সংক্ষিপ্ত
- কোনও ওষুধ ছাড়াই নিজেকে সুস্থ রাখুন
- প্রাকৃতিক উপায় অবলম্ববন করে সুস্থ থাকুন
- অতিভোজন, অতিনিদ্রা, অতিজাগরণ পরিহার করুন
- প্রাণায়ম ও যোগাসন করুন নিয়ম করে
প্রকৃতিতে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা নানা উপাদানকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে সুস্থ রাখার উপায় হল নেচারোপ্য়াথি। আমাদের শরীর এমনভাবে তৈরি যে শরীরের ভেতর আত্মরক্ষা ও আরোগ্য়, এই দু-ধরনের ব্য়বস্থা আছে। শরীরে জীবাণু প্রবেশ করলেই যে রোগ বাসা বাঁধবে এমনটা নয়। বরং রোগবিস্তারের অনুকূল হয় শরীর, তবেই রোগ বাসা বাঁধে। বলা হয়, শরীরে যদি দূষিত পদার্থ অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে, তাহলে জীবাণু প্রবেশ করলেই কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। মলমূত্র, কফ, বায়ু, অম্বল ইত্য়াদি দূষিত বস্তু জমলে শরীরে রোগজীবাণু বাসা বাঁধে। যদি প্রাকৃতির উপায়ে এই দূষিত পদার্থগুলিকে দূর করে দেওয়া যায়, তবেই শরীর নীরোগ থাকবে।
এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান শত্রু বল কোষ্ঠকাঠিন্য়। খাদ্য়ের যে অংশ বর্জ্য় পদার্থে পরিণত হয়, তা-ই মল হয়ে নির্গত হয়। এই দূষিত পদার্থ যদি শরীরে ক্রমাগত জমতে থাকে, তাহলে হাঁপানি, ডায়াবেটিস, স্নায়বিক অবসাদ, তলপেটের বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। আমরা যদি অন্ত্রে মল জমতে না-দিই তাহলে, তাহলেই অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। প্রতিদিন নিয়মিত পেট পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রাকৃতিক চিকিৎসায় কোনও ওষুধ ব্য়বহার না-করেই হিপ-বাথের সাহায্য়ে কোষ্ঠকাঠিন্য় দূর করা সম্ভব। একটা বড় টাবে জলের ভেতর বসে পা দুটোকে বাইরে রেখে অনবরত তলপেটে ঘর্ষণ করতে হয় এই হিপবাথে। তাহলেই কোষ্ঠকাঠিন্য় দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য় যাতে না-হয়, প্রথমে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। ফাইবারজাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। ধূমপান বন্ধ করা উচিত। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া উচিত। ফল, খেজুর, কিসমিস, আটার রুটি, বেল, শাকসবজি খাওয়া দরকার নিয়ম করে। সেইসঙ্গে পেটের কিছু ব্য়ায়াম করা দরকার।
শরীরকে সুস্থ রাখার আরেকটা ভাল পন্থা হল স্নান। আমাদের পূর্ব পুরুষরা ত্রিসন্ধ্য়া স্নানের কথা বলেছেন। দেহ অত্য়ন্ত গরম হয়ে থাকলে তা রোগ বিস্তারের অনুকূর পরিবেশ তৈরি করে। স্নান করলে শরীর জুড়োয়। কাজেই স্নানের মাধ্য়মেও বহু রোগ আটকানো সম্ভব।
সূর্য রশ্মির সংস্পর্শে আসা সুস্থ থাকার আরেকটি উপায়। সূর্যরশ্মি শরীরে প্রবেশ করে রক্তে ফসফরাস, ক্য়ালশিয়াম, আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সুস্থ থাকতে মাঝেমধ্য়ে উপবাস অত্য়ন্ত জরুরি বলে মনে করে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র। উপবাসের সময়ে, প্রচুর পরিমাণে লেবুর জল ও টকজাতীয় ফলের রস খেলে শরীরের অনেক জীবাণু নষ্ট হয়ে গিয়ে তা মূত্র ও ঘামের মধ্য়ে দিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে শরীরকে বিষমুক্ত করে।
শরীর সুস্থ রাখার আর এক উপায় হল আসন ও প্রাণায়াম। যদি আমরা প্রত্য়েকেই কিছু প্রাণায়াম অভ্য়েস করি, তাহলে অনেক রোগবিসুখ থেকে বাঁচতে পারি। কারণ, শরীরে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেনের জোগান দেয় সঠিক পদ্ধতির প্রাণায়াম।
এছাড়াও নজর রাখতে হবে খাবারের দিকে। শরীরে গ্য়াস-অম্বল হয়ে যাবে, এমন খাবার বর্জন করাই উচিত। মাছ, মাংস, ডিম, ভাত, রুটির পরিমাণ কমিয়ে, দুধ, ফল, শাকসবজি খেতে হবে।
মনে রাখবেন, কোনও কিছুই বেশিবেশি ভাল নয়। চরক বলে গিয়েছেন, অতিনিদ্রা, অতিজাগরণ, অতিস্নান, অতিপান, অতি ভোজন, শরীরকে অসুস্থ করে তোলে। তাই, সুস্থ থাকতে পরিমিত আহার, পরিমিত নিদ্রা ও শরীরকে বর্জ্য়মুক্ত রাখা খুব জরুরি।