সংক্ষিপ্ত
- থর মরভূমির মাঝে আছে এই স্কুল
- নিউ ইয়র্কের এক দম্পতি এই স্কুল তৈরি করেন
- প্রায় ৪০০ জন ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করে
- ৯ হাজার বর্গফুটের বিশাল এই স্কুল সবাইকে অবাক করে
ডিম্বাকার বিশাল বাড়িটার চারিধার কেল্লার মত পরিখা দেওয়া ঘেরা। ঠিক যেন সোনার কেল্লা। আর এই সোনার কেল্লার মত পরিখার মধ্যেই গড়া হয়েছে এক স্কুল। স্কুলের নাম রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। স্কুলটা দেখলেই মনে হবে এ যেন কোনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ডায়না নিজে এই স্কুলের পরিকল্পনা থেকে নকশা, সব নিজে হাতে তৈরি করেছেন। না না, ইংল্যান্ডের প্রিন্সেস ডায়না নন। এই স্কুলের রূপকার ডায়না কেল্লগ আর্কিটেক্টের স্থপতিরা। পাথরের ওপর, পাশে পাথর গেঁথে ৯ হাজার বর্গফুটের বিশাল এই স্কুল বাড়িটি তৈরি করেছেন। নিউ ইয়র্কের এক দম্পতির পরিকল্পনা ও রূপায়নের সৌজন্যে থর মরুর বুকে এই স্কুল এখন গোটা দুনিয়ার নজর কাড়ে।
আরও পড়ুন: আগামী কয়েক সপ্তাহে ভারতে করোনায় মৃত্যুর হার দ্বিগুণ হতে পারে, গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
২০১৪ সালে রাজস্থানে ঘুরতে এসে সেখানকার শিল্প-স্থাপত্যের প্রেমে পড়ে যান ডায়না। বিখ্যাত ব্লগার-আর্কিটেট ডায়না তখনই ঠিক করেন, এখানে এমন কিছু একটা বানাবেন যা এই জায়গাটাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে। পাশাপাশি রাজস্থানের দুর্গম এই গ্রামে মহিলাদের শিক্ষার হারও তলানিতে দেখে তিনি ঠিক করেন একটি গার্লস স্কুল করবেন।
তাই তিনি থর মরভূমির মাঝে স্থাপত্য কীর্তির অদ্ভূত নির্দশন রাখা এই স্কুল তৈরি করবেন বলে ঠিক করেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই স্কুল তৈরি শুরু হয়। এত বড় একটা স্কুল শেষ হতে লাগে বছরখানেক মত। জয়সালমীরে সব কিছুই স্যান্ডস্টোন বা বালির পাথর দিয়ে তৈরি। সেই শহরেই মরুর বুকে আছে এক অবাক করা এই স্কুল।
মরুভমির বালি থেকে ঠিকরে এসে যখন স্কুলের প্রাচীরে ধাক্কা লাগে, তখন যেন মনে হয় এটাই হয়তো সোনার কেল্লা। রাজস্থানের সোনার শহর জয়সালমীরে আছে এমনই এক সোনার কেল্লার স্কুল। বেলেপাথর দিয়েই মরভূমির বুকে এই স্কুল বানিয়েছেন সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থপিতরা। স্কুলের পাখা, আলো সব চলে সৌরবিদ্যুৎ-এর মাধ্যমে। পরিবেশের থেকে নজর রেখেই তৈরি করা হয়েছে এটি।
এই স্কুলের নকশা জয়সালমীরের পুরনো দুর্গগুলির ঢঙেই তৈরি হয়েছে। তবে তার সঙ্গে আছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু মরভূমির ৫০ ডিগ্রি গরমের মাঝে গরমে কি স্কুল সম্ভব? তার আগে সাফ বলে দেওয়া যাক স্কুলে কিন্তু কোনও এয়ার কন্ডিশনার বসানো নেই। তারপরেও খুব আরামেই সবাই ক্লাস করতে পারে। কিন্তু কী করে? বেলেপাথর দিয়ে বানানোর ফলে তাপমাত্রাজনিত কোনও সমস্যা এখানে হয় না। রাতে বালির দেশে কনকনে ঠান্ডা দিয়ে কাবু করা দেয়, সেই ঠান্ডাও স্কুলে এসে জব্দ করে পারে না। ছাত্রীদের যাতে প্রখর রোদে কষ্ট না হয় তার জন্য আছে বিশেষ ধরনের ভেন্টিলেশানের ব্যবস্থা। মরুভূমির ধুলো ঝড় থেকে রক্ষা করতে আছে বিশেষ পাঁচিলের ব্যবস্থাও। দুর্গম এই প্রান্তে জলের কষ্ট পেতে হয় না কাউকে। কারণ স্কুলের ভিতরেই সাড়ে ৩ লক্ষ লিটার জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা। পাশাপাশি বিশেষ উপায়ে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থাও আছে।
প্রায় ৪০০ জন ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করেন। নার্সারি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয় এখানে। তবে করোনা কালে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই স্কুলের ছাত্রীদের পোশাক ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। তাঁর সেলাই করা পোশাক পরেই ছাত্রীরা স্কুলে যায়। এই স্কুলে সবটাই বিনামূল্য পায় গ্রামের মেয়েরা।
আর কী কী আছে এই সোনার কেল্লার স্কুলে! স্কুলের ভিতর আছে মিউজিয়াম। আছে সুবিশাল অডিটোরিয়াম। এখানে স্থানীয় মহিলাদের হাতের কাজ সহ নানা জিনিস প্রদর্শিত হয়।