একজনের হাই উঠলে, বাকিরাও হাই তুলতে থাকে! জানেন এর পিছনে রয়েছে মজার তথ্য
- FB
- TW
- Linkdin
আজ আমার বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করেই যখন আমি হাই তুলি, পরক্ষণেই সেও হাই তুলল। কীভাবে একই সময়ে এমনটা ঘটে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। এর উত্তরও খুঁজলাম।
প্রতিদিন আমরা যেসব স্বাভাবিক কাজ করি তার মধ্যে হাই তোলা অন্যতম। মুখ বড় করে খুলে, শ্বাস টেনে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেওয়াই হল হাই তোলা। হাই তোলা বেশিরভাগ সময় আমরা ক্লান্ত হলে, ঘুম পেলে, অন্য কেউ হাই তুললে হয়ে থাকে।
হাই তোলার সময় শুধু মুখ খোলার পাশাপাশি আমাদের গলা, মুখ সহ আরও অনেক পেশী কাজ করে। আমাদের ক্লান্তি, ঘুমের ভাব ইত্যাদির সাথে হাই তোলার সম্পর্ক রয়েছে বলা হলেও শরীরের আরও অনেক কিছুর সাথে হাই তোলার সম্পর্ক রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। কেন হাই তুলি?
হাই তোলা শুধুমাত্র একটি গভীর শ্বাস নেওয়ার ঘটনা নয়। আমাদের মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, অক্সিজেনের চাহিদা বাড়াতে, সতর্কতা বৃদ্ধি করতে ইত্যাদি কারণে হাই তোলা হয়।
ধারাবাহিক হাই তোলার জন্য মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু অংশ দায়ী। মিরর নিউরন নামক বিশেষ মস্তিষ্ক কোষ অন্যদের ক্রিয়াকলাপ অনুকরণ করতে পারে। এ কারণেই একজন যখন হাই তোলে তখন অন্যজনও হাই তুলতে উৎসাহিত হয়।
মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস থেকে আসা সংকেতই হাই তোলার প্রধান কারণ। হাইপোথ্যালামাস থেকে আসা নির্দেশনা গভীরভাবে শ্বাস নিতে এবং পেশী প্রসারিত করতে উৎসাহিত করে। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে ডোপামিনের মতো মেজাজ নিয়ন্ত্রণকারী রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়।বেশিরভাগ সময় হাই তোলাকে ঘুম আসার লক্ষণ হিসেবেই সকলে বলে থাকেন। কেউ যখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বারবার হাই তোলে তা আমরা সকলেই দেখেছি এ কারণেই ঘুমের সাথে হাই তোলার সম্পর্ক স্থাপিত হয় কিন্তু শুধু তাই নয়, হাই তোলা আরও অনেক কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। এগুলো সবই হাই তোলার সাধারণ কারণ। কেন একজন হাই তুললে অন্যজনও হাই তোলে তার কারণ এখন জেনে নেওয়া যাক।
হাই তোলার মজার বিষয় হল একজন যখন হাই তোলে তখন তার পাশে থাকা অন্যজনও হাই তুলে। কেউ যদি হাই তোলে তা দেখে অথবা হাই তোলার কথা শুনে, এমনকি এ নিয়ে লেখা পড়লেও আমরা হাই তুলতে উৎসাহিত হই। এর পেছনে সহানুভূতি কাজ করতে পারে বলে মনে করা হয়। এটি সামাজিক সম্পর্কের সাথেও জড়িত।শুধু মানুষ নয়, প্রাণীরাও হাই তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ এবং কিছু প্রাণী যাদের সাথে তারা ঘনিষ্ঠ বোধ করে অথবা যাদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল তাদের কাছে থাকলে হাই তোলার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এটি যোগাযোগের একটি মাধ্যমও হতে পারে বলে মনে করা হয়। এই আচরণ তাদের কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করে। বিশ্রামের জন্য সংকেত হিসেবে হাই তোলার সংক্রমণ কেন হয় তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক বোধগম্যতা, মানসিক সংযোগের ভিত্তিতে মস্তিষ্কের কার্যকলাপে হাই তোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাই তোলা সহানুভূতির সাথে সম্পর্কিত। অন্য কেউ যখন হাই তোলে তখন আমরাও হাই তুলি কারণ আমরা তাদের অনুভূতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে চাই। এটি মানসিক বোঝাপড়ার প্রকাশ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। কেউ যখন হাই তোলে তখন আপনি যদি হাই তোলেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্ক সহানুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছে।এর পেছনে মিরর নিউরনের ভূমিকাও থাকতে পারে। এই নিউরনগুলো অন্যদের কাজ দেখেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, পোষা প্রাণীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাই তোলার সংক্রমণ স্বাভাবিকভাবেই ঘটে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যাদের সাথে ঘনিষ্ঠ তাদের চেয়েও বেশি হাই তুলি। এর পেছনে দলগত সংহতি, সামাজিক বন্ধন ইত্যাদি কারণ থাকতে পারে। এটি শারীরিক এবং মানসিক সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
শুধু মানুষ নয়, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও হাই তোলার সংক্রমণ দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের ঘরে পোষা কুকুর, বিড়ালের কথাই ধরা যাক। আমাদের ঘরে পোষা কুকুর এবং বিড়ালও আমাদের হাই তুলতে দেখলে তারাও হাই তোলে।তারা যখন তাদের নিজ প্রজাতির অন্য প্রাণীদের হাই তুলতে দেখে তখনও হাই তোলে। শিম্পাঞ্জি, বনোবোর মতো কিছু বানর প্রজাতির মধ্যেও এই আচরণ দেখা যায়। এই অভ্যাস তাদের দলগত আচরণের সাথে সম্পর্কিত। এটি তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করে।
হাই তোলা কিভাবে কমানো যায়?
সচেতনতা সবচেয়ে সহজ উপায়। অন্য কেউ যখন হাই তোলে তখন আপনি হয়তো সাবধানতার সাথে তা এড়িয়ে যেতে চাইবেন। সে সময় নিজেকে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুমোন। এটি হাই তোলার সংক্রমণ রোধ করতে সাহায্য করবে।