- Home
- Lifestyle
- Lifestyle Tips
- যুব সমাজের প্রথপ্রদর্শক, ছোট্ট বিলে থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার যাত্রা কতটা কঠিন ছিল
যুব সমাজের প্রথপ্রদর্শক, ছোট্ট বিলে থেকে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার যাত্রা কতটা কঠিন ছিল
- FB
- TW
- Linkdin
স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার দিকে নরেন্দ্রনাথের আগ্রহ ফুটে ওঠে। এই সময় শিব, রাম, সীতা ও মহাবীর হনুমানের মূর্তির সামনে তিনি প্রায়শই ধ্যানে বসতেন। ছেলেবেলায় বিবেকানন্দ অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন। তার পিতামাতার পক্ষে তাকে সামলানো মাঝে মাঝেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠত। তার মা বলতেন, ''শিবের কাছে ছেলে চাইলুম। তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে।''
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে, নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তার পরিবার সাময়িকভাবে রায়পুরে (বর্তমানে ছত্তিসগড় রাজ্যে) স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে দত্ত পরিবার আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। নরেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনিই ছিলেন সেই বছর উক্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র।
নরেন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ও ইউরোপীয় ইতিহাস অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চারুকলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশ্চাত্য দার্শনিকদের রচনাবলি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ ও বাংলা সাহিত্য নিয়েও চর্চা করেন।
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে অথবা ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে দুজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ দক্ষিণেশ্বরে আসেন রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। এই সাক্ষাৎ নরেন্দ্রনাথের জীবনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "তাহাকে একজন সাধারণ লোকের মতো বোধ হইল, কিছু অসাধারণত্ব দেখিলাম না।"
প্রথমদিকে অবশ্য নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে গুরু বলে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি তার চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশও করেছিলেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ব্যক্তিত্বের প্রতি তিনি বিশেষভাবে আকৃষ্টও হয়েছিলেন। এর ফলে ঘন ঘন তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত শুরু করেন।
প্রথমদিকে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ভাবাবস্থা ও দেবদেবীর সাক্ষাত দর্শনকে ‘কাল্পনিক সৃষ্টি’ ও ‘অলীক বস্তুর অস্তিত্বে বিশ্বাস’ মনে করতেন। সেই সময় মা সারদা দেবীর সঙ্গেও সাক্ষাত হয় স্বামীজীর। ব্রাহ্মসমাজের সদস্য নরেন্দ্রনাথ সেই সময় মূর্তিপুজো, বহুদেববাদ ও রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কালীপুজো সমর্থন করতেন না। পরবর্তীকালে তাঁর গুরু রামকৃষ্ণদেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়।
রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
প্রথম বিশ্বধর্ম মহাসভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হয়। এদিন বিবেকানন্দ তার প্রথম সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তিনি ভারত এবং হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। সভার সভাপতি, ড. ব্যারোজ বলেন, "কমলা-সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মসমূহের মাতা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং তাঁর শ্রোতাদের উপর সবচাইতে বিস্ময়কর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
ধর্মসভা শেষ হওয়ার পর বিবেকানন্দ যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন স্থানে অতিথি হিসেবে ভ্রমণ করেন। শিকাগো আর্ট ইনস্টিটিউটে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে ধর্মসভা শেষ হওয়ার পর বিবেকানন্দ পুরো দু-বছর পূর্ব ও কেন্দ্রীয় যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে শিকাগো, ডেট্রয়েট, বোস্টন এবং নিউইয়র্কে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
স্বামীজি ভগ্ন স্বাস্থ্য সত্ত্বেও পুনরায় ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তার সঙ্গী ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা এবং স্বামী তুরিয়ানন্দ। তিনি স্বল্প সময় ইংল্যান্ডে অবস্থান করার পর যুক্তরাষ্টে যান। তার এই ভ্রমণকালে তিনি সানফ্রান্সিসকো ও নিউইয়র্কে বেদান্ত সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি। মায়াবতী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠের অদ্বৈত আশ্রমে স্বল্প সময় অতিবাহিত করেন, যেখানে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বেলুড় মঠে অবস্থান করে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের কাজ এবং ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কাজ দেখাশোনা করে অতিবাহিত করেন।