সংক্ষিপ্ত
- অনেকেরই ধারণা মাদ্রাসায় কেবল মুসলিমরাই পড়ে
- কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য়ে বিভিন্ন জেলায় মাদ্রাসায় বাড়ছে হিন্দুদের সংখ্য়া
- এবার স্কুল ফাইনালে ৭০ হাজার হিন্দু পড়ুয়া বসছে মাদ্রাসায়
- যা এখনও পর্যন্ত সর্বকালীন রেকর্ড বলে দাবি করা হচ্ছে
মাদ্রাসা মানেই যে মুসলিম, এমন ভাবনায় এবার ফাটল ধরতে শুরু করেছে। এ-বছর স্কুল ফাইনালে ৭০হাজার হিন্দু পড়ুয়া পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিতে চলেছে। যা এখনও পর্যন্ত সর্বকালীন রেকর্ড বলে মনে করা হচ্ছে।
দেখা গিয়েছে, এ বছর যারা মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় বসছে, তাদের ১৮ শতাংশই হিন্দু। হাই মাদ্রাসা এডুকেশন যা দশম শ্রেণির সমতুল্য়, তাতে এত বেশি সংখ্য়াক হিন্দু পড়ুয়া আগে কোনওদিন বসেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার্থীর মধ্য়ে হিন্দুদের সংখ্য়া ছিল ১২.৭৭ শতাংশ। স্কুল ফাইনালে এবার তাই রেকর্ড সংখ্য়ক হিন্দু পরীক্ষার্থীদের সংখ্য়া বেড়েছে বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডের সভাপতি আবু তাহের। তাঁর কথায়, "গত কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি ২ থেকে ৩ শতাংশ করে বেড়ে চলেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্য়া। যার মধ্য়ে একটা বড় সংখ্য়ক পড়ুয়া অমুসলিম বা হিন্দু।"
মাদ্রাসা মানেই যে সেখানে শুধু মুসলিম পড়ুয়ারা পড়তে আসে এই ধারণাই শিক্ষিত মধ্য়বিত্ত সমাজে প্রবল। যদিও বাস্তব পরিসংখ্য়ান সে কথা বলছে না। গত কয়েকবছর ধরে রাজ্য়ের বিভিন্ন জেলা থেকে হিন্দু পড়ুয়ারা মাদ্রাসা বোর্ড থেকে কৃতিত্বের সঙ্গেই পাশ করছে। এখন তো একটা বড় সংখ্য়ক অমুসলিম পড়ুয়া মাদ্রাসায় নিজেদের নাম নথিবদ্ধ করাচ্ছে। আবু তাহেরের কথায়, এখন কোথাও কোথাও মাদ্রাসায় হিন্দু পড়ুয়াদের সংখ্য়া মুসলিমদের থেকে বেশি। বিশেষ করে পুরুলিয়া, বীরভূম ও বাঁকুড়া জেলায়।
প্রসঙ্গত, অবিভক্ত বাংলায় মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচলন হয় ১৭৮০ সালে। পরে ১৮৫১ সালে এর সংস্কার হয়। এই মাদ্রাসা আর রাজ্য়ের মধ্য়শিক্ষা পর্ষদের শিক্ষাব্য়বস্থা প্রায় একই। এই মুহূর্তে মাদ্রাসা বোর্ডে দুটো শাখার প্রচলন রয়েছে। এক হল, হাই মাদ্রাসা, যেখানে আরবিক অপশনাল। আর একটি শাখা হল সিনিয়র মাদ্রাসা, যেখানে মূলত ধর্মতত্ত্বের শিক্ষা দেওয়া হয়। অমুসলিম বা হিন্দুরা সাধারণত হাই মাদ্রাসাতেই পড়তে আসে, কারণ এখানে প্রায় অনেকটাই মধ্য়শিক্ষা পর্ষদের পাঠ্য়সূচি অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু মাদ্রাসায় কেন বেড়ে চলেছে হিন্দু পড়ুয়াদের সংখ্য়া?
কোনও কোনও শিক্ষাবিদ মনে করছেন, রাজ্য়ে এখন সেকেন্ডারি বোর্ডে পড়ুয়ার সংখ্য়া বিপুল। আর এই কারণেই এখন গ্রামেগঞ্জে অনেকেই ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসা বোর্ডে ভরতি করাচ্ছেন। রাজ্য়ে এই মুহূর্তে ছশোরও বেশি সরকার পোষিত মাদ্রাসা রয়েছে স্কুলে। মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতির কথায়, গত বছর মুসলিম ও অমুসলিম মিলিয়ে মাদ্রাসায় মেয়েদের সংখ্য়া ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ।