সংক্ষিপ্ত
- সন্তানকে শাসন করুন, আবার বন্ধুর মতো মিশুন
- এই বয়সে যেন ওর হাতে খুব বেশি টাকা তুলে দেবেন না
- ফেসবুকে ওর বন্ধুদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান
- হেলিকপ্টার পেরেন্টিং না-করেও আপনি ওর গতিবিধি জানতে পারবেন
আজ থেকে মাত্র দু-দশক আগেও কল্পনা করা যেত না যে, স্কুল থেকে ফিরে একজন ছেলে মাঠে না-গিয়ে বাড়িতে ভিডিয়ো গেমস খেলতে বসেছে। সত্য়ি কত তাড়াতাড়ি-ই না সবকিছু পাল্টে গেল। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলো,সঙ্গীসাথী সব কীরমকম বদলে গেল। কম্পিউটার, ট্য়াব, স্মার্টফোন, কতশত উপকরণ এখন হাতে-হাতে। আর সেইসঙ্গে বদলে যাওয়া একলা থাকার মানসিকতা।
এখন কথা হল কী যে, অনেকেই অভিযোগ করেন, কীভাবে ছেলেমেয়েদের সামলাবেন। স্কুলে পড়ার সময়ে গেম খেলা, কলেজে পড়তে-না-পড়তেই ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকা, কী করে যে সব সামলানো যাবে তাই ভেবে অনেকেই চিন্তায় পড়েন। সবচেয়ে বড় কথা হল, কাদের সঙ্গে মিশছে সন্তান, তা নিয়ে স্বভাবতই বড় চিন্তায় পড়েন অনেকে। আজকের দিনে তো নেশার জিনিসের জোগান অঢেল, তাই চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রথমেই বলে রাখি, ছোট থেকে সন্তানের সব আবদার পূরণ করতে যাবেন না। অনেক সময়ে মায়েরা চাকরি করেন বলে অপরাধ বোধে ভোগেন। তাই ছেলেমেয়েরা যা চায় তাই দিয়ে দেওয়া হয় তাদের। ছোট থেকেই এ জিনিস বন্ধ করা উচিত। তবে সব বিষয়ে বকাবকি করাও ঠিক নয়। এখন ডেমোক্র্য়াটিক পেরেন্টিংয়ের যুগ। অর্থাৎ, অতিরিক্ত শাসন নয়, আবার অতিরিক্ত প্রশ্রয়ও নয়। শাসন করতে করতেই সন্তানের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। দেখবেন ও আপনাকে সব কথা বলবে। বড় হয়ে ও যখন ফেসবুকে বুঁদ হয়ে যাবে, তখন ওর বন্ধুদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিন আপনিও। দেখবেন, হেলিকপটার পেরেন্টিং না-করেও আপনি জেনে যাবেন, ও কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে।
আপনার সন্তান নেশা করছে কিনা তা বুঝতে পারা কিন্তু খুব কঠিন নয়। যদি দেখেন লুকিয়ে ও বাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছে, তাহলে হতে পারে নেশাখোরদের কবলে গিয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে সজাগ থাকবেন। প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। যদি দেখেন ও খুব চুপচাপ রয়েছে, কী করছে না-করছে কাউকে কিছু জানাচ্ছে না, তাহলে বন্ধুর মতো ওর সঙ্গে মিশে ওর সমস্য়া বোঝার চেষ্টা করুন।
বাড়িতেও আপনারা এমন আচরণ করুন, যাতে করে ও ইতিবাচক কিছু শেখে। কথায়-কথায় টাকাপয়সা চাইলে ওকে বোঝান, কত কষ্ট করে রোজগার করতে হয় আপনাদের। ওকে বড় করতে গিয়ে আপনারা নিজেদের কত শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন, তা-ও মাঝেমধ্য়ে বলুন। তবে সেখানে যেন অনুযোগের সুর না-থাকে। বরং ওকে বোঝান, আপনারা শুধু চাইছেন ও বড় হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াক। তাহলে কোনও কষ্ট আর গায়ে লাগবে না আপনাদের। আবারও বলছি, ও যদি হঠাৎ খুব চুপচাপ হয়ে যায়, গুমরে থাকতে শুরু করে, তাহলে সজাগ হোন। কোনও কারণে ও বন্ধুদের কাছে আঘাত পেয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মনোবিদের কাছে যান। এই বয়সে আত্মহত্য়ার ঘটনা কিন্তু বেড়েই চলেছে এখন। তাই কোনওরকম সমস্য়া হলে তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। তবে তার মানে এই নয় যে ও যা করতে চাইবে, তাকেই সবসময়ে সমর্থন করে যেতে হবে আপনাদের।