সংক্ষিপ্ত
পুরভোট নিয়ে যে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চরমে তার গত কয়েক মাসে বারবার সামনে এসেছে। একাধিক স্থানে বারবার তৃণমূল কংগ্রেসের এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়েও বিবাদে জড়াল এই গোষ্ঠীগুলি।
১০৮ পুরসভার ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেও কর্মী ও সমর্থকদের বিক্ষোভ এবং অবরোধের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস। যার জেরে কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের তপসিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাতে শেষ পর্যন্ত রদবদল ঘটাতেই হলো। এমনকী, কম-বেশি প্রতিটি জেলাতেই প্রার্থী তালিকায় রদবদল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যদিও তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রার্থী তালিকা রদবদলের কথা প্রথমে সরকারিভাবে স্বীকার করেনি। পরে রাতের দিকে তা স্বীকার করে নেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে প্রথমে যে তালিকা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শেয়ার করা হয়েছিল তার সঙ্গে জেলার প্রার্থী তালিকায় অনেক নামই নেই।
যেমন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল তাতে ১ নম্বর ওয়ার্ডে পাপিয়া হালদারের নাম ছিল। ২ নম্বর ওয়ার্ডে নাম ছিল নমিতা দে-র। ৪ নম্বরে নাম ছিল সুকান্ত মণ্ডলের। কিন্তু রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার প্রার্থী তালিকায় রদবদলের পর দেখা যাচ্ছে ১ নম্বর ওয়ার্ডে পাপিয়া হালদারের স্থানে পিন্টু দেবনাথকে প্রার্থী করা হয়েছে। পাপিয়া হালদারকে দেওয়া হয়েছে ২ নম্বর ওয়ার্ড। নমিতা দে শেষমেশ সংশোধিত প্রার্থী তালিকা থেকেই বাদ পড়েছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সুকান্ত মণ্ডলের জায়গায় বিভাস মুখোপাধ্যায়ের নাম আনা হয়। প্রথম প্রার্থী তালিকায় এই পুরসভায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মুনমুন চক্রবর্তীর নামকে প্রকাশ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, সংশোধিত তালিকায় সেখানে মুনমুনকে সরিয়ে কবিতা ঘোষের নাম রাখা হয়েছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমে প্রার্থী করেছিল অনির্বাণ দাশগুপ্তকে। সংশোধিত তালিকায় অনির্বাণের নাম সরিয়ে রাজীব চন্দ্র-র নাম ঢোকানো হয়েছে। আবার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকায় স্থান পাওয়া টুম্পা দাসকে সরিয়ে সংশোধিত তালিকায় রেশনা মণ্ডলের নাম ঢোকানো হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভার ভোটের প্রার্থী তালিকাতেও সংশোধ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৭টি ওয়ার্ডে নতুন করে প্রার্থী বদল করার খবর মিলেছে। এই ওয়ার্ডগুলি হল ৩, ৪, ৭, ১২, ১৫, ২১ ও ২৪। এই পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছিল মুনমুন কর-কে। সংশোধিত তালিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভাতেও প্রথম প্রার্থী তালিকায় রদবদল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পুরসভায় ২টি ওয়ার্ডে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। এগুলি হল ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। সংশোধিত প্রার্থী তালিকায় শুক্রবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে তৈরি হয় বিতর্ক। কিন্তু জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই নিয়ে কোনও মুখই খোলেনি।
মালদহের ইংরাজ বাজার পুরসভাতেও প্রার্থী তালিকায় রদবদল করতে হয়েছে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বকে। প্রথম তালিকায় নামই ছিল না মালদহের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর। একটা সময় তিনি ইংরাজবাজার পুরসভার দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। সংশোধীত তালিকায় কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে ঢোকানো হয়। এমনকী, দেখা যায় সংশোধীত প্রার্থী তালিকায় কৃষ্ণেন্দু অনুরাগীদের আধিক্য। ১, ৪, ৫, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৬, ১৮, ২০, ২১, ২৯ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডেক তৃণমূল প্রার্থীরা কৃষ্ণেন্দু ঘণিষ্ট বলেই পরিচিত। সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে মালদহের ইংরাজবাজার পুরভোটের ব্যাটন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণের হাতেই ফের একবার সঁপে দিতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বে।