সংক্ষিপ্ত
Parenting Tips: সন্তানকে নিজেদের মনের মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন বাবা-মা। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তাঁরা সন্তানের উপর চাপ তৈরি করে ফেলেন। যা কোনও সময়েই কাম্য নয়।
Parenting Tips: বকাবকি (Scolding), মারধর (Beatings) বা কঠোর শাস্তি না পেলে বাচ্চারা (Children) মানুষ হয় না, এমন ধারণা বদলানো প্রয়োজন। এতে শিশু মনে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাচ্চারা পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে বা নিয়ম-শৃঙ্খলা শিখতে কম বেশি মারধর বা বকুনি সব বাচ্চারাই খায়। তবে এতে হিতে বিপরীতের ইঙ্গিত পেয়েই এখন স্কুলেও মারধর নিষিদ্ধ। তবে বাড়িতে অভিভাবকদের মধ্যে মন মতো না চললে বা একটু বেচাল হলেই বকাবকি, পিটুনির চল এখনও রয়েছে। দুষ্টুমি করলে, কথার অবাধ্য হলে, পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে বা ভুল কিছু করে ফেললে মার অবধারিত। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা মুখোপাধ্যায়ের কথা অনুযায়ী, শিশুদের শৈশব থেকে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথে অভিভাবকদের প্রতি ধাপে নজর রাখতে হবে। শিশুর আশপাশের জগৎ, তার সাথে তার যোগ্য পরিবেশের সাথে মেলামেশা ও বিকাশ, এর পর তাদের পরিণত হয়ে ওঠা। এই সময়ে সন্তানের সঙ্গে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধন তৈরি করতে হবে। এইসমস্ত পর্যায়ের যেকোনোটিতে বকাবকি বা মারধোর করলে, সেটাই হিতে বিপরীত হবে।
শিশুদের মারধর না করাই ভালো
শৈশবের শুরু থেকেই কঠোর মনোভাব সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকদের সম্পর্ক ও ভরসা নড়বড়ে করে দেয়। অভিভাবকত্বে শাসন যেমন থাকবে, তেমনি স্নেহের ছায়াও থাকবে। এক্ষেত্রে কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব সন্তানের ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল, এমনটাই মনে করেন মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ও ।
কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শিশুমনে?
অনেকসময় অভিভাবকরা শিশুকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে গিয়ে অতিরিক্ত কঠোর হয়ে যান। অভিভাবকদের তিক্ত কথায় শিশুর আত্মমর্যাদাবোধ ও অহংবোধে বার বার আঘাত লাগতে থাকলে শিশুর সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে থাকে। আরও খারাপ হয় মারধরে। দৈহিক শাস্তির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশু মনে। এমন অনেক সময়ে দেখা যায় অতিরিক্ত কঠোর মারধরের শিকারে শিশুও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে নিজের প্রতিরক্ষার্থে। এরকম পরিস্থিতিতে শিশু মনে হিংসা ও প্রতিশোধ তৈরী হয়। তারা ভাবে, এভাবেই হয়তো সমস্ত সমস্যার সমাধান। শিশিদের মন শক্ত ও অনুভূতিহীন হতে থাকে। এই ধরনের কঠোর শাস্তিতে শিশুরা বড় হয়ে নানারকম অপরাধমূলক কাজে সাথেও জড়িয়ে পড়তে পারে।
শিশুকে কীভাবে শৃঙ্খলা শেখাবেন?
১. শিশুকে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্যগুলি আগে বোঝাতে হবে। কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো, নিজে বুঝতে পারলে নিজেই খারাপটা থেকে সরে আসবে। তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং রুচিবোধ তৈরি করতে হবে। এর জন্য তার বন্ধু হন এবং তার মনোভাব বুঝুন।
২. কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়, সে স্নেহই হোক বা শাসন। তাই শিশুকে শাসনের আগে বড়দের আগে দেখে নিতে হবে যে, তাঁদের নিজেদের ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কি না। কথায় বকে অভিভাবকরাই বাচ্চাদের আয়না হয়। তাই মা বাবার আচরণ, ব্যক্তিত্ব কিছুটা হলেও বাচ্চাদের মধ্যে ফুটে উঠবে।
৩. বাবা-মা দু’জনেই কর্মরত হলেও শিশুর জন্য বরাদ্দ সময় বের করুন। মা বাবার ভালোবাসা, শিক্ষা ও সময় থেকে শিশুকে বঞ্চিত হতে দেবেন না, এ থেকে শিশুমনে ক্ষোভ জন্মায় যা তাকে অনেক সময় বিশৃঙ্খল করে তোলে। তাই শিশুকে যতটা পারবেন সময় দিন।
৪. রোজকার রুটিনে নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভালো অভ্যাস গঠনকারী কিছু কাজ বাচ্চার জন্য দিয়ে রাখুন। যেমন নিজের ঘর বা নিজের রিবিল গোছানো, পড়ার পরে বই গোছানো, খেয়ে নিজের থালাটুকু অন্তত ধুঁয়ে বা পরিষ্কার করে রাখা, গাছে জল দেওয়া, বোতলে জল ভরা ইত্যাদি — এমন ছোট ছোট কাজ তাদের দিয়ে করানোর চেষ্টা করুন, তাদের ব্যস্ত রাখুন। এতে বাচ্চা নিয়ম শৃঙ্খলা শিখবে। মোবাইল বা টিভি দেখার অভ্যাস কমবে, স্ক্রিন টাইমও কমবে।
৫. আঁকা, নাচ, গান, সাঁতারে অংশ নিতে দিন। এতে মন ও মস্তিস্ক বিকাশের সুযোগ পাবে। নতুন জিনিস শেখার জন্য উৎসাহী থাকবে, প্রোডাক্টিভ থাকবে ফলে নেতিবাচক বা খারাপ চিন্তাধারা তৈরী হবে না। এছাড়াও বাচ্চা নিজের প্রতিভা খুঁজে পাবে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।