সংক্ষিপ্ত
- রাজ্যে বাণিজ্যিক ডাচ ভ্যারাইটির গোলাপ চাষের প্রকল্প শুরু
- লেক মার্কেটের দোকান এখন ছয়লাপ বাঁকুড়ার গোলাপে
- বাঁকুড়ার গোলাপ পাচ্ছেন চেয়ে পাচ্ছেন না ক্রেতারা
- গড়িয়া, পাটুলি, গোলপার্কের বড় ফুলের দোকানেও একই চিত্র
ভ্যালেন্টাইন ডে-র আগে ভেলকি দেখাল বাঁকুড়া। আজ্ঞে হ্যাঁ বাঁকুড়ার গোলাপে এবার ছয়লাপ কলকাতা। আর এই গোলাপের চাহিদা এতটাই যে, দিয়ে পারা যাচ্ছে না। গড়িয়া, পাটুলি, গোলপার্কের বড়বড় ফুলের দোকানগুলিতে বাঁকুড়া গোলাপ শুধুই উপহার হওয়ার অপেক্ষায়। বেঙ্গালুরুকে টেক্কা দিয়ে বাংলার মাটিতে গোলাপ চাষের স্বপ্ন সত্যি হল যাদবপুর ও শিবপুরের দুই মেধাবী পড়ুয়ার।
উল্লেখ্য, সময়টা ২০১৭। একরকম জেদ করেই বাঁকুড়ায় একটা পাথুরে জমি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল অনীক আর অন্তরা। শিবপুরের ইলেকট্রনিক্সের ছাত্র অনীক বহুজাতিক সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। আর গাছ-পাগল অন্তরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপের ছাত্রী। অনীক ও অন্তরা দুজনেরই দাবি, 'এই জমিতে নাকি গোলাপ বাগান বানাবে। জঙ্গল লাগোয়া প্রায় জনমানবহীন ফাঁকা জমিতে ওঁদের গোলাপ বাগান বানানোর ইচ্ছেটাকে পাগলের প্রলাপ বলে ভেবে নিতে খুব অসুবিধে হবার কথা নয়। পরীক্ষার জন্য মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে কোদালের কোপ মারতেই যখন আগুনের ফুলকি বেরিয়ে এল, তখন ভেবেছিলাম নিশ্চিত ভাবেই ওঁরা এর পর হতোদ্যম হয়ে পড়বে। যদিও ওঁরা পাগলামিটাকেই চালিয়ে নিয়ে গেল। যে জমিতে ঘাসেরও ছিটেফোঁটা নেই, সেই জমি কিনে ওঁরা গোলাপ বাগান বানানোর কাজ শুরু করে দিল। কাজ শুরু না বলে অবশ্য যুদ্ধ বলাই ভাল। এক চিলতে ছায়া না থাকা জমিতে বাঁকুড়ার দুর্বিসহ গরম, আদিবাসী মানুষদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, কনকনে ঠান্ডার রাত, পাথর খুঁড়ে মাটির তলা দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন চ্যানেল তৈরি করা, সব কিছুর মধ্যেই চারা বসাতে শুরু করলো ওঁরা। শুরু হল রাজ্যে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে ডাচ ভ্যারাইটির গোলাপ চাষের প্রকল্প। যদিও তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম আমরাও, হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞরাও।'
অপরদিকে, 'চার বছর পর অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছে। করোনার ধাক্কা সামলে এখন বাঁকুড়ার গোলাপ টেক্কা দিচ্ছে দেশের বিখ্যাত বেঙ্গালুরু গোলাপকেও। লেক মার্কেটের দোকান এখন ছয়লাপ বাঁকুড়ার গোলাপে। বাঁকুড়ার গোলাপ পাচ্ছেন চেয়ে পাচ্ছেন না ক্রেতারা। গড়িয়া, পাটুলি, গোলপার্কের বড়বড় ফুলের দোকান গুলিতেও একই চিত্র। বাজারের ফুলের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা, কারণ এই গোলাপের মার্কেটিং-এর দায়িত্ব নিয়েছি আমরাই', জানালেন অরুনাভ। তিনি আরও জানালেন,' পর্যাপ্ত ফুল দিতে না পারায় ক্রেতাদের গালাগালি খেতে হলেও শুরু থেকে ওঁদের এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গী হতে পারায় গর্বিত আমরা। চেষ্টা আর নিষ্ঠা থাকলে যে পাথরেও গোলাপ ফলানো যায়, তা দেখিয়ে দিল ওঁরা।'