সংক্ষিপ্ত

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট (Ukraine-Russia Crisis) মেটাতে মধ্যস্থতা করতে চাইছে চিন (China)। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) পাশে কতক্ষণ থাকবেন শি জিনপিং (Xi Jinping), তাই নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। 

এবার সরাসরি ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট (Ukraine-Russia Crisis) মেটাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করল বেজিং (Beijing)। সোমবার, চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই (Wang Yi) জানিয়েছেন, প্রয়োজন পড়লে চিন (China), এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে ইচ্ছুক। এই প্রসঙ্গে তিনি টেনে এনেছেন তাইওয়ানের (Taiwan) কথাও। বলেছেন, একইসঙ্গে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা এবং তাইওয়ান বিষয়ে চিনের সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করাটা, দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়। 

চিন-রাশিয়া সম্পর্ককে 'বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক' বলে বর্ণনা করেছেন ওয়াং ই। তিনি বলেছেন, এই দুই দেশের সম্পর্ক 'বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের সহায়ক'। এর আগে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করলেও, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র, মস্কোর (Mosco) নিন্দা করতে অস্বীকার করেছিল বেজিং। সঙ্কট সমাধানের জন্য আলোচনার প্রয়োজন বলেছিল বেজিং। তার আগে, গত মাসেই চিন সরকার বলেছিল, রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের কোনও 'সীমা নেই'। আসলে ২০১২ সালে শি জিনপিং (Xi Jinping) চিনের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কের দারুণ উন্নতি হয়েছে বেজিং-এর। মূল কারণ আমেরিকার সঙ্গে বিরোধ। 

তবে, ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে রাশিয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে, চিন কতটা তাদের পাশে দাঁড়াবে, সেই বিষয়ে সন্দিহান আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। পুতিনকে সমর্থন দিয়ে, মার্কিন এবং ইউরোপীয় বাজার হারানোর ঝুঁকি শি জিনপিং সরকার নেবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। গত বছর রাশিয়ার সঙ্গে চিনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, এর পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে চিনের বানিজ্য রয়েছে মোট ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ রুশ-চিন বাণিজ্যের পরিমাণ দশভাগের একভাগেরও কম। 

২০১৪ সালে ক্রিমিয়া (Crimea) দখলের পর কারণে বাণিজ্য ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল রাশিয়া। তারপর, পুতিনের লাইফলাইন হয়ে উঠেছিল চিন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রুশ গ্যাস আমদানী করা শুরু করেছে চিন। তবে, বেজিং চাইলেও আরও রুশ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করে রাশিয়াকে সাহায্য করা চিনের পক্ষে সম্ভব নয়। এই বিষয়ে তাদের ক্ষমতা সীমিত। 

সাংহাই ইউনিভার্সিটি অফ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ল-এর (Shanghai University of Political Science and Law) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ লি জিন জানিয়েছেন, চিন-রাশিয়া সম্পর্ক এখন সর্বকালের মধ্যে সবথেকে ভাল অবস্থা রয়েছে। তবে, দুই দেশকে পরস্পরের জোটসঙ্গী বলা যাবে না। শি জিনপিং, পুতিনকে সমর্থন দিতেই পারেন, তবে তা নিজের স্বার্থ রক্ষা করে। চিনা সংস্থাগুলি প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে শাস্তির মুখে পড়তে চাইবে না। রাশিকে সমর্থনের ফল যাতে তাদের ভুগতে না হয়, সেইদিকটা মাথায় রেখেই এই বিষয়ে এগোবে বেজিং, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কারণ, রাশিয়ার থেকে পশ্চিমী বাজার অনেক বেশি বড়। মস্কোর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, চিন সেই বাজার হারানোর ঝুঁকি নেবে না।