সংক্ষিপ্ত
- শেফিল্ডের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে এসেছেন তিনি অনেক আগে
- পাঁচদশক ধরে রোগীদের একটাকায় দেখে চলেছেন তিনি
- বোলপুরের সুশোভন বন্দ্য়োপাধ্য়ায় এবার পদ্মশ্রী পাচ্ছেন
- সোমনাথ হোরের ডায়েরিতেও রয়েছে সুশোভন ডাক্তারের উল্লেখ
১৯৭৮ সালে ইংল্য়ান্ডের শেফিল্ড থেকে ১৬হাজার পাউন্ডের চাকরি ছেড়ে না-এলে তাঁর আর এক টাকার ডাক্তার হয়ে ওঠা যেত না জীবনে'। তাঁকে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের মানুষ একডাকে চেনেন এই নামেই। পাঁচ দশক ধরে একটাকায় রোগী দেখে চলেছেন তিনি। জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছিয়ে এবার তিনিই পাচ্ছেন পদ্মশ্রী।
সুশোভন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। গত পাঁচদশক ধরে তিনি একটাকায় রোগী দেখে চলেছেন নাগাড়ে, রাঢ বাংলার মাটিতে। যদি তাঁকে প্রশ্ন করেন, এই বাজারে তো একটাকায় কিছুই হয় না, তাহলে? উত্তরে তিনি বিনীতভাবে হেসে বলবেন, "এর বেশি আর চাওয়া যায় না ওই মানুষগুলোর কাছ থেকে।" এই একটাকার রহস্য়টাও তিনি পরিষ্কার করলেন। একদিন তিনি পথ চলতে চলতে দেখতে পেয়েছিলেন, কয়েকজন হতদরিদ্র মানুষ গামছা পেতে বলে মুড়ি খাচ্ছেন। দেখে বড় মায়া হয়েছিল তাঁর। তারপর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। তারপর থেকে ঝকঝকে কেরিয়ার আর চকচকে বেঁচে থাকাকে একপাশে সরিয়ে রেখে তিনি ১ টাকায় রোগী দেখতে শুরু করেন বোলপুরে। বোলপুর তাঁর জন্মভূমি। সম্প্রতি জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে যখন সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা স্তব্ধ ছিল, তখন বোলপুরের হরগৌরীতলায় তাঁর হলুদ রঙের দোতলা বাড়ি ছিল সবার জন্য় অবারিত দ্বার। সত্য়ি তো, ঈশ্বরের দরজা তো সবার জন্য়ই খোলা।
বোলপুরে তিনপ্রজন্ম ধরে রয়েছেন সুশোভন ডাক্তার। শান্তিনিকেতনের এমন কেউ নেই যে তাঁর শরণাপন্ন হননি। এমনকি সোমনাথ হোরের ডায়েরিতেও রয়েছে সুশোভন ডাক্তারের উল্লেখ। একসময়ে কংগ্রেসি রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালে নির্বাচনে জেতেন। বীরভূমে জাতীয় কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক ও সভাপতি হন সুশোভনবাবু। রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিং থেকে শুরু করে প্রতিভা পাটিল, প্রণব মুখোপাধ্য়ায়, রামনাথ কোবিন্দ হয়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও রাজীব গান্ধির প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বভারতীতে কার্যভার সামলেছেন। একসময়ে এই বিশ্বভারতীতেই তিনি ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তাঁর মেয়ে জামাই দুজনেই ডাক্তার। ঝাড়া-হাত-পা জীবনে তবুই নিশ্চিন্তি নেই একটাকার ডাক্তারের। মাটিতে গামছা পেতে মুড়ি খেয়ে চলা মানুষগুলোর জন্য় কিছু করতে না-পারলে তিনি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন না। এখন তাঁর ডায়িলিসিস চলছে। ডায়ালিসিস করে আসার পর শনিবার খোদ প্রণব মুখোপাধ্য়ায়ের কাছ থেকেই তিনি পদ্মশ্রী প্রাপ্তির খবরটা পান। তবে তাতে বিন্দুমাত্র উচ্ছ্বসিত না হয়ে তাঁর নির্বিকার প্রতিক্রিয়া, "এতগুলো বছর ধরে একটাকায় রোগী দেখছি, ওইটুকুই তো করতে পেরেছি, তার বেশি তো কিছু নয়।"