সংক্ষিপ্ত

শহরের কোলাহল দূরে ঠেলে দেখতে যাবেন নাকি ছোট হাতের দুর্গা? এই বছর শহর পেরিয়ে নিরিবিলিতে কাটিয়ে আসতে পারেন পুজোর ক'টা দিন

পুজোতে ভিড় ভাট্টা অনেকেরই অপছন্দ। এই ক’দিন একান্তে নিরিবিলিতে ঠাকুর দেখার উৎসাহ অনেকেরই আছে। তাই চাইলেই শহর থেকে সামান্য দূরে গিয়ে শান্তিতে পুজো কাটিয়ে আসতে পারেন। জনস্রোত থেকে পালিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার কিছু সেরা ঠিকানা রয়েছে। 

তবে শহরের মধ্যে নয় পুজোয় এই অনাবিল আনন্দ পেতে যেতে হবে জেলাতে। শহর পেরিয়ে রয়েছে এমন কিছু পুজো যা আপনাকে পুর মধ্যেই যেন ভিন দেশে নিয়ে যেতে পারবে। পুজোর গন্ধটা একবারে অন্য ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। 

কলকাতার যানজট, ভিড় ঠেলে যেন পৌঁছে যাবেন এক অন্য আস্তানায়। যেখানে পুজো রয়েছে পুজোর মজাও রয়েছে কিন্তু কোথাও যেন কোলাহল নেই অস্থিরতা নেই। অদ্ভুত এক শান্তি রয়েছে চারিদিকে।  যানজট এড়িয়েও এক অসাধারণ পুজো কাটাতে পারি দিতে পারেন এই কয়েকটা আস্তানায়।

 জনসাঁওতার কোয়ার বাড়ির দুর্গাপুজো-  এই বিশেষ পুজো দেখতে যেতে হবে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে।  এক অদ্ভুত  আকর্ষণ রয়েছে এই বনেদি বাড়ির পুজোয়। জানলে অবাক হবেন যে দুর্গা মায়ের ঘটে ৪০ লিটার জল ধরে এই বাড়ির পুজোয়। আজও পুরনো রীতি মেনেই এই পুজো করা হয়। বাগদি বাড়ার বাসিন্দাদের ছাড়া ঠাকুরের বিসর্জন হয় না এই বাড়িতে। বনেদি বাড়ির দালান জুড়ে চারদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আনন্দের রোশনাইয়ে ঝলমল করে পুরো বাড়ি। তাই একেবারে অন্যরকম আমেজ পেতে একদিন ঘুরেই আসতে পারেন এই বনেদি বাড়িতে।

বড়শুলের জমিদার বাড়ির পুজো- এই পুজোও রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের জমিদার বাড়িতে কিন্তু আর পাঁচটা পুজোর থেকে একেবারেই আলাদা এই পুজো। এই দুর্গা প্রতিমার দশ হাত নেই। মহিষাসুরও নেই। রয়েছেন মহাদেব। দেবী মহাদেবের বাম ঊরুতে আসীন। একেবারেই ভিন্ন ধরনের এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমা। এই বাড়ির কোনও পূর্বপুরুষের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিল হরগৌরীর পুজো করার জন্য। তারপর থেকেই এই বাড়িতে হরগৌরীর আরাধনা করা হয়।

গঙ্গাটিকুরির জমিদার বাড়ির পুজো- গঙ্গাটিকুরি জায়াগাটি পূর্ব বর্ধমানে অবস্থিত। এই বাড়ির দুর্গাকে কন্যারূপে পুজো করা হয়। কথিত আছে এই বাড়ির মা’কে ডাকলে সাড়া পাওয়া যায়। এই জমিদার বাড়ির দালানে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। এই বাড়িতে মা মেয়ে রূপে থাকেন। ইন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ির এই দুর্গাপুজো নিয়ে নানান জনশ্রুতি রয়েছে। বলা হয় এই ঠাকুরের কাছে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়। তাই চারিদিক থেকে মানুষের ভিড় জমে এই পুজোতে।

বসাক বাড়ির পুজো- সিউড়ির বসাক বাড়ির পুজোর আমেজটা একেবারেই অন্যরকম। এই পুজোর আসল বয়স ঠিক জানেন না কেউ। তবে বাড়ির প্রতিষ্ঠা হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই এই বাড়ির পুজোর শুরু হয়। মা মনসার ঘট প্রতিষ্ঠা করেই পুজোর শুরু হয়। নবমী পর্যন্ত নিরামিষ আহারের আয়োজন করা হয় এই বাড়িতে। বৈষ্ণব মতে পুজো করা হয় এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে। পিতলের মা দুর্গাকেই আরাধনা করা হয় এই বাড়িতে। অন্য আর পাঁচটা পুজোর থেকে একেবারেই আলাদা এই বাড়ির পুজো চাইলে এই বছর একবার পা দিয়ে আসতেই পারেন এই বাড়ির দালানে।

দে’ বাড়ির পুজো- ৩২১ বছরের পুরনো এই পুজো শুরু করেছিলেন ইংরেজরা। জমিদার মহানন্দ দে’র আমল থেকে সূচনা হয়েছে এই পুজোর। মহানন্দ দেকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী, অষ্টমীর দিন দেবীর পদচিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। তাই ১৫ থেকে ১৬ কেজি সিঁদুর ছড়িয়ে রাখা হয় মন্দিরে। দেবী মায়ের মন্দিরে মা দুর্গার পায়ের ছাপ দেখতেই ভিড় জমায় হাজার-হাজার মানুষ। বৈষ্ণব মতে পালন করা হয় এই বাড়িরও পুজো পদ্ধতি। সপ্তমীর দিনে থাকে ফলভোগ, অষ্টমীর দিনে মাসকলাই বলি হয় এবং লুচিভোগ নিবেদন করা হয় দশভূজাকে। দে বাড়ির অষ্টম বংশধরের এখন দেখভাল করছেন এই বিশেষ পুজোর। চাইলে এই ছুটিতে শহর থেকে খানিক দূরে গিয়ে দেখে আসা যেতে পারে দে’বাড়ির এই বিশেষ পুজো।

ছোট হাতের দুর্গা- বীরভুমের কীর্ণাহারের সরকার বাড়ির পুজো একেবারেই অন্যরকম। মা দুর্গার আটটি হাত অন্য দুই হাতের থেকে বেশ খানিকটা ছোট। সিংহটিও নরসিংহ। দীর্ঘ ৩৫০ বছরের পুরনো এই বাড়ির পুজো। এই বংশের পূর্বপুরুষ কিশোর কুমার সরকারের হাতেই প্রচলন হয়েছিল এই বিশেষ পুজোর। মা’কে চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হয় এই বাড়িতে। তাই ১০ হাতের মধ্যে আটটি হাত কাল্পনিক বলে মনে করা হয়। এছাড়াও এই পুজোতে রয়েছে আরও এক বিশেষত্ব তাল পাথার পুঁথি দেখে পুজোর প্রচলন রয়েছে এখনও।