সংক্ষিপ্ত
এক সময় লিওর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি কোনও ফুটবল দল। চিকিৎসা চালাতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভোগা ১১ বছরের কিশোরের পরিবারকে।
মেসির বাঁ পায়ের জাদুতে একাধিকবার ফুট ফুটেছে মাঠে। সম্প্রতি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই মেসি ম্যাজিকের সাক্ষী থেকেছে বিশ্ব। প্রথমার্ধে গোল না আসার পর দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৪ মিনিটের মাথায় মেসির মাটি ঘেষা শট জ্বালে গিয়ে জড়ায়। এই গোলের পরই ফের একবার মেসি মেসি চিৎকারে ফেটে পড়ে স্টেডিয়া। 'ভ্যামোস মেসি, ভ্যামোস আর্জেন্টিনা' ধ্বনি ফের একবার শোনা যায় সারা বিশ্বের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের গলায়। এই একটা গোলেই মেসি ছুঁয়ে ফেলে দিয়েগো মারাদোনার গোল সংখ্যাকে। বাঁ পায়ের যুবরাজের এই একটা গোলেই বিশ্বকাপে নীল সাদা স্বপ্ন ফের একবার আঁকা হল। অথচ এক সময় লিওর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি কোনও ফুটবল দল। চিকিৎসা চালাতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভোগা ১১ বছরের কিশোরের পরিবারকে।
মাত্র ১১ বছর বয়সেই গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি ধরা পড়ে মেসির। সেদিনের সেই ছোটোখাটো কিশোরকে দেখে কেউ ভাবতেও পারেনি, একদিন গোটা আর্জেন্টিনাবাসীর জখমের মলম হবেন তিনি। ফুটবলের ইতিহাসে দিয়েগোর, পেলে, জিদানের পাশে নাম তুলবে এই স্বল্প দৈর্ঘ্যর ছেলেটি। মাত্র ১১ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনের অভাব ধরা পড়ে লিও। মূলত এই রোগ হয় জন্মগতই। এর ফলে হাঁড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। বয়স অনুযায়ী উচ্চতা ও ওজন অনেকটাই কম হয়। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা। দাঁত ও হাঁড়ের স্বাভাবিক গঠনে বৈষম্য দেখা যায়। এছাড়া পাকস্থলীতে মেদ জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লিটল উইজার্ডের ক্ষেত্রেও এই হরমোনের ঘাটতি দেখা যায়। ১২ বছব বয়স থেকেই রোজ নিতে হত পায়ে ইঞ্জেকশন। কোনও ক্লাব সেদিন লিও চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। এককরম ফুটবল কেরিয়ারের প্রায় ইতি হতে চলেছিল। ১৩ বছর বয়েসে যোগ বার্সেলোনায় যোগ দেন মেসি। ক্লাবের তরফ থেকেই লিওর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়। তারপর থেকেই নতুন যাত্রা শুরু হয় মেসির। বার্সেলোনার সঙ্গে যাত্রা। চিকিৎসার পাশাপাশি ফুটবলের ক্ষেত্রেও ক্রমশ উন্নতি করতে থাকেন লিও।
মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ৬৪ মিনিটে মাটি ঘেষে দূরন্ত গোল মেসির। ৮৬ মিনিটে অসাধারণ একটি গোল করেন এনজো ফার্নান্ডেজ। এই দুটি গোলই অনেকটা এগিয়ে দেয় দলকে। এই জয় যে দলের আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছে সে বিষয় কোনও সন্দেহ নেই। এদিন সাংবাদিকদে মুখোমুখি হয়ে মেসি বললেন, 'আর্জেন্টিনার আসল বিশ্বকাপ আজ থেকেই শুরু হল। নিজেদের উপর বিশ্বাস ছিল। আমাদের যেটা করা দরকার আমরা সেটাই করেছি। আমাদের কাছে আর কোনও দ্বিতীয় উপায় ছিল না। আমাদের জিততেই হত।' তিনি আরও বলেন,'আমাদের অবশ্যই শুরু থেকে ভালো খেলা উচিত ছিল। প্রথমার্ধে প্রত্যাশা মতো খেলতে পারিনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা মাথা ঠান্ডা রেখে খেলেছিলাম। ফলে গোল এসেছে। আমরা ঠিক যেভাবে খেলি ঠিক সেভাবেই খেলতে পেরেছি।'
২০২২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপের দুটি ম্যাচের পর আর্জেন্টিনার হাতে তিন পয়েন্ট। এই মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানে রয়েছে পোল্যান্ড। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জিতে তিন পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা। মোট দুটি ম্যাচে মেসিদের গোল সংখ্যা ৩। গোল খেয়েছে ২। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন, পোল্যান্ড। দু'টি ম্যাচ খেলে পোল্যান্ডের পয়েন্ট ৪। গোল করেছে ২। চতুর্থ স্থানে রয়েছে মেক্সিকো। দু’ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১ পয়েন্ট। এখন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জিতলেই নক আউটের আশা বাঁচিয়ে রাখতে পারবে আর্জেন্টিনা।