সংক্ষিপ্ত
সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। কোজাগরী পূর্ণিমার দিন ঘরে ঘরে পূজিত হন মা লক্ষ্মী। অশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। তবে শুধু পূর্ণিমা নয় অমাবস্যা তিথিতেও পূজিত হন মা লক্ষ্মী। কালীপুজোর তিথিতে ও পালিত হয় লক্ষ্মী পুজো। জানুন এই বিশেষ পুজোর মাহাত্ম্য।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি যা কিনা দীপান্বিতা অমাবস্যা (Dipanwita Amavasya) বলে পরিচিত সেদিন মা কালী ছাড়া ও মা লক্ষ্মীর (Maa Laxmi) ও আরাধনা করা হয়। কালীপুজোর রাতে প্রতিবার অশুভ নাশ করে শুভ শক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে সবাই। পুরাণ মতে, অলক্ষ্মী হল দেবী লক্ষ্মীর দিদি। এঁদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন, প্রজাপতি ব্রহ্মার মুখের আলো থেকে জন্ম নেন লক্ষ্মী; আর পিঠ থেকে অলক্ষ্মী। তবে সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনিটি হল সমুদ্রমন্থনের। মন্থনের ফলে সমুদ্রের ভেতর থেকে উঠে আসে অনেক কিছু। তার মধ্যে থেকেই অমৃতের পাত্র নিয়ে জন্ম হয় দেবী লক্ষ্মীর। আর তার ঠিক আগেই জন্ম নেন অলক্ষ্মী। সব দিক থেকেই যেন বোন লক্ষ্মীর বিপরীত তিনি। তাঁর মতো শান্ত স্বভাবের নন, সৌভাগ্যের প্রতীকও নন। বরং পুরাণ ও শাস্ত্রে দেবী অলক্ষ্মীকে বর্ণনা করা হয়েছে কুরূপা, ঈর্ষা ও দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। গাধার পিঠে চেপে তিনি হাজির হন ঘরে ঘরে।
আরও পড়ুন- জেনে নিন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় কোন উপায়ে দেবী হবেন সন্তুষ্ট? সংসারে আসবে সমৃদ্ধি?
কালীপুজোর (Kali Puja) দিনেই কেন অলক্ষ্মী দেবীর পুজো করা হয়? কারণ অমঙ্গল ও অশুভের প্রতীক হলেও, অলক্ষ্মীকে ভগবতীর এক রূপ বলে মনে করা হয়। আমাদের সবার মধ্যেই সাদা এবং কালো— দুটি দিকই আছে। কখনও কখনও হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষে ভরে উঠি আমরা। আমাদের ভেতরের ‘লক্ষ্মী’র সঙ্গে ঢুকে যায় অলক্ষ্মীও। কিন্তু তাঁকেও তো দরকার। কালো না থাকলে কি সাদাকে চেনা যায়? সেইজন্যই কালীপুজোর দিন লক্ষ্মী-অলক্ষ্মী দুজনেরই পুজো করা হয়। ঠিক যেমন দুর্গাপূজায় দেবী দুর্গার (Devi Durga) সঙ্গে আসেন মহিষাসুরও। মনে করা হয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর (Kojagori Laxmi Puja) সময় দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে হাজির হন অলক্ষ্মীও। তাই তাঁকে পুজো করেই বিদায় করা হয়। আর এমন কাজ করার জন্য কালীপুজোই হল আসল দিন। যখন অশুভের নাশ করতে শুভ শক্তির উদয় হয়।
আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কী? জানুন বাড়িতে পুরোহিত ছাড়াই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পদ্ধতি
লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja) মতোই আলপনা দেওয়া হয় এইদিন। কালীপুজো বলে চারিদিকে থাকে আলোর রোশনাই। তার মধ্যেই শুরু হয় অলক্ষ্মী পুজো। গোবর দিয়ে তৈরি করা হয় অলক্ষ্মীর মূর্তি; আর পিটুলি দিয়ে লক্ষ্মী-নারায়ণ এবং কুবেরের মূর্তি। পুজো হয়ে গেলে মেয়েরা অলক্ষ্মীর সেই মূর্তিটিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। সঙ্গে শোনা যায় সমবেত ধ্বনি, ‘লক্ষ্মী আয়, অলক্ষ্মী যা’। এইভাবেই ঘরের সব অশুভকে অলক্ষ্মীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে রেখে আসেন তাঁরা। ভেতরে থেকে যান কেবল লক্ষ্মী। সাদা আর কালো নিয়ে বসবাস করলেও, কালো যেন আমাদের গ্রাস না করে, সেই প্রার্থনাই চলতে থাকে এই পুজো জুড়ে।
আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন ভুল করেও করবেন না এই কাজগুলি, তাহলেই ঘনাতে পারে বড় বিপদ
অনেক জায়গাতেই ওইদিন পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী (Devi Laxmi)। ওই দিন সন্ধ্যায় কালীঘাটেও (Kalighat) লক্ষ্মী পুজো (Laxmi Puja)করা হয়। গর্ভগৃহে বিরাজমান দক্ষিণাকালী সেদিন মহালক্ষী রূপে পূজিতা হন। ওইদিন সকালে আর পাঁচটা দিনের মত দেবী দক্ষিণাকালীর সকালের নিত্য পূজা ও দুপুরের ভোগ হয়। সন্ধ্যেবেলা প্রথমে অলক্ষ্মী পুজো করে অলক্ষ্মী বিদায় করা হয়। মন্দিরের সেবায়েতরা পাট কাঠি জ্বালিয়ে মন্দির প্রদক্ষিণ করেন। তারপর ওই আগুন প্রত্যেকে বাড়িতে নিয়ে যান। অলক্ষ্মী বিদায়ের পর গোটা মন্দির ধুয়ে ফেলে লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। লক্ষ্মী পুজো মূলত সন্ধ্যেবেলার পুজো। সেসময় মা কালীকে মহালক্ষ্মী রূপে পূজা করা হয়। মহালক্ষ্মীর পুজোয় খই, নাড়ু, মুড়কী, মিষ্টি, ফল, লুচি, তরকারি দেওয়া হয়। সন্ধ্যের পুজো শেষ হয়ে গেলে রাতে আরও একবার ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই সময় খিচুড়ি, পোলাও, মাছ এবং পরমান্ন ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে।