সংক্ষিপ্ত
কেউ কেউ প্রতিদিন চুল ধুয়ে থাকেন.. আবার কেউ কেউ সপ্তাহে দুই-তিনবার চুল ধুয়ে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, চুল ধোয়ার ফলেও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে? কীভাবে?
প্রত্যেকেরই চুল পড়ে। এটা খুবই স্বাভাবিক। প্রত্যেকের চুল দুই থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং তারপর পড়ে যায়। এরপর আবার নতুন চুল গজায়। এটি সকলের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যেকের মাথায় ১,০০,০০০ পর্যন্ত চুল থাকে। দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। তাই এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এর চেয়ে বেশি চুল পড়লে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
চুল অতিরিক্ত পড়ার কারণ কি?
চুল পড়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। টাইট হেয়ার স্টাইলের কারণে চুলের গোড়া আলগা হয়ে চুল পড়ে যেতে পারে। একইভাবে, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপির মতো চিকিৎসার কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে। বার্ধক্য, কিছু ধরণের সংক্রমণ, থাইরয়েড সমস্যার কারণেও চুল পড়ে। এছাড়াও বংশগত কারণে, হরমোনের তারতম্যের কারণেও টাক পড়তে পারে। বিশেষ করে শরীরে পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া, সোরিয়াসিস বা ফোলিকulitis এর মতো ত্বকের সমস্যা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ, হৃদরোগের ওষুধ খাওয়ার কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, চুল ধোয়ার সময় কিছু ভুল করলেও চুল পড়ে যেতে পারে।
কীভাবে চুল ধুলে চুল পড়ে যায়?
অতিরিক্ত ধোয়া: অনেকেই মাথার তেল, ধুলোবালি পরিষ্কার করার জন্য মাথা অনেকক্ষণ ধরে ঘষে ঘষে ধুয়ে থাকেন। কিন্তু এতে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। কারণ, বেশিক্ষণ চুল ধুলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল চলে যায়।
শ্যাম্পু
অনেকেই চুল দ্রুত লম্বা করতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এগুলো চুলে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এগুলো চুল এবং মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। ফলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুল পড়াও বেড়ে যায়।
গরম জল
ঋতু নির্বিশেষে অনেকেই গরম জলে দিয়ে চুল ধুয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া উচিত নয়। এতে চুল নষ্ট হয়ে যায়। চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত গরম পানির পরিবর্তে হালকা গরম জল দিয়ে চুল ধুবেন। এতে কোনও সমস্যা হবে না।
কন্ডিশনার: চুলে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। কন্ডিশনার ব্যবহার না করলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দেয়। তাই শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। এটি চুলের গঠন উন্নত করতেও সাহায্য করে।
শ্যাম্পুর পরিমাণ
মাথা এবং চুলের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই চুলে প্রচুর পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এতে চুল এবং মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। চুল পড়াও শুরু হয়। তাই অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
স্ক্যাল্প ম্যাসাজ: শুষ্ক চুলে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা খুবই উপকারী। তবে ভুল পদ্ধতিতে ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে চুলে ম্যাসাজ করুন।
স্নানের পদ্ধতি: চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নয়তো চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কারণ, শ্যাম্পু ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে চুলে শ্যাম্পুর অবশিষ্টাংশ থেকে যায়। এতে মাথার ত্বকে চুলকানি হতে পারে। চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
টাওয়েল: আমরা অনেকেই স্নানের পর চুল মুছতে টাওয়েল ব্যবহার করে থাকি। এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু রুক্ষ টাওয়েল ব্যবহার করলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চুল মুছতে মাইক্রোফাইবার টাওয়েল অথবা পুরনো টি-শার্ট ব্যবহার করুন।
ভেজা চুলে চিরুনি: অনেকেই স্নানের পর ভেজা চুলে চিরুনি করে থাকেন। কিন্তু ভেজা চুলে চিরুনি করলে চুল ভেঙে যায়। চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দেয়। তাই চুল ভালোভাবে শুকানোর পর চিরুনি করুন।
চুল পড়া রোধ করতে কি করবেন?
বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট: বায়োটিন নামক বি ভিটামিন চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। বাদাম, বীজ, মাছ, মাংস, ব্রকলি, ফুলকপির মতো খাবারে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন থাকে। এগুলো খেলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, জিংকও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
স্ক্যাল্প ম্যাসাজ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ক্যাল্প ম্যাসাজ চুল পড়া রোধ করে এবং চুল লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করে। একটি প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় মাস ধরে প্রতিদিন চার মিনিট মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া কমে যায়।