AI: কথায় আছে বিনাশকালে মানুষের বুদ্ধিনাশ হয়। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ জায়গায় চলে যাচ্ছে।
AI: গবেষণায় উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আধুনিক প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারও যে বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার প্রমাণ মিলছে। যেমনটা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই দ্বারা (artificial intelligence side effects)।
কার্যত, দুনিয়া জুড়ে যেন হইচই পড়ে গেছে। আসলে অত্যাধুনিক মানুষের মতো করে ভাবতে পারা প্রযুক্তি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) তথা কৃত্রিম মেধা ক্রমশই যেন মানুষের মস্তিষ্ককে আরও অলস করে তুলছে!
গবেষণা থেকে ঠিক কী জানা যাচ্ছে?
সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এই সংক্রান্ত একটি গবেষণার কাজ সবে শেষ করেছে। কিন্তু সেই গবেষণার ফল দেখে বেজায় চিন্তায় পড়ে গেছেন গবেষকেরা। তাদের কথায়, গবেষণার সেই ফলাফলকে অবিলম্বে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হোক। যাতে আগামীদিনে এআই প্রযুক্তি সভ্যতার আরও গভীরে প্রবেশ করে অতিরিক্ত ক্ষতি করতে না পারে। কারণ, একাধিক্ষেত্রে আজকাল মানুষ এই টেকনোলজির সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার হয়ত একটা সময়, মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাভাবনাতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

গবেষণাটি কোথায় প্রকাশিত হয়েছে?
সম্প্রতি এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে 'মিডিয়া এমআইটি' নামক একটি জার্নালে। এই গবেষণাপত্রটির অন্যতম প্রধান লেখক হলেন নাতালিয়া কোসমিনা। তিনি লিখেছেন, “একদিক দিয়ে দেখতে গেলে এআই সাধারণ মানুষের বুদ্ধি এবং মেধার ক্ষতি তো করছেই। তবে এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে ছোটদের, যাদের বুদ্ধি এবং মেধা সবে তৈরি হতে শুরু করেছে। কিন্তু এআই তাদের মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ বিকাশ হতেই দেবে না। তাই ছোটদের পড়াশোনার জগতে এআই সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করার আগেই সেটিকে দূর করে দেওয়া দরকার।”
১৮-৩৯ বছর বয়সী ৫৪ জনকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল আমেরিকার এই প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়
অংশগ্রহণকারীদেরকে ১৮ জন করে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল। একটি দলকে এআই-এর সাহায্য নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় এবং অন্য একটি দলকে বলা হয়, তারা আবার গুগল সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিতে পারে। কিন্তু তৃতীয় দলটিকে কোনও কিছুর সাহায্য নিতে দেওয়া হয়নি। সেই সমীক্ষা চালানোর সময়, ঐ ৫৪ জনের মস্তিষ্কের ৩২টি ক্ষেত্রের কার্যকলাপের উপর ইইজি-র মাধ্যমে টানা নজর রাখেন গবেষকরা।
সেখানে দেখা যায়, যারা এআই-এর সাহায্য নিয়েছিলেন, তাদের লেখা মোটের উপর ঠিকঠাক হলেও, তাদের মস্তিষ্ক কিন্তু বেশ কম কাজ করেছে। এরপরেই গবেষকরা জানান, মস্তিষ্কের যে অংশগুলি যুক্তিপূর্ণ চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম এবং স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে, এআই ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সেই অংশে বিশেষ কোনও পরিবর্তনই লক্ষ্য করা যায়নি। উল্লেখ্য, এই সমীক্ষাটি বেশ কিছুদিন ধরে চালানো হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, এআই ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে যত দিন গেছে, ততই যেন মস্তিষ্কের ঐ অংশগুলি কার্যত, কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা সময়, নিজেরা ঠিক কী লিখছেন, তা নাকি নিজেরাই মনে করতে পারছিলেন না তারা। গবেষণার শেষ দিকে তারা রচনাগুলি শুধু কপি করে পেস্ট করছিলেন।
অন্যদিকে, এআই বা গুগল সার্চ ইঞ্জিনের কোনও রকম সাহায্য না নেওয়া অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে আবার পুরো উল্টো ছবি দেখা গেছে
গবেষণার প্রতিটি পর্যায়ে, বৃদ্ধি পেয়েছে ভাবনাচিন্তার গভীরতা। সেইসঙ্গে, তাদের মেধা এবং বুদ্ধির প্রয়োগ অনেকটা বেড়েছে। তবে অংশগ্রহণকারীদের দ্বিতীয় দলের সদস্যরা, যারা গুগল সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিয়েছিলেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা কিন্তু ছিল মাঝারি মানের। তাদের লেখা রচনার ধাঁচ আবার কিছুটা এআই ব্যবহারকারীদের মতো হলেও, তাদের স্মৃতিশক্তি এবং ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা তাদের থেকে অনেকটা বেশি ছিল।
এই মুহূর্তে, চ্যাটজিপিটি এবং জেমিনাই সহ একাধিক এআই প্রযুক্তি মানুষের নিত্তনৈমিত্তিক জীবনে একান্ত প্রয়োজনের মতোই ঢুকে পড়েছে। আর ঠিক এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই, এই গবেষণার ফলাফল নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ তো বটেই।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

