাকালীন গণেশের প্রতি তাঁর এই বিশ্বাস তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল।
বারাক ওবামা
আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ২০২০ সালে তাঁর আত্মজীবনী ‘আ প্রমিস্ড ল্যান্ড’ বইতে মহাভারতের কথা উল্লেখ করেছেন। এই বইতে তিনি ভারত সম্পর্কে তাঁর মতামত, কেন তিনি ভারতকে পছন্দ করেন এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভারত সফরের সময় তিনি বলেছিলেন যে, তিনি মহাভারত পড়েছেন এবং এর চরিত্রগুলো থেকে তিনি নীতিবোধ এবং নৈতিকতা শিখেছেন। ওবামা রামায়ণও পড়েছেন। তিনি বলেছিলেন যে, এই দুটি মহাকাব্যের চরিত্রগুলো থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সেগুলো কাজে লাগিয়েছেন।