সংক্ষিপ্ত

  • অন্য রবিপুজোর ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল।
  • কেউ বলছে সাবাশ, কারও মুখে গেল গেল রব।
     

ধূপ-ধুনো রজনীগন্ধা, তাঁতের শাড়ি পরিহিতা নব্য যুবতী, পাঞ্জাবি পরা উসকোখুশকো চুলের যুবক মঞ্চে উঠতে তৈরি, গ্রিণরুমে অপেক্ষমান একদল কচিকাঁচা, নৃত্যনাট্য শুরু হল বলে। বলাই বাহুল্য এই হল বাঙালির সম্বৎসরের রবিপুজোর ছবি। সেই ছবি একটুও টাল খাক, তা কিছুতেই বরদাস্ত করবে না সুশীল সমাজ। রবীন্দ্রনাথকে 'ঠাকুর' বানাতে পারলে জীবনে রুচিশীলতার তকমা যে ফ্রি।

এবার ছেদ পড়ল সেই ছবিতেই। অন্য রবিপুজোর ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। কেউ বলছে সাবাশ, কারও মুখে গেল গেল রব।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৫ বৈশাখ। প্রতিবছরের মতো এই বারও কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় পানশালা চাংওয়ার সামনে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করা হয় ঘটা করে। রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা দেওয়া হয়। ছবিটি ভাইরাল হতে তার পরে সময় লাগেনি। অনেকেই প্রাণের ঠাকুরকে পানশালায় নামিয়ে আনা  বরদাস্ত করতে পারেননি।

কিন্তু প্রশ্ন হল, একজন অনুরাগী যদি নিজের প্রতিষ্ঠানের সামনে কবির জন্মদিন উদযাপন করতে চায় তাতে অসুবিধেটা কোথায়? কথা বলতে ছুটলাম কবি রাহুল পুরকায়স্থর সঙ্গে। রাহুল পুরকায়স্থর দাবি " এই সব ফেসবুক করিয়েরা বাংলা সংস্কৃতির ধারাবিবরণী জানেন না। বাংলার তাবড় কবি সাহিত্যিকরা এক সময়ে জড়ো হত এই পানশালায়। এই পানশালার মালিক তাঁদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। ওঁর মতো অনুরাগী শহরে কম রয়েছে। আমাদের বন্ধুদের দলে আজও পানশালায় কবিতা আবৃত্তি নিয়ে আ্ড্ডা হয়। তরুণবাবু না থাকলে তা সম্ভবও হত না। "

চললাম পানশালার মালিক তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে। তরুণ বাবু সজ্জন ব্যক্তি, পোশাকেই রুচির ছাপ ধরা পড়ে। সব শুনে তরুণবাবু হেসে বললেন, "প্রতি বছরই তো করি। শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন নজরুলের জন্মদিনো উদযাপন করি। এখানে আগে কবিতাপাঠের আসর হত। যোগেন চৌধুরীরা ছবি আঁকতেন। উৎপলকুমার বসু দিনের পর দিন কবিতা পড়েছেন। আমার পানশালার ভিতরেও বাংলা কবিতার ছোঁয়াচ। কোনও কেবিনের নাম শেষের কবিতা, কোনওটির নাম বনলতা সেন। আর সবচেয় বড় কথা রবীন্দ্রনাথ কি নিজে পানকে অশালীম মনে করতেন?" 

ফের শুরু উত্তর খোঁজা। রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল তাঁর লেখা নয় খণ্ডের রবিজীবনীতে এই বিষয়ে আভাস দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে তাঁর পনেরো বছর বয়সেই বাজারফর্দতে 'রবীবাবুর বিয়ার' কেনার ফিরিস্তি। বিলেতে গিয়ে লিখেছেন, এখানে দ্বারে দ্বারে মদের দোকান, কিন্তু সেই নিয়ে কোনও ছুঁতমার্গ কোনও লেখায় প্রকাশ পায়নি।  সাজাদপুর থেকে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা ১৮৮৪ সালের একটি চিঠিকেও অতিথি আগমন উপলক্ষ্যে মদের আয়োজনের। রবীন্দ্রনাথ মদকে মদই বলতেন, তাই নিয়েও আলগা শ্লীলতার আব্রু তাঁর ছিল না।

তারপরেও এত ছুঁতমার্গ কেন? শেষ করা যাক রবীন্দ্রগবেষক সমীর সেনগুপ্তর উদ্ধৃতি দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ কি মদ্যপান করতেন প্রবন্ধে তিনি লিখছেন, আমরা ভুলে যাই রবীন্দ্রনাথ মহামানব ছিলেন না, দেবতা ছিলেন না, তিনি আমাদেরই মতো মরমানুষ ছিলেন, সকলাবেলা দাঁতও মাজতেন নিশ্চয়ই।