সংক্ষিপ্ত

হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০২১ সালে ইজরায়েলের আক্রমণের পর জানিয়েছিলেন গাজায় টানেল নেটওয়ার্ক ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

 

এবার আর আকাশপথে নয় সরাসরি হামাসদের জব্দ করতে স্থলযুদ্ধ ইজরায়েলের। তবে এক্ষেত্র ইজরায়েলের বাহিনীর কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হামাসদের তৈরি টানেল। যাকে বিশ্ব জঙ্গি টানেল বলেই চেনে। গাজা মাটির তলা দিয়ে শিরা উপশিরার মত বিস্তৃতি সেই জঙ্গি ট্যানেল। যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের মত এত দিন ইজরায়েলকে তেমন কোনও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়নি। কিন্তু এবার তাদের সামনে রয়েছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। আসল যুদ্ধ এখনই থেকেই শুরু বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ২০২১ সালে ইজরায়েলের আক্রমণের পর জানিয়েছিলেন গাজায় টানেল নেটওয়ার্ক ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। যার মাত্র ৫ শতাংশই ইজরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে। তাহলে দিল্লির থেকেও ছোট্ট শহর গাজায় হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক বিশাল বলেই ধারনা বিশেষজ্ঞদের।

 

 

কোথায় আছে হামাসের টানেল। তার কোনও ব্লু প্রিন্ট নেই ইজরায়েলের হাতে। ইজরায়েল বারবার বলছে গাজার সাধারণ ঘরবাড়ির তলা দিয়ে তৈরি হয়েছে হামাসের টানেল। সেই কারণেই এই যুদ্ধে গাজার সাধারণ মানুষের বাড়িকেই নিশানা করেছে ইজরায়েলের। যার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। ২০০৭ সাল গাজা স্ট্রিপ দখলের পর থেকেই টানেল নেটওয়ার্ক জোরদার করেছে হামাস।

ইজরায়েল বাহিনী হামাসের টানেলগুলিতে গাজা মেট্রো হিসেবে উল্লেখ করেছে। গভীর আর বিস্তৃত সুড়ঙ্গে কিছু ভিডিও আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। অনেকেরই দাবি টানেলে অস্ত্র আর গোলাবারুদ লুকিয়ে রেখেছে হামাস। সেখানেই লুকিয়ে আছে হামাসের কমান্ডাররা। টানেলগুলিই হামাসের প্রাণভ্রমরা বলেও মনে করছে ইজরায়েলি সেনা।

৭ অক্টোবরের হামলায় এই টানেলগুলিকেই কাজে লাগিয়েছিল হামাসরা। স্থল,জল আর আকাশপথে একযোগে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু ইজরায়েল আর গাজার মধ্যে রয়েছে দুর্ভেদ্য প্রাচীর। সেখান দিয়ে চলাচল সনাক্ত করার জন্য রয়েছে সেন্সার। কিন্তু এই টানেল কাজে লাগিয়েই হামাসের অপারেটিভরা ইজরায়েলের ওপর প্রবল হামলা চালিয়েছিল। রাইচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য ডঃ ড্যাফনে রিচমন্ড-বারাক বিবিসিকে বলেছেন, সুড়ঙ্গ পথেই হামাসরা ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল। কাজে লাগিয়েছিল আন্তঃসীমান্ত সুড়ঙ্গ। এগুলি তৈরি হয়েছিল ইজরায়েলে হামলার জন্য। তিনি আরও বলেছেন, এই টানেলগুলি দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছে। সেখানেই হামাসের প্রথম সারির নেতারা লুকিয়ে রয়েছে। তাদের পরিবহন আর যোগাযোগের লাইফলাইন এটি।

হামাস গাজা স্ট্রিপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে, টানেল নেটওয়ার্ক চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করত। ২০০৫ সালে গাজা ইজরায়েল থেকে বিচ্ছিন্ন গয়। ২০০৬ সালের নির্বাচনে জেতে হামাসরা। তারপর থেকেই টানেলগুলি দিয়ে ইজরায়েল আর মিশরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। মিশর টানেলগুলি ধ্বংস করেছিল। কিন্তু ইজরায়েল তা করেনি। ইজরায়েলের দিকে তা প্রসারিত করা হয়েছিল। এই টানেল থেকেই ২০০৬ সালে ইসরায়েলি সৈনিক গিলাদ শালিদকে বন্দী করা হয় এবং তার দুই সহকর্মীকে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত অভিযানে হত্যা করা হয়। হামাস বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে তাকে মুক্তি দেওয়ার আগে দুই বছর ধরে সৈনিককে আটকে রেখেছিল।

অনুমাব করা হচ্ছে ইজরায়েল বাঙ্কার বাস্টার বোমা এবং তার মেরকাভা ট্যাঙ্কের ব্যবহার করবে। কারণ ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে নষ্ট করাই উদ্দেশ্য। তবে হামাসের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে ইজরায়েলের হামলার জন্য তারা তৈরি রয়েছে। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী।