সংক্ষিপ্ত
ওষুধ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলি।
তার মধ্যে রয়েছে বদহজমের ওষুধ ‘প্যান ডি’, ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট ‘শেলক্যাল’, অ্যান্টি-ডায়াবিটিক ওষুধ ‘গ্লিমেপিরাইড’, হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রক ‘টেলমিসারটান’ এবং আরও বেশি কিছু নামজাদা ওষুধ রয়েছে এই তালিকায়।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনা সামনে আসায় ওষুধগুলি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যানডার্ডস কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ বা (সিডিএসসিও)। অভিযুক্ত ফার্মা সংস্থাগুলি অবশ্য দাবি করেছে, কাঠগড়ায় ওঠা ওষুধের ব্যাচগুলি তাদের তৈরি নয়। বরং, সেগুলি সেগুলি জাল।
প্রসঙ্গত, প্রতি মাসেই এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলির গুণমান পরীক্ষা হয়। সিডিএসসিও আধিকারিকরা প্রত্যেক মাসে হটাৎ করেই কোনও আগাম নির্দেশিকা ছাড়াই বাজারে চলতি ওষুধগুলি পরীক্ষা করে দেখেন। এর আগেও এমন বহু সারপ্রাইজ় টেস্টে হয়েছে এবং তাতে ব্যর্থ হয়েছে একাধিক ওষুধ।
কিন্তু কয়েকদিন আগের একটি রিপোর্টে সিডিএসসিও জানায় যে, তাদের পরীক্ষায় ৫০টিরও বেশি ওষুধ ‘নট অব স্যান্ডার্ড কোয়ালিটি’ (এনএসকিউ) বা যথেষ্ট গুণমানের মাপকাঠি পেরোতেই পারেনি। ফলে, এই সংখ্যাটি তাদের কাছে যথেষ্ট চিন্তা এবং উদ্বেগের। স্বভাবতই, এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ওষুধগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘হেটেরো ড্রাগস’, ‘অ্যালকেম ল্যাবরাটোরিস’, ‘হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিকস লিমিটেড’এবং ‘কর্নাটক অ্যান্টিবায়োটিকস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’-এর মতো তাবড় তাবড় সংস্থার নাম। সিডিএসসিও জানিয়েছে, পাকস্থলীতে সংক্রমণে একটি ওষুধ খুবই ব্যবহার করা হয়, তা হল ‘মেট্রোনাইডেজ়োল’।
এটি তৈরি করে পিএসইউ হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিক লিমিটেড (এইচএএল)। ফেল করা তালিকায় রয়েছে এই ওষুধটির নাম। ফার্মা সংস্থা অ্যালকেম হেল্থ সায়েন্স-এর তৈরি অ্যান্টিবায়োটিক ক্ল্যাভাম ৬২৫ এবং প্যান ডি যে কোনওরকম কাজই করছে না, তা ধরা পড়েছে কলকাতার একটি ল্যাবে।
এছাড়াও গ্লেনমার্ক সংস্থার একটি ওষুধও কোনও কাজ করছে না। ম্যাকলিওডস ফার্মার একটি ওষুধও তালিকায় আছে। অভিযুক্ত সংস্থাগুলির মধ্যে অ্যালকেম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, “আমরা ওষুধের গুণমানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি। যে ওষুধগুলি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি সব জাল। সেগুলি একেবারেই অ্যালকেমের তৈরি নয়। আমাদের সংস্থা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই নিয়ে কথাও বলছে। একই দাবি করেছে সান ফার্মাও। তাদের মুখপাত্রর কথায়, “আমরা তদন্ত করেছি। ওষুধের যে ব্যাচগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলি একটিও সান ফার্মার তৈরি নয়।’’
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই ওষুধগুলি তৈরি করছে কারা? নাকি টার্গেট মিট করতে গিয়ে গুণমানের সঙ্গে আপোষ করছে ফার্মা সংস্থাগুলি। যদিও এই রিপোর্টটি বেরিয়েছে অগাস্ট মাসকে কেন্দ্র করে। কিন্তু চিকিৎসক মহল মনে করছে, এই খবর একেবারেই সুখকর নয়।
কারণ, এই ধরনের ওষুধ খেলে রোগী তো সুস্থ হবেনই না, উল্টে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলবে। ফলে, রোগীর চিকিৎসার খরচের বোঝা আরও বাড়বে। তাছাড়া গুণমান খারাপ হলে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স’বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক তখন আর কাজে আসবে না। আর এমনিতেই অ্যান্টিবায়োটিক বিপর্যয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারত।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।