রোগের নাম বাইপোলার ডিসঅর্ডার একে বাইপোলার ডিপ্রেশনও বলা হয় কখনও হর্ষ কখনও বিষাদ রোগের লক্ষণ সচেতন না-হলে অনেক মূল্য চোকাতে হয়

মজা করে কেউ কেউ বলেন, একসময়ে আমরা বাইপোলার ওয়ার্ল্ডে বাস করতাম একদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্টসোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর এখন আমরা যখন ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ডে রয়েছি, তখন আমরা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছি দুনিয়াজুড়ে

আপাত রসিকতার আড়ালে সমস্যাটির গভীরতা লুকিয়ে রয়েছে বাইপোলার রোগটি এখন গোটা বিশ্বে যেভাবে তার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে, তাতে করে রীতিমতো কপালে ভাঁজ পড়েছে মনোবিদদেরএটি সে অর্থে একটি মানসিক রোগ

দেখা যাক এই রোগের ধরনধারণ কীরকম

ডিপ্রেশন বিষয়টার সঙ্গে আমাদের পরিচিত এখন বেশ মন্দ নয় এই রোগের লক্ষণ থেকে শুর করে কী ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়, তা পর্যন্ত এখন অনেকে গড়গড় করে বলে দিতে পারেন কথা হল কী যে, সায়কিয়াট্রিতে এই ডিপ্রেশন হল একধরনের মুড ডিঅর্ডার খুব নির্দিষ্ট করে একে বলা হয় ইউনিপোলার ডিপ্রেশনঅর্থাৎ একমুখী অবসাদ আর বাইপোলারকে বলা হয় বাইপোলার ডিপ্রেশন অর্থাৎ দ্বিমুখী অবসাদব্যপারাটা কীরকম জেনে নেওয়া যাকতবে তার আগে বরং বলা যাক, ইউনিপোলার ডিপ্রেশনে কী কী সমস্যা দেখা দেয় একজনেরডিপ্রেশন মানেই মন খারাপ কিচ্ছু ভাল না লাগা আর সেই ভালো না-লাগা চলতে থাকে টানা এক থেকে দুই সপ্তাহ অন্তত সেইসঙ্গে খিদে বা ঘুম আচমকা খুব বেড়ে যাওয়া অথবা আচমকা খুব কমে যাওয়া আগে যা ভাল লাগত, তা এখন আর ভাল লাগে না ডিপ্রেশনে কথায়-কথায় পুরনো দিনের কথা বড় বেশি করে মনে পড়ে চোখ ছলছল করে ওঠা, কান্না পাওয়া অনেক সময়ে যৌন ইচ্ছে একেবারে চলে যাওয়ানিজেকে অপদার্থ মনে করা

এবার আসি বাইপোলার ডিসঅর্ডার প্রসঙ্গেবাইপোলার ডিসঅর্ডারের দুটো পর্যায় থাকেআর সেগুলো পালা করে ঘুরে ঘুরে আসে একটি হল ডিপ্রেশন আর অন্যটি হল ম্যানিজ স্টেজ এই ম্যানিক স্টেজে সব একেবারে উল্টে যায়কারণ ছাড়াই মন অত্যধিক প্রফুল্ল থাকে খাওয়া-দাওয়া খুব বেড়ে যায় মাথার মধ্যে একের-পর-এক প্লট ঘোরে এটা করব, সেটা করবযে মানুষটা এতদিন পড়ে-পড়ে ঘুমোত বা ঘুম না-আসার জন্য কষ্ট পেত, তার এই অবস্থায় ঘুমের কোনও প্রয়োজনই হয় না সারাদিনে চার-পাঁচঘণ্টা ঘুমিয়েই সে দিব্যি চাঙ্গা এই সময়ে সবচেয়ে বড় যে গণ্ডগোলটা ঘটে, তা হল একের-পর-এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াযা অনেক ক্ষেত্রেই শরীর অবধি গড়ায় যার জন্য পরবর্তীকালে অনেক মূল্য চোকাতে হয় আরও একটা ব্যাপার ঘটে এই ম্যানিজ স্টেজে তা হল, নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে টাকাপয়সা খরচ করা, এমনকি দানধ্যান করাআর কিছুদিন পর যখন এই স্টেজ কেটে গিয়ে আবার ডিপ্রেশন ফিরে আসে, তখন সবকিছুর জন্য শুরু হয় চূড়ান্ত অনুশোচনারীতিমতো অর্থনৈতিক কষ্টের মধ্যে পড়তে হয় তখনহুটহাট করে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলো আর টেকাতে ইচ্ছে করে নাএদিকে যাদের সঙ্গে সম্পর্ক তারাও ভাবে, আমাকে ফ্লার্ট করে চলে গেলতাদের তরফ থেকেও একটা রিভেঞ্জ নেওয়ার ব্যাপার শুরু হয় সবমিলিয়ে জীবন অস্তব্যস্ত হয়ে ওঠে

মোটের ওপর এই হল বাইপোলার ডিসঅর্ডারযাকে বাইপোলার ডিপ্রেশনও বলা হয় এই রোগের ক্ষেত্রে সায়কিয়াট্রিস্টরা অ্যান্টি ডিপ্রেশান্ট দেন সেইসঙ্গে অনেক সময়ে মুড স্টেবিলাইজার দেন ঘুম যাতে ভাল হয় তার জন্যও একটা বড়ি দেন সঙ্গে কাউনসেলিং চলতে থাকে রোগী অনেকটা ভাল থাকে তাতে তবে হ্যাঁ, বাইপোলার পেশেন্টকে কিন্তু বুঝতে হয় যে তার বাইপোলার হয়েছে আর সেই বুঝে সতর্ক থাকতে হয় যখনই বোঝা যায়, ম্যানিক স্টেজ আসছে বা আসতে চলেছে, তখনই ডাক্তারের কাছে যেতে হয় নইলে জীবনে আরও অনেক ভুলের মাশুল গোনার জন্য তৈরি হতে হয়