সংক্ষিপ্ত
আইএসএল-এ যোগ দেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। সদস্য-সমর্থকরা দলের ক্রমাগত ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ। কিন্তু কর্মকর্তাদের কোনও হেলদোল নেই।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সর্বময় কর্তা দেবব্রত সরকার এবং চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) অময় ঘোষাল বেশি গুরুত্বপূর্ণ না লক্ষ লক্ষ সমর্থকের আবেগ গুরুত্বপূর্ণ? সাধারণ সদস্য-সমর্থকরা শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের সমর্থকদের আবেগের কথাই বলবেন। প্রাক্তন ফুটবলারদের অনেকেই সে কথা বলবেন। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পরিচালনা করছেন, তাঁদের কাছে সমর্থকদের আবেগের কোনও গুরুত্ব নেই। সেটা বুধবার ফের বুঝিয়ে দেওয়া হল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন সচিব কল্যাণ মজুমদার বলেছিলেন, 'সমর্থকরা ভিখারি।' ক্লাবের টানা ব্যর্থতায় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে যখন সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন, তখন একাধিকবার পুলিশ ডেকে নিজেদের দলের সমর্থকদের মার খাইয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তারা। বুধবার সরকারিভাবে ক্লাবের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, নির্দিষ্টভাবে যাঁদের ব্যর্থতার কথা বলছেন সমর্থকরা, তাঁদের পাশে আছে ক্লাব। ইস্টবেঙ্গলের সাধারণ সদস্য-সমর্থকরা বুঝতে পারছেন, শীর্ষকর্তা ও সিটিও দলকে সাফল্য এনে দেওয়ার জন্য কোনও চেষ্টাই করছেন না। উল্টে তাঁদের কার্যকলাপে দলের আরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু কোনও অদৃশ্য শক্তির চাপে শীর্ষকর্তা ও সিটিও-র কাছ থেকে ব্যর্থতার জবাব তলবের পরিবর্তে তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্ট।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আবেগে আঘাত
ভারতীয় ফুটবলে সফলতম ক্লাবগুলির অন্যতম ইস্টবেঙ্গল। সেই ক্লাব এখনও পর্যন্ত আইএসএল-এ একবারও সুপার সিক্সের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। গত কয়েক বছরে সাফল্য বলতে শুধু কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়। ফলে সমর্থকরা ক্ষুব্ধ। বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চলতি আইএসএল-এর ম্যাচে ব্যানারের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবের ফারাকের কথা তুলে ধরেছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে হারের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শীর্ষকর্তা ও সিটিও-র বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। এরই মধ্যে হঠাৎ ক্লাবের 'এক্স' হ্যান্ডলে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হল, ‘আমরা ক্লাব হিসেবে প্রতিযোগিতার উদ্দীপনাকে স্বীকার করি। কিন্তু আমরা কখনও এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কারও প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণকে সমর্থন করিনি। আমাদের সবারই এক মূল্যবোধ নিয়ে চলতে হবে এবং খেলার পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে। খেলার বিপক্ষে নয়।’ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই বিবৃতিতে কারও নাম করা হয়নি। কোনও ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা মনে করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। 'এক্স' হ্যান্ডলে এই পোস্টের জবাবে শীর্ষকর্তা, সিটিও-র বিরুদ্ধে নতুন করে সুর চড়াচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।
কেন দায় নেবেন না শীর্ষকর্তা?
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে কোচের বিদায় এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে গিয়েছে। হয় কোচকে বরখাস্ত করা হয়, না হলে কোচ নিজে থেকেই সরে যান। চলতি মরসুমেও সেটাই হয়েছে। কিন্তু শীর্ষকর্তা ২০০৬ সাল থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছেন। ক্লাবে তাঁকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। সমর্থকদের প্রশ্নের জবাব দিতে নারাজ শীর্ষকর্তা। সব দায় কোচ-ফুটবলারদের। সিটিও, শীর্ষকর্তার কোনও দায় নেই। এভাবে কতদিন চলবে? ময়দানে কান পাতলে শোনা যায়, সিটিও এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সেই পরিবারের ঘনিষ্ঠ শীর্ষকর্তা। এই কারণেই সিটিও-কে জামাই আদরে রেখে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মদতেই শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সিটিও-শীর্ষকর্তা বহাল তবিয়তে আছেন। দলের ব্যর্থতায় লজ্জায় মুখ ঢাকছেন অনেক কষ্ট করে রোজ ম্যাচ দেখতে যাওয়া সাধারণ সমর্থকরা।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে বিশ্রী হার, আইএসএল-এ সুপার সিক্সের স্বপ্ন শেষ ইস্টবেঙ্গলের
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েও লাভ হল না, এআইএফএফ-এর সিদ্ধান্তে অস্বস্তিতে ইস্টবেঙ্গল
ফের রেফারিং-বিতর্ক, ১০ জনের ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের