সংক্ষিপ্ত
রাজনীতি ছাড়াও সাহিত্য চর্চায় সমানভাবে আগ্রহী মমতা। অবসর সময়ে বই লেখেন। লেখেন কবিতা, গল্প। এছাড়া তিনি ভালো ছবিও আঁকেন।চটজলদি কবিতা লেখার প্রতিভাও রয়েছে তাঁর। দলের স্লোগান থেকে বক্তৃতা সবই প্রায় তত্ক্ষণাত্ বলেন। আগে থেকে কোনোটিরই প্রস্তুতি থাকে না।
মাইলের পর মাইল তিনি হেঁটে চলেছেন। হাসি মুখে। রাস্তার দু'পাশে বিপুল সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। একটুও ক্লান্তি নেই। অফুরন্ত এই জীবনীশক্তির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)।তাঁর সাধারণ জীবনযাপনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী(Former Prime Minister Atal Bihari Vajpayee)। আজও তিনি পরিধান করেন ধনেখালির সরু পাড়ের সুতির শাড়ি(Dhaniakhali cotton sari)। আর পায়ে থাকে হাওয়াই চটি। মমতা ছাড়া ভারতের আর কোনও রাজনীতিবিদকে এতটা সাদামাটা পোশাকে দেখা যায় না। রাজনীতি ছাড়াও সাহিত্য চর্চায় সমানভাবে আগ্রহী মমতা। অবসর সময়ে বই লেখেন। লেখেন কবিতা, গল্প। এছাড়া তিনি ভালো ছবিও আঁকেন।চটজলদি কবিতা লেখার প্রতিভাও রয়েছে তাঁর। দলের স্লোগান থেকে বক্তৃতা সবই প্রায় তত্ক্ষণাত্ বলেন। আগে থেকে কোনোটিরই প্রস্তুতি থাকে না। প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও হস্তশিল্প পছন্দ হলে চটজলদি কিনে ফেলেন। আর ভালোবাসেন গান শুনতে। বারেবারে রাজনৈতিক কুত্সা, অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। বাম আমলে শারিরীকভাবে হেনস্থাও হতে হয়েছে তাঁকে। সবকিছুকে দূরে সরিয়ে তিন তিন বার তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, মহিলা মুখ্যমন্ত্রী(Female Chief Minister)। আজও তিনি প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধে এক নম্বর রাজনীতিবিদ। তাই এক লড়াইয়ের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের বিশ্লেষণ করলেন অনিরুদ্ধ সরকার
কলকাতার কালীঘাট এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee was born into a low-income family)।ইতিহাসে ব্যাচেলর ডিগ্রি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ আর ইসলামিক হিস্ট্রিতে রয়েছে মাস্টার ডিগ্রি৷যোগেশচন্দ্র কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি নেওয়ার পর মমতার পেশা ছিল স্কুলশিক্ষকতা। এছাড়া তিনি কিছুদিন সেলসেরও কাজ করেন। রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ছাত্রজীবন থেকেই। অল্পদিনের মধ্যেই দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে মমতা রাজনীতিতে অনেকদূর অবধি যাবেন।
আরও পড়ুন- বাংলার পর মমতার নজরে দিল্লি জয়, জন্মদিনের আবহে ফিরে দেখা ‘দিদির’ রাজনৈতিক উত্থান
মমতা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "খুব কষ্টসাধ্য ছিল আমার ছোটোবেলার জীবন। ছোট্টবেলায় বাবা মারা গেছেন। তখন আমরা ৬ ভাই ২ বোন। বড় সংসার। ছোট্ট ভাইটার বয়স তখন ২ বছর। আমার ওপর দাদা, আর তারপর আমি। সংসার চালিয়েছি আমি খুব কষ্ট করে। ভোর তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠতাম। রান্না করতাম। বাড়ির কাজ করতাম। মায়ের কষ্ট হবে। তাই তাঁকে রান্না করতে না দিয়ে নিজে রান্না করতাম। তারপর কলেজে যাওয়া। সেখান থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরি যাওয়া। খাতায় সব লিখে আনতে রাত হয়ে যেত। তাই করেছি দিনের পর দিন। কি করব! বই কেনার টাকা ছিল না। কেউ দেয়ওনি। তাই সেই কষ্টের অতীত মনে রেখে আজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বই তুলে দিই।"
মুখ্যমন্ত্রী(Chief minister) হওয়ার পরেও কালীঘাটের টালির চালের একতলা বাড়িটি ছেড়ে চলে যাননি মমতা ।বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে মমতার বাড়িতে এখনও জল ঢুকে যায়।এক হাঁটু জল টপকে বাড়ি ঢুকতে হয়। মমতা তখন রেলমন্ত্রী। মমতার এই টালির বাড়িতে ঢুকে অবাক হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। সেদিন অটলজীর জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন মমতা। নিজে হাতে রেঁধেছিলেন ভাত, শুক্তো, মাছের মাথা দিয়ে ডাল এসব। রান্নায় হাত লাগিয়েছিলেন মা গায়ত্রীদেবী আর বউদি লতা। বাজপেয়েজীর পৌঁছতে বিকেল হয়ে যায়। বাজপেয়ীজী এসে মা গায়ত্রীদেবীর হাঁটু ছুঁয়ে প্রণাম করে সেদিন বলেছিলেন, "আপনি এমন একজন সন্তানের জননী! খুব গর্বের। এটা ভারতের রেলমন্ত্রীর ঘর!" মমতার বাড়িতে ঢুকে দেওয়ালে টাঙানো মা কালীর ছবিতে প্রণাম করে অটলজী ভক্তিভরে বলেছিলেন ‘জয় মা কালী’। মধ্যাহ্নভোজন আর করতে পারেন নি অটলজী। মমতার জেদাজেদিতে খেয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের চা। আর তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছিলেন মমতার বাড়ির হাতে তৈরি মালপোয়া।মমতার সাধারণ জীবনযাপনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন বাজপেয়ী।
১৯৭৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সেই তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের (West Bengal State Women's Congress) সাধারণ সম্পাদক হন। এই সময়ই তিনি বাংলা প্রদেশ কংগ্রেসের সেই সময়ের তরুণ নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নজরে আসেন। তখন ইন্দিরা গান্ধী তাঁর আদলে রাজ্যে রাজ্যে কিছু মহিলা নেত্রীকে মুখ বানাতে চাইছিলেন। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির কাছেও এই মর্মে নির্দেশ আসে ইন্দিরার। দেশের তৎকালীন মহিলা প্রধানমন্ত্রীর আদলে বাংলা প্রদেশে কংগ্রেসে মহিলানেত্রীর মুখ খুঁজতে প্রিয়রঞ্জন দায়িত্বভার অর্পণ করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপরে। এরপর সুব্রতর হাত ধরেই প্রিয়রঞ্জনের নজরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর রাজনৈতিক কেরিয়ারে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি মমতাকে। ১৯৭৬ সালের কয়েকবছর পর তিনি হন নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। মহিলা কংগ্রেসের নেতা হবার পরই তিনি একজন উদীয়মান রাজনীতিবিদ হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নেক নজরে পড়েন। ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মত প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতাকে হারান মমতা। কলকাতার যাদবপুরের লোকসভা আসনে প্রবীণ দাপুটে কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের সর্বকনিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য হন।
এরপর ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে তিনি এই আসনে হেরে যান। কিন্তু কিছুদিন পরই ১৯৯১এ কলকাতা দক্ষিণ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে লোকসভায় ফেরেন মমতা। এরপরে আরও পাঁচবার লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন ১৯৯১ সালে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পি ভি নরসীমা রাও। আর প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ১৯৯৯ সালে - যখন বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ হয়েছিল তার নিজের প্রতিষ্ঠিত দল তৃণমূল কংগ্রেস।
চলে আসি ১৯৯৩ সালের কথায়। তখন যুব কংগ্রেসের সভাপতি মমতা। তার বছর দুয়েক আগে বিপুল সমর্থন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেছে বাম সরকার। রাজ্যে তখন বিরোধী দলের ভূমিকায় কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ ছিল, কারচুপি করে ভোটে জিতেছে সিপিএম। তাই সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভাপতি মমতা। স্লোগান ওঠে 'নো আইডেন্টিটি, নো ভোট'। এই স্লোগানকে হাতিয়ার করে রাইটার্স অভিযান করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রদেশ যুব কংগ্রেস। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখে জমায়েত শুরু হয়। মহাকরণ ঘিরে পাঁচটি এলাকা দিয়ে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় নামেন মমতা নিজেও। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্র, পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। কিন্তু মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।
শুরু হয় ধুন্ধুমার। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের গুলি ছোঁড়ে। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা। দেখতে দেখতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড আর রোডের মোড় এলাকাজুড়ে। বোমা পড়ে। পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন মারা গেছেন। আর জখম হয়েছেন বহু কর্মী- সমর্থক। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দেন, ‘‘ওরা মহাকরণ দখল করতে আসছিল। পুলিশ গুলি চালিয়েছে।’’ শুরু হয় তদন্ত।
এই ঘটনার পর দেখতে দেখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠেন বাম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ।আর এর ঠিক পাঁচ বছর পর কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে মমতা তৈরি করেন তৃণমূল কংগ্রেস দল। মমতা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৮ সালে। কিছুকালের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস পরিণত হয় বামফ্রন্ট-শাসিত পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে।
বামফ্রন্ট সরকার হঠাৎ করে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হয়। আর সেই মর্মে ২০০৫ সালের পর থেকে কৃষিজমি অধিগ্রহণের কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণঅসন্তোষ তৈরি হয় হুগলি ও পূর্বমেদিনীপুর জুড়ে। বিশেষ করে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার জন্য গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সমর্থন দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। কৃষকদের সঙ্গে আন্দোলনে বসেন মমতা। এদিকে নন্দীগ্রামে আন্দোলনরত জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে ১৪ জন নিহত হলে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার-বিরোধী মনোভাব জোরদার হয়ে ওঠে।
কৃষকদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠেন রাজ্যের অন্যতম 'বিরোধী মুখ'। তারপর এই বিরোধী মুখের রাইটার্স পৌঁছতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তবে তার আগে মমতা একবার রাইটার্স গিয়ে চরম হেনস্থা হন। সেবার গেছিলেন এক মূক-বধির, নির্যাতিতা তরুণীর জন্য সুবিচার চাইতে। সুবিচার দূরে থাক। সেদিন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ চুলের মুঠি ধরে বার করে দিয়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
শুধু একবার নয়, একাধিকবার হেনস্থার শিকার হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন 'সিঙ্গুর কৃষক আন্দোলনে'র সময় স্থানীয় বিডিও অফিসে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি। গভীর রতে হঠাৎ এলাকার আলো নিভিয়ে নেত্রীকে টেনেহিঁচড়ে, মারতে মারতে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে কলকাতার রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন হাজরা মোড় ও ধর্মতলায় দু’বার রাজনৈতিক লুম্পেনদের হাতে নিগৃহীতা হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বামফ্রন্টের চাইতে বেশি আসন পায় তৃণমূল। তারপরই স্লোগান ওঠে ‘বদলা নয়, বদল চাই’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্লোগান প্রভাব ফেলে সারা বাংলায়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সাথে জোট বাঁধে তৃণমূল।আর ইতিহাস তৈরি হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলদল ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতাসীন থাকা বামফ্রন্টকে হারায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। এরপর থেকে তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় আছেন। ২০১৬ এবং ২০২১এর নির্বাচনেও জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। রাজভবনের ময়দানে বিরাট মঞ্চ তৈরি করে বৃহৎ জনসমাগমের সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল। দ্বিতীয়বার মমতার শপথ হয়েছিল রেড রোডে। সেবার দেশের বিজেপি বিরোধী সব নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর ২০২১ এর শপথ হয়েছিল কোভিড নিয়ম মেনে।
২০১১ সালে সরকার ক্ষমতায় এলে ভবানীপুর উপনির্বাচনে জিতে সাংবিধানিক নিয়মরক্ষা করেন মমতা। ২০১৬ সালে অবশ্য সাধারণ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে ভবানীপুর থেকে জিতে দ্বিতীয়বারের জন্য বিধায়ক হয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন। ২০২১ এ নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে পরাজিত হয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা। পরে আবার ভবানীপুর থেকে জেতেন ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে।। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে হারিয়ে ভবানীপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেতার পর তিনি বলেন, "এক দুই তিন, মানুষকে ধন্যবাদ দিন।"
তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ তাঁর নামের পাশে ‘জননেত্রী’, ‘অগ্নিকন্যা’ বিশেষণগুলি বসার একাধিক কারণ রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব প্রিয় একটা রাজনৈতিক স্লোগান হল, "হামসে যো টকরায়েগা, চুরচুর হো জায়েগা।" পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে 'চুরচুর' করার পর জাতীয় স্তরেও বিজেপি-বধ করার জন্য এই মুহূর্তে তিনি বেশ সক্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ দখলে মরিয়া বিজেপিকে যেভাবে মমতা পর্যুদস্ত করে হারিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন আগামী সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনিই হতে পারেন বিরোধী শিবিরের যোগ্য মুখ। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই তিনি রাজনীতির ইনিংস শেষ করবেন, নাকি দিল্লিতেও তাকে একদিন প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবিদার হিসেবে দেখা যাবে সেটাই এখন দেখার।