দ্রুত গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা এবং হিমালয় পর্বতের বরফ। এর পিছনে কারণ অবশ‌্য নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)। কিন্তু এর প্রভাব হতে চলেছে সুদূরপ্রসারী।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিন্দুকুশ ও হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা এশিয়ার প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের জল খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। পরিবেশবিদরা হিমবাহ হ্রদ ফেটে যাওয়া (GLOFs), নদী প্রবাহের পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার কারণে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। যা অবকাঠামো ও জীবনযাত্রার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বরফ গলার এই হার গত কয়েক দশক ধরে বেড়েছে, বিশেষ করে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বরফ গলার হার আগের তুলনায় ৬৫% বেশি ছিল, যা মানুষের কর্মকাণ্ডের ফল।

এর মূল কারণ কি ? বিশ্ব উষ্ণায়ন ও অন্যান্য প্রভাব :

• গ্লোবাল ওয়ার্মিং: মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা হিমালয়ের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার ফলে বরফ গলার হার দ্রুত হচ্ছে।

• বায়ু দূষণ: বায়ু দূষণ, বিশেষ করে ধোঁয়া ও কুয়াশা বরফের উপর পড়ে তা শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে।

• ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন: বন উজাড়, অতিরিক্ত চারণ এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, যা বরফ গলার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।

• এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এল নিনো ও লা নিনার মতো প্রাকৃতিক চক্রগুলো আরও তীব্র হচ্ছে, যা বরফ জমাট বাঁধার ক্ষমতা হ্রাস করছে।

*মারাত্মক পরিণতি ও ঝুঁকি*:

• জল সংকট: প্রাথমিকভাবে নদীগুলিতে জলের প্রবাহ বাড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে হিমবাহ শুকিয়ে গেলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু নদীর মতো প্রধান নদীগুলি শুকিয়ে যাবে, যা কৃষি ও পানীয় জলের জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি করবে।

• হিমবাহ হ্রদ ফেটে যাওয়া (GLOFs): হিমবাহ গলার ফলে সৃষ্ট হ্রদগুলির বাঁধ ভেঙে গেলে ভয়াবহ বন্যা (flash floods) হতে পারে, যা গ্রাম, রাস্তা, সেতু ও কৃষিক্ষেত্রের ব্যাপক ক্ষতি করবে।

• খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা: নদীগুলির জলপ্রবাহ কমে যাওয়ায় সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে, যা খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

• বাস্তুচ্যুতি: চরম আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

• সামুদ্রিক স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি: দ্রুত বরফ গলার কারণে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি।

*পরিবেশবিদদের উদ্বেগ*:

• পরিবেশবিদরা এবং বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তনকে "বিপর্যয়কর" বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এর প্রভাব এশিয়ার বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার ওপর পড়বে।

• তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের এই মারাত্মক প্রভাব মোকাবিলা করা যায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলি নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।