সংক্ষিপ্ত
উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখালেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা। সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স নদিয়ার রেজওয়ানা মল্লিক হিনার।
বাবার মোবাইল ফোনে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলেছিল মেয়েটা। প্রিয় অ্যাথলিটদের ফলো করছিল। সবার পোস্টই লাইক করত। এভাবেই একদিন সে চোখে পড়ে যায় জাতীয় স্তরে নামী অ্যাথলেটিক্স কোচ অজয় অর্জুনের। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নদিয়ার সোনাডাঙা গ্রামের রেজওয়ানা মল্লিক হিনাকে। প্রিয় অ্যাথলিট প্রিয়া মোহনের কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় রেজওয়ানা। গ্রামের মেয়েটার পরিশ্রম করতে কোনওদিনই আপত্তি ছিল না। ছোটবেলা থেকেই অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নপূরণের সুযোগ এসে যাওয়ায় আর অন্য কোনওদিকে তাকায়নি রেজওয়ানা। নিজেকে বড় প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করে সে। সাফল্য এল এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে। এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয়দের মধ্যে সেরা সাফল্য বাংলার এই তরুণীরই। ৪০০ মিটার দৌড়ে মিট রেকর্ড গড়ে সোনা জেতা ছাড়াও মেডলি রিলে টিমের হয়ে সোনা এবং ২০০ মিটার দৌড়ে রুপো জিতেছে রেজোয়ানা। তার এই সাফল্যে সারা দেশের ক্রীড়ামহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে।
৫ বছর বয়স থেকে অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে রেজওয়ানা। তার বাবা রেজাউল মল্লিকের উৎসাহ ছিল। ছোটবেলায় রেজওয়ানার প্রশিক্ষক ছিলেন অনিরুদ্ধ পালচৌধুরী। তাঁর প্রশিক্ষণে জাতীয় ও রাজ্য স্তরে সাফল্য পায় রেজওয়ানা। সে মুম্বইয়ে ন্যাশনাল ট্যালেন্ট সার্চেও যোগ দেয়। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় সাফল্য পায়নি। তবে তাতে দমে যায়নি বাংলার মেয়েটা। সে আবার লড়াই শুরু করে। রেজওয়ানা জানিয়েছে, ‘আমি ছুটতে ভালোবাসি। কারণ, ছুটতে মজা লাগে। আমার পরিবারের সবাই অ্যাথলেটিক্সে উৎসাহ দেয়। আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগত না। খেলতেই ভালো লাগত। মুম্বইয়ের প্রতিযোগিতায় সবার শেষে ছিলাম আমি। তাতে খারাপ লেগেছিল। কিন্তু তারপরেও আমি ছুটতে চাইতাম।’
২০২১ সালের নভেম্বরে ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে অর্জুনের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রেজওয়ানার। তার পরিবার বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় আপত্তি জানায়নি। বাবার উৎসাহেই অর্জুনের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে রেজওয়ানা। কেরালার তিরুঅনন্তপুরমে ন্যাশনাল ওপেন ৪০০ মিটার চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এবার এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দেশকে সম্মান এনে দিল নদিয়ার মেয়েটা।
রেজওয়ানার প্রিয় অ্যাথলিট প্রিয়া মোহন। তাঁর সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয় রেজওয়ানা। প্রিয়া মোহনের কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি রেজওয়ানা। অর্জুনও বাংলার এই তরুণীকে ছাত্রী হিসেবে পেয়ে খুশি। তাঁর আশা, আরও সাফল্য পাবে রেজওয়ানা।
আরও পড়ুন-
এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ২৪টি পদক, দুর্দান্ত সাফল্য ভারতের
চুনী গোস্বামীর নামাঙ্কিত গেট উদ্বোধন, সুনীল গাভাসকরের মুখে জয় মোহনবাগান